শুক্রবার ধর্মতলায় অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। (বাঁ দিক থেকে) রুমেলিকা কুমার, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং স্নিগ্ধা হাজরা। ছবি: সংগৃহীত।
১৩ দিন ধরে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ‘আমরণ অনশনে’ প্রথম দিন থেকে আছেন সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, সিগ্ধা হাজরা এবং অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ধর্মতলা থেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন সায়ন্তনীরা। প্রশ্ন তুললেন, কেন এখনও এক বারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের কাছে আসেননি, কেন তাঁদের ১০ দফা দাবি মেনে নিচ্ছেন না তিনি, কেন তাঁদের এত দিন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
সায়ন্তনী বলেন, ‘‘আমরা গত ১৩ দিন ধরে শুধু জল খেয়ে আছি। ওআরএস বা গ্লুকোজ়ও খাচ্ছি না। শুধু জল। কথা বলতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কি একবারের জন্যেও আমাদের কথা ভাবছেন না? আমরা দেখলাম, তিনি দুর্গাপুজোয় মেতে আছেন। কোথায় গেল ওঁর মাতৃসত্তা? আমাদের এখানে তো উনি একবারের জন্যেও এলেন না! আমাদের ১০ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করে দিতে ১০ মিনিট লাগে। কেন উনি এত নিষ্ঠুর?’’
সায়ন্তনী আরও বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সাধারণ মানুষ রোজ এসেছেন, রোজ আসছেন। সকলে বলছেন, ‘তোমরা জয়ী হও’। সকলে আমাদের সন্তানতুল্য বলছেন। কিন্তু এ কথা মুখ্যমন্ত্রীর কি একবারের জন্যেও মনে হচ্ছে না যে, ওদের শুকনো মুখের দিকে এক বার তাকিয়ে দেখি? এই নিষ্ঠুরতা আমাদের নির্বাক করে দিচ্ছে।’’
শনিবার সোদপুর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ন্যায়যাত্রার ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সে প্রসঙ্গে সায়ন্তনী বলেন, ‘‘আমরা জানি, সাধারণ মানুষ ঠিক আসবেন। জনতার আশীর্বাদ আমাদের মাথায় আছে। আমরা নিশ্চয়ই জনতার সাড়া পাব। কিন্তু তাঁর সাড়া কি আমরা পাব? যাঁর সাড়া পেতে ১৩ দিন ধরে শুধু জল খেয়ে আমরা এখানে বসে আছি?’’
আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষকে ডাক দিয়েছেন সায়ন্তনীরা। রবিবার ধর্মতলায় সাধারণ মানুষকে জমায়েত করতে বলেছেন তাঁরা। সায়ন্তনী বলেন, ‘‘আমাদের পাশে দাঁড়ান। মঞ্চের সামনে আসুন রবিবার। আমাদের মনোবল দিন। আমাদের শরীর ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। কণ্ঠও ক্ষীণ হচ্ছে। আপনাদের কণ্ঠে আমরা শক্তি পাব। মুখ্যমন্ত্রীর ১০ মিনিটের জন্য আমরা ১৩ দিন এখানে না খেয়ে বসে আছি। আপনারা এসে দেখান, আমাদের সব দাবি ন্যায্য। আমাদের মনোবল এত সহজে ভাঙবে না। তবে আমরা ক্ষুব্ধ। খিদের জ্বালায় নয়। বিচারের দাবিতে। আমাদের মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। মানুষ আমাদের পাশে আছে। যাঁর পাশে থাকার কথা, তিনি নেই।’’
সায়ন্তনী আরও বলেন, ‘‘অনেকেই আমাদের এখানে এসে জিজ্ঞেস করছেন, আর কত দিন না খেয়ে থাকব আমরা। একই প্রশ্ন আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে করতে চাই। আর কত দিন আমরা না খেয়ে থাকব, আপনি বলে দিন। প্রত্যেক ফোঁটা চোখের জলের হিসাব দিতে হবে।’’
রুমেলিকা তিন দিন ধরে অনশনরত। তিনি বলেন, ‘‘৭০ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। ১৩ দিন ধরে চলছে অনশন। যা হচ্ছে, তা হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের এখানে এ ভাবে না খেয়ে বসে থাকার কথা ছিল না। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী। অনেকে বলছেন, আমরা জেদ করছি। কিন্তু তা নয়। আমরা সরকারের ভুলের মাসুল দিচ্ছি। আমাদের যে সহযোদ্ধারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁরা আপনাদের দুর্নীতি এবং ধাপ্পাবাজির মাসুল দিচ্ছেন।’’
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছ’জন ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেছিলেন। পরের দিন যোগ দিয়েছিলেন আরও এক জন। এই সাত জনের মধ্যে তিন জন এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। বাকি চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আরজি করের অনিকেত মাহাতো হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার ছুটি পেয়েছেন। উত্তরবঙ্গেও ‘আমরণ অনশন’ করছেন ডাক্তারেরা। সেখানেও অসুস্থ হয়ে দু’জন হাসপাতালে ভর্তি। পরে আরও কয়েক জন অনশনে যোগ দিয়েছেন। এই মুহূর্তে ধর্মতলায় অনশন করছেন সাত জন। উত্তরবঙ্গে অনশনরত রয়েছেন এক জন। জল ছাড়া কিছুই খাচ্ছেন না এই ডাক্তারেরা। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy