রাস্তার নামফলকের বানানে এমন ভুলই শোধরাতে চায় পুরসভা। ফাইল চিত্র
প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় ভারতের বিকৃত ম্যাপ নিজেদের ফেসবুক পেজে দেওয়ার জন্য বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। তবে গোটা বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি।
কারণ, পুরসভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে, শুভেচ্ছা বার্তায়, বিশেষ করে রাস্তার নামের ফলকে বিস্তর বানান ও শব্দের ভুল থাকে। যেমন, গত ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীতে পুরসভার ফেসবুক পেজে দেওয়া শুভেচ্ছা বার্তায় প্রথমে লেখা হয়েছিল, —‘জন্মবার্ষিকীতে ভারতের জাতীয় নায়কে আমাদের নমস্কার...’। ‘নায়ককে’ শব্দের পরিবর্তে সেখানে ‘নায়কে’ লেখা হয়েছিল। সেটি নজরে আসায় তা সংশোধন করে ‘নায়ককে’ লেখা হয়েছিল ঠিকই, তা-ও শেষ মুহূর্তে। তারও আগে গত বছরের ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে ওই ফেসবুক পেজেই ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার বার্তায় লেখা হয়েছিল, ‘হাসপাতাল, নির্ণীয়মান এলাকা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পরিষ্কারের দায়িত্বে ৩২ র্যাপিড অ্যাকশন টীম’। যেখানে ‘নির্মীয়মাণে’র জায়গায় ‘নির্ণীয়মান’ এবং ‘টিম’ বানানের পরিবর্তে ‘টীম’ লেখা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন এ সব নিয়ে কোনও বিতর্ক না-হওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলিকে আমল দেননি। তবে ম্যাপ-বিতর্কের পরে আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তাঁরা।
তাই বানান ভুল দূর করার জন্য বিশেষ ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ তৈরি করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। ওই কমিটি পুরসভার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র থেকে রাস্তার নামফলকের বানান সবই দেখবে। বানান ভুল থাকলে তা সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জমা দেবে।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে বলেন, ‘‘এত দিন সমস্ত দফতরই বরাত দেওয়া সংস্থাকে দিয়ে এ ধরনের কাজ করিয়ে এসেছে। কিন্তু এমনটা চলতে পারে না। কারণ, পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি পুরসভার ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত। তাই ওই স্ক্রিনিং কমিটির ভাবনা।’’
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এত দিন এ নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তাই ছিল না। উল্টে বরাত দেওয়া সংস্থার তৈরি করে দেওয়া আমন্ত্রণপত্র বা রাস্তার নামফলককেই অভ্রান্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। ভুলের অভিযোগ উঠলে সেগুলি আমলই পায়নি। সেখানে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ যে এমনটা ভেবেছেন, সেটা দীর্ঘদিন ধরে চলা ভুল পদ্ধতি সংশোধনের একটি ধাপ।
তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এই ‘স্ক্রিনিং কমিটি’র পরিকল্পনা অন্য দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও কেন্দ্র-রাজ্যের একটা ‘ঠান্ডা লড়াই’ শুরু হয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু’দিনের কলকাতা সফরে। কলকাতার সংস্কৃতির কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে কলকাতা বন্দরের নামকরণ, সবেতে সেই ছায়া পড়েছে বলে মনে করছেন পুরকর্তাদের অনেকেই। বিশেষ করে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলে থাকেন, কলকাতা হল দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী, সেখানে পুরসভার তরফে এ সব ক্ষেত্রে কোনও খামতি থাক, তা চাইছেন না কেউই।
ফিরহাদের কথায়, ‘‘আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। কিন্তু আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেউই এটা নিয়ে ভাবেননি। রাস্তার নামফলকে যদি ভুল বানান লেখা থাকে এবং সেটা যদি কোনও বাচ্চার চোখে পড়ে, তা হলে তো সে সেটাই দেখবে, শিখবেও। এমন কখনওই কাম্য নয়।’’
এর আগে নামফলকের ক্ষেত্রে বাংলাকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ বার সেখান থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে শুদ্ধ বানানের দিকে নজর দিচ্ছেন তাঁরা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘একেবারে না-হওয়ার থেকে দেরিতে হওয়াও ভাল। সেটাই না হয় হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy