কান্না: সোমবার পাটুলির বাড়িতে কৃষ্ণেন্দু দাসের (ইনসেটে) মা তাপসী দাস। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির মিটার বক্স থেকে বেরিয়ে থাকা বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক বালকের। দুর্ঘটনার পরে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে বাড়ির মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, শৌচাগার থেকে ঘরে ঢোকার সময়ে মিটার বক্স থেকে বার হয়ে থাকা বিদ্যুতের তারে হাত লেগেই ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, কৃষ্ণেন্দু দাস (৭) নামের ওই বালক পাটুলির বৈষ্ণবঘাটার ‘টি’ ব্লকে একটি অর্ধনির্মিত দোতলা ভাড়া বাড়ির একতলায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। বাড়ির মালিক মণিচন্দ্র মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী গৌরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কৃষ্ণেন্দুর বাবা প্রশান্তবাবু পেশায় অটোচালক। মা তাপসীদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। সোমবার সকালে দু’জনেই কাজে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
বাড়িটির অন্য ভাড়াটেরা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মিটার বক্সের নীচে রাখা তিন-চারটি সাইকেলের উপরে অচৈতন্য অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল কৃষ্ণেন্দু। ভাড়াটে জয় সরকারের কথায়, ‘‘কৃষ্ণেন্দুকে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখে অন্য ভাড়াটেদের ডাকি। ছেলেটির বাবা-মাকেও খবর দেওয়া হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মা-বাবা কাজে যাওয়ায় তাঁদের ফিরতে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি হয়। তার মধ্যেই ভাড়াটেরা কৃষ্ণেন্দুকে তার ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিলেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রায় এক ঘণ্টা ছেলেটি বাড়ির মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে মা-বাবা ফিরলে তাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’’
এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, খোলা মিটার বক্স থেকে বিপজ্জনক ভাবে তার বেরিয়ে রয়েছে। কৃষ্ণেন্দুর বাবা প্রশান্তবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিপজ্জনক মিটার বক্সের কথা বাড়ির মালিককে একাধিক বার বলেও লাভ হয়নি। বাড়িওয়ালার দোষেই আমার ছেলেকে হারিয়েছি।’’
ঘটনার পরে সিইএসসি-র বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘সিইএসসি-র কর্মীরা মিটার রিডিং নিতে এসে কেন মিটার বক্সের বিপজ্জনক ছবিটা নজর করেননি?’’ যদিও সিইএসসি আধিকারিকদের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই মিটার বক্সে বেআইনি ভাবে তার টেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। সেই তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পুরো ঘটনাটা পাটুলি থানায় আমরা জানিয়েছি।’’
কৃষ্ণেন্দুদের বাড়িতে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, তাপসীদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। এক ভাড়াটের কথায়, ‘‘বিদ্যুতের লাইনে দু’টি তার ঢুকিয়ে বিপজ্জনক ভাবে পাম্প চালিয়ে জল তোলা হয়। ওই তারের একটিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় কৃষ্ণেন্দু।’’ এ দিকে ধৃত বাড়িওয়ালার ছেলে জগন্নাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘টাকার অভাবে বাড়ির কাজ শেষ করা যায়নি। মিটার বক্সের তার মেরামতির জন্য মিস্ত্রি ডাকা হলেও তিনি আসেননি।’’
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ ধৃতদের আজ, মঙ্গলবার আদালতে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy