আরাধনা: (বাঁ দিকে) রামদুলাল নিবাসের শ্যামা। (মাঝে) দর্জিপাড়া মিত্র বাড়ির শ্যামাকালী। (ডান দিকে) হাটখোলা দত্তবাড়ির প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
কালীক্ষেত্র কলকাতার বেশ কিছু বনেদি পরিবারের কালীপুজোয় দেখা যায় নানা বৈচিত্র ও আচার। যেমন
ভবানীপুর মিত্রবাড়ি (পদ্মপুকুর রোড): ১৮৯২ নাগাদ অ্যাটর্নি সুবোধচন্দ্র মিত্রের উদ্যোগে পুজো শুরু। প্রতিমার রং কালো। ডাকের সাজের প্রতিমার কানে দু’টি শিশুর শব মূর্তি। কপালে উল্কি। ভোগে থাকে লুচি, তরকারি ও নানা মিষ্টি।
বউবাজার মতিলালবাড়ি (দুর্গা পিতুরি লেন): জয়নগর-মজিলপুরের মতিলাল পরিবারের বিশ্বনাথ মতিলাল পিতৃহীন হয়ে মামারবাড়িতে আসেন। সরকারি নুনের গোলার চাকুরে থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবন বিভাগের দেওয়ান হন। পরে মামার সম্পত্তি পেয়ে পুজোর ভার নেন। শ্যামাকালীর পুজো হয় বৈষ্ণব রীতি মেনে। খিচুড়ি, সাদা ভাত, লাউ চিংড়ি, মাছের নানা পদ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়।
মার্বেল প্যালেস (মুক্তরামবাবু স্ট্রিট): ১৮৪০ সালে পুজো শুরু করেন রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক। প্রতিমার সাজ তৈরি হয় শোলার উপরে অভ্রের চুমকি দিয়ে। গোলাকার চালি। বংশ পরম্পরায় আসেন প্রতিমাশিল্পী এবং ঢাকিরা। পুজোয় তালের ফোঁপল ও করবী ফুল দেওয়া হয়। প্রতিপদে কাঁধে চেপে প্রতিমা বিসর্জনে যান।
বৈষ্ণবদাস মল্লিকের বাড়ি (দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট): অষ্টাদশ শতকের শেষে ব্যবসায়ী এবং ওরিয়েন্টাল সেমিনারির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বৈষ্ণবদাস মল্লিক পুজো শুরু করেন। পুজোয় কারণ ব্যবহার হয় না। ভোগে থাকে লুচি, পাঁচ রকম মিষ্টি, সাদা মাখন, ক্ষীর ইত্যাদি। ঠাকুরদালানের মেঝেতে বালি দিয়ে ভিতকে সাক্ষী রেখে হোম করা হয়।
দত্তবাড়ি (চোরবাগান): ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরির সময়ে দুর্গাচরণ দত্ত চোরবাগান অঞ্চলে নিষ্কর জমিতে বাড়ি করে পারিবারিক পুজোপার্বণ স্থানান্তরিত করেছিলেন। অমাবস্যা যখনই পড়ুক পারিবারিক প্রথা মেনে রাত দশটায় পুজো হয়। তার আগে নৈবেদ্য পাঠানো হয় ঠনঠনে কালীবাড়িতে।
শিবকৃষ্ণ দাঁ-র বাড়ি (জোড়াসাঁকো): পুজো শুরু করেন শিবকৃষ্ণ দাঁ ১৮৪০-এ। প্রতিমার রং গাঢ় বেগুনি। বৈষ্ণব পরিবার বলে বলিদান হয় না। অন্নভোগ নয়, থাকে লুচি, ভাজা, তরকারি এবং মিষ্টি।
হাটখোলার দত্তবাড়ি (নিমতলাঘাট স্ট্রিট): আন্দুলের দত্তচৌধুরীর রামচন্দ্র দত্ত অষ্টাদশ শতকের শেষে হাটখোলায় বসতি স্থাপন করে দুর্গা ও কালীপুজো শুরু করেছিলেন। পরে রামচন্দ্রের পৌত্র জগতরাম নিমতলাঘাট স্ট্রিটে বাড়ি করে পুজো শুরু করেন। কাঠের সিংহাসনে বাংলা শৈলীর প্রতিমার এখানে রুপোলি ডাকের সাজ। বিসর্জনের আগে প্রতিমা বরণ করেন বাড়ির কুমারীরা। লুচি-মিষ্টি দিয়ে দেওয়া হয় ভোগ।
রামদুলাল নিবাস (বিডন স্ট্রিট): কাঠের সিংহাসনে ডাকের সাজে দক্ষিণাকালী। সামনে ঝুলন্ত অভ্রধারা। পিছনে গোলাকার চালি। ১৭৮০ সালে রামদুলাল দে সরকার এ বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন।
রাধাকৃষ্ণ মিত্রবাড়ি (দর্জিপাড়া): নীলমণি মিত্রের পৌত্র প্রাণকৃষ্ণ ছেলেবেলায় খেলার ছলে মাটি দিয়ে কালীমূর্তি গড়েছিলেন। তাতে ভুল বসত কালী প্রতিমার বাঁ পা শিবের বুকে ছিল। সেই থেকেই এ বাড়ির কালীপুজোর শুরু। আজও সেই প্রথা মেনে দেবীর বাঁ পা শিবের
বুকে থাকে। কালীপুজোয় ১০৮টি জবার পরিবর্তে নীল অপরাজিতা দেওয়া হয়। অন্যান্য বৈচিত্রের মধ্যে মাখনের নৈবেদ্যের উপরে থাকে পানের খিলি।
প্রামাণিক বাড়ি (তারক প্রামাণিক রোড): ২০০ বছর আগে কালীপুজো শুরু করেন তারকনাথ প্রামাণিক। আগে ১০৮টি করে সোনার বেলপাতা ও জবা ফুল দেওয়া হতো। নৈবেদ্যে দেওয়া হয় চাল ও ফল। ডাকের সাজের সাবেক প্রতিমা। কুমারী পুজো হয়। কালীপুজোর পরের দিন লোহার বিভিন্ন যন্ত্রের উপর কালীপুজো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy