ম্যানহোলে নেমে বিপজ্জনক ভাবে চলছে কাজ। ফাইল চিত্র
চলে গিয়েছে চারটি প্রাণ। ঘটনার পরে পেরিয়েছে গোটা একটা সপ্তাহ। এখনও শহরের ম্যানহোল-কাণ্ডে কোনও সুরাহা হল না। ঠিকা সংস্থা তো দূর, কারও বিরুদ্ধেই পুরসভার তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি পুলিশের কাছে। স্থানীয় থানা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করলেও গত সাত দিনে কাউকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে অভিযোগ। গ্রেফতারি বা আটক তো বহু দূরের ব্যাপার। পুরসভা তড়িঘড়ি একটি তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বললেও সেই কমিটি গত এক সপ্তাহে কী সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার কোনও উত্তর নেই। এক পুরকর্তা শুধু জানিয়েছেন, সবটা এখনও রয়েছে আলোচনার স্তরে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কুঁদঘাটের ইটখোলা এলাকায় একটি সদ্য নির্মিত ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের কাছে ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে
তলিয়ে যান সাত শ্রমিক। পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চার জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ওই ঘটনার পরে সরাসরি প্রশ্ন ওঠে পুর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। পুরসভার কলকাতার পরিবেশ উন্নয়ন লগ্নি প্রকল্পে (কেইআইআইপি) ওই কাজ চলছিল। ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনটির নতুন তৈরি জলাধারের সঙ্গে পুরনো পাইপের সংযোগ স্থাপন করতে নামানো হয়েছিল সাত শ্রমিককে। মাটির অন্তত ৩০ মিটার গভীরে রয়েছে ওই জলাধারটি। অত নীচে মানুষ নামিয়ে কাজ করানোই নিষিদ্ধ। এ নিয়ে কড়া নির্দেশিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টেরও। নিয়ম অনুযায়ী, কাউকে ম্যানহোলে নামাতেই হলে আগে যন্ত্রের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে, সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইড বা মিথেনের মতো প্রাণঘাতী গ্যাস আছে কি না। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কাউকে নামানো হলে তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিশেষ ধরনের এপ্রনে ঢেকে রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পায়ে গামবুট, হাতে দস্তানা পরে থাকতে হবে। কোমরে দড়ি বেঁধে নামাও বাধ্যতামূলক। বিশেষ ধরনের মুখোশের পাশাপাশি যেখানে কাজ চলছে, সেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখারও নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু এর কোনওটাই কুঁদঘাটে মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, যাঁরা ম্যানহোলে নেমেছিলেন, তাঁরা মাটি কাটতে এই শহরে এসেছিলেন।
ভূগর্ভে নেমে নিকাশির কাজ করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ তাঁদের ছিল না। ছিল না নিরাপত্তা-বিধি মেনে তাঁরা ম্যানহোলে নামছেন কি না, তা দেখার মতো পুর নজরদারিও। আরও অভিযোগ, শহর জুড়ে এ ভাবেই
চলতে থাকে বেপরোয়া নিকাশির কাজ। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে দরপত্র ডেকে কাজ করানো হলেও এলাকাভিত্তিক নিকাশির কাজ অনেক সময়েই নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে করিয়ে নেওয়া হয়। ওই শ্রমিকদের নিয়ে আসেন বিভিন্ন প্রোমোটারেরা। বাড়তি আয়ের আশায় দিনভর বাড়ির ইট গেঁথে তাঁরাই রাতে নামেন ম্যানহোলের পাঁক সাফ করতে!
কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে এ ব্যাপারে জানতে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।
টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। পুর কমিশনার তথা ম্যানহোল-কাণ্ডে তৈরি তদন্ত কমিটির প্রধান বিনোদ কুমার বললেন, ‘‘দিল্লির এক ঠিকা সংস্থা কাজ করছিল। কমিটির সদস্যেরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তার পরে রিপোর্ট পাব। তবে
আমাদের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি।’’ এক সপ্তাহ পরেও চার জনের মৃত্যুর তদন্ত কথাবার্তার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ কেন? কমিশনারের কাছে উত্তর মেলেনি। ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা কেইআইআইপি-র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভা তদন্ত কমিটি গড়েছে। গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয় না? কুঁদঘাটের ওই এলাকাটি কলকাতা পুলিশের সাউথ-সাবার্বান ডিভিশনের অধীন। সেখানকার ডিসি রসিদ মুনির খান শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা মামলা রুজু করেছি। তদন্ত চলছে।’’ কিন্তু তদন্তের অগ্রগতি কী, সে ব্যাপারে নীরব থেকেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy