তারস্বরে: পুরভোটের আগে প্রচার করতে রাজডাঙা এলাকায় লাগানো হয়েছে মাইক। নিজস্ব চিত্র।
উন্নয়নের গগনভেদী প্রচারে কান পাতা দায়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইক লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রচারের জোর দেখে বোঝার উপায় নেই যে, শব্দবিধির আদৌ কোনও অস্তিত্ব রয়েছে। এমনই অভিযোগ নাগরিকদের একাংশের।
তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ সংক্রান্ত জনমানসের ধারণা সীমাবদ্ধ রয়েছে শুধুমাত্র কালীপুজো, দীপাবলিতে শব্দবাজি ফাটল কি না, তাতেই। তাই নির্বাচনী প্রচারে শব্দবিধি ভাঙার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েক জায়গায় প্রতিবাদ করা হলেও সার্বিক জনমত এখনও গড়ে ওঠেনি। শব্দদূষণের বিরোধিতা নিয়ে দীর্ঘ বছর কাজ করে চলা পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-র সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘উন্নয়নের প্রচারে কানের পর্দা টিকে থাকলে হয়! আসলে সমস্যা হল, যাঁদের নিয়ম মানার কথা, তাঁরাই যদি ভাঙেন, তা হলে হবে কী ভাবে?’’ এক পরিবেশবিদের কথায়, “যাঁরা আইন তৈরি করেন, তাঁরাই যখন আইন ভাঙেন তখন সাধারণ মানুষের একাংশও মনে করেন, আমরাই বা মানব কেন? ফলে উন্নয়ন কত দূর পৌঁছেছে জানি না, তবে তা যে নির্ধারিত ডেসিবেল ছাপিয়ে গিয়েছে, সেটা নিশ্চিত।”
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, মানুষ বুঝে গিয়েছেন যে রাজনৈতিক প্রচারের সময়ে শব্দবিধি মানা হবে না। তাই অসুবিধা হলেও তাঁরা চুপ করে থাকেন। এক ইএনটি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কে আর প্রতিবাদ করে রাজনৈতিক দলগুলির রোষে পড়তে চায়? তাই কানের উপর দিয়ে যাচ্ছে যাক, বেশি কিছু বললে তো হিতে বিপরীত হতে পারে। এই আশঙ্কায় চুপ থাকেন অধিকাংশ মানুষ।’’ ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা জানাচ্ছেন, শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে এবং নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব তো রাজনীতিকদেরই। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদেরই বেশি করে মৌখিক ও লিখিত ভাবে প্রচার করা দরকার। শান্তনুবাবুর কথায়, ‘‘উৎসবের মরসুমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হওয়া গেলে ভোটের প্রচারেও সেটা করা সম্ভব বলে
বিশ্বাস করি।’’
কিন্তু নাগরিকদের এমন ‘বিশ্বাস’ ক’টি ক্ষেত্রেই বা রক্ষা হয়েছে? তাই কালীপুজো, দীপাবলিতে তো বটেই, এমনকি অন্য সময়েও যানবাহনের শব্দদূষণ বা পারিপার্শ্বিক শব্দদূষণ (অ্যাম্বিয়েন্স নয়েজ়) নিয়ে সমীক্ষা হলেও রাজনৈতিক প্রচারে শব্দবিধি লঙ্ঘন নিয়ে আজ পর্যন্ত রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কোনও সমীক্ষা করেনি। ‘‘এর কারণ খুবই সহজ। কার বুকের পাটা রয়েছে বলুন তো, রাজ্য বা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ডান-বাম-লাল-গেরুয়া যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে শব্দবিধি ভাঙার অভিযোগ আনে? তাও সরকারি চাকরি করে!’’— আক্ষেপ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের।
সে কারণেই হয়তো শব্দদূষণের বিরুদ্ধে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অভিযান তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেই সীমাবদ্ধ থাকে। গত ১২ ডিসেম্বর নিজেদের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে শুধু একটি টুইট করা হয়,—‘শব্দদূষণের কোনও প্রয়োজন নেই।’ (‘নয়েজ় পলিউশন: দেয়ার ইজ় নো নিড ফর ইট’)। আর পোস্টটির উপরে লেখা থাকে,—‘শব্দদূষণ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।’ (‘নয়েজ় পলিউশন ইজ ব্যাড ফর দ্য হেলথ। কিপ দ্য নয়েজ় ইন চেক’)।
তার পরে অবশ্য সব চুপচাপ পর্ষদে! চর্তুদিকে শুধু চলতে থাকে উন্নয়নের গগনভেদী প্রচার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy