Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গি রুখতে দাওয়াই এ বার সাফাইয়ের বিল

পুরকর্তাদের অভিযোগ, গত বছরের থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার এমন কড়া মনোভাব নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। কারণ দেখা গিয়েছে, পুরসভার নোটিস পেলেও অনেকে তা উপেক্ষা করে গিয়েছেন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

ডেঙ্গি মোকাবিলায় সহযোগিতা না করলে বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কামারহাটি পুরসভা। নোটিস পেয়েও যাঁরা নিজেদের বাড়ি, কারখানা বা ফাঁকা জায়গায় জমে থাকা জঞ্জাল সাফ করবেন না, সেখানে সেই কাজ করে দেবে পুরসভা। তার পরে সেই কাজের বিল পাঠাবে তারা। কিন্তু সেই বিলের টাকা জমা না দিলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা সম্পত্তিকরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।

পুরকর্তাদের অভিযোগ, গত বছরের থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার এমন কড়া মনোভাব নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। কারণ দেখা গিয়েছে, পুরসভার নোটিস পেলেও অনেকে তা উপেক্ষা করে গিয়েছেন। চেয়ারম্যান গোপাল সাহার কথায়, ‘‘বাসিন্দাদের একাংশের গয়ংগচ্ছ মনোভাব দূর করতেই এই কড়া ব্যবস্থা।’’

তিনি জানিয়েছেন, এলাকার যে সমস্ত ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি হাসপাতাল নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাবে না, তাদের কাছেও পুর স্বাস্থ্য দফতরের নোটিস পৌঁছে যাবে। যারা নির্দেশ মানবে না, তাদের ট্রেড লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহা বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরি। কিন্তু অনেকেই সচেতন নন। তাই আইন মেনে কড়া পদক্ষেপ না করলে হবে না।’’

কলকাতা বা বিধাননগরও কি এমন কোনও ব্যবস্থা নেবে?

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুর আইনের ৪৯৬-এ ধারায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। একই সঙ্গে জঞ্জাল সাফাই করার খরচ না দিলে তা সম্পত্তিকরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতায় এই দু’টিই চালু রয়েছে। তবে বিধাননগরে এমন কোনও পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবাশিস জানা। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বারবার জানানোর পরেও জঞ্জাল সাফ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

নাগরিকদের সচেতন করার জন্য পুরসভা এত উদ্যোগী হলেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার পরিকাঠামো কতটা মজবুত? ‘‘অ্যালাইজা মেশিন থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী, সবই রয়েছে। প্রতিনিয়ত নজরজারি চলছে, ক্যাম্প হচ্ছে,’’ দাবি বিমলবাবুর।

যদিও শুক্রবার বারাসতে জেলাশাসকের বৈঠকে অন্যান্য পুরসভার পাশাপাশি কামারহাটিতে কিছু জায়গায় নিকাশি নালা বুজে যাওয়া, জঞ্জাল জমে থাকার সমস্যার কথাও উঠে এসেছে। যেখানে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিবাহী মশার লার্ভাও মিলেছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। গত বছর বেশ কয়েক জন ডেঙ্গিতে মারা গেলেও তা মানতে চায়নি কামারহাটি পুরসভা। প্রতিবারেই তারা দাবি করেছিল, তাদের কাছে বৈধ কোনও কাগজ নেই। তাই ডেঙ্গিতে মৃত্যু কি না, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।

তবে এ বারে ‘কোনও তথ্য নেই’ বলে দায় এড়াচ্ছেন না পুরকর্তারা। পুরসভা সূত্রের খবর, জানুয়ারি থেকে ৩ অগস্ট পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কামারহাটিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩১ জন। তবে বছরের প্রথম দু’টি মাসে কেউ আক্রান্ত হননি। আর অজানা জ্বরে আক্রান্ত এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ জন। বিমলবাবু বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্তেরা সকলেই এখন সুস্থ। তবে জ্বরে আক্রান্তদের বাড়ি গিয়ে দেখেছি, তাঁরা বেশির ভাগই সর্দিকাশির জ্বরে আক্রান্ত।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, কামারহাটি, রানিপার্ক, টেক্সম্যাকো এলাকা-সহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সব এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক নেই, তার সঙ্গে বিটি রোডের ধারেও নিকাশি নালা দখল করে চলছে ব্যবসা। ফলে নিকাশি নালার জমা জলেও মশা হচ্ছে। আবার চটকলগুলির স্টাফ কোয়ার্টার্সেও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেখানে এডিস মশার লার্ভা মিলছে। গোপালবাবু বলেন, ‘‘সমস্ত নিকাশি নালা সাফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গি মোকাবিলায় কোন কাউন্সিলর কী কাজ করছেন, তা-ও এ বার খতিয়ে দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Kamarhati Municipality Stagnant Water Fine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE