(বাঁ দিকে) আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। (ডান দিকে) টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। (মাঝে) আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। —ফাইল চিত্র।
চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে তাঁরা সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও করেছেন। রাজপথে হেঁটেছেন। লালবাজার অভিযান করেছেন। অনশন করেছেন। কিন্তু তার পরেও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পাওয়ায় হতাশ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে হতাশ হলেও তাঁদের প্রতিবাদ থামবে না। বরং আরও বড় করে আন্দোলনের বার্তা দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অন্য দিকে, চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম জানিয়েছে, শনিবারই সিবিআই দফতর ঘেরাও করবে তারা।
আরজি করের ঘটনায় তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ এবং অভিজিৎ। শুক্রবার ওই মামলায় ২০০০ টাকা বন্ডের বিনিময়ে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। বস্তুত, শুক্রবার সন্দীপ এবং অভিজিতের গ্রেফতারির ৯০ দিনের মাথায় অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। কিন্তু আদালতে সিবিআই জানায়, তাদের আরও সময় লাগবে। অভিযুক্তদের আইনজীবী পাল্টা সওয়ালে বলেন, তাঁদের মক্কেলরা ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে হেফাজতে রয়েছেন। এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তাই তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। শেষ পর্যন্ত জামিন মেলে। তবে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় জেলেই থাকতে হবে সন্দীপকে। পুলিশ আধিকারিক অভিজিৎ একটি মামলার প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন। তাই তিনি জেল থেকে ছাড়া পাবেন। এই প্রেক্ষিতে চিকিৎসক মহল প্রশ্ন তুলল, কেন ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারল না সিবিআই?
বিচারের দাবির পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দাবিতে এবং ‘থ্রেট কালচার’ বা ‘হুমকি সংস্কৃতি’-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়া। শুক্রবার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের জামিন প্রসঙ্গে তিনি বার বার একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন, ‘হতাশ’। আনন্দবাজার অনলাইনকে আসফাকুল্লা বলেন, ‘‘এত আন্দোলনের পর এই নির্দেশ সত্যিই হতাশার। শুধু চিকিৎসকদের জন্য নয়, সারা বাংলার যে সমস্ত মানুষ আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন, এখনও প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে হতাশা এবং ক্ষোভের বিষয় এটা।’’ জুনিয়র ডাক্তারের সংযোজন, ‘‘যাঁরা অন্যায়কে অন্যায় বলেছেন, যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা আজ হতাশ। সিবিআই ৯০ দিনের মধ্যে একটি ঘটনার চার্জশিট দিতে পারল না এবং তাদের পক্ষ থেকে বলা হল আরও সময় লাগবে! এত সময় নিয়েও যখন তারা চার্জশিট দাখিল করতে পারল না, তখন সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেই।’’
যদিও জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি নিয়ে আসফাকুল্লা বলেন, ‘‘ওই বিষয়টি আদালতের বিষয়। বিচারব্যবস্থার ব্যাপার। আমদের কিছু বলার নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসাবে আমাদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বাড়ছে। আমাদের ভরসা ছিল, প্রত্যেকটি তদন্তকারী দলের উপর। যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, সে দিকে জোর দিয়েছিলাম। আমরা আবার প্রতিবাদে নামব।’’
আর এক জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর বক্তব্যও এক। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় বিচার চাইবে সাধারণ মানুষ, সেই প্রশ্ন উঠে যায়। তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে। তার পর যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?’’
সন্দীপ এবং অভিজিতের জামিন মঞ্জুরের ঘটনায় সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের তরফে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এঁরা যে ভাবে জামিন পেলেন, তাতে আমরা ক্ষুব্ধ, হতবাক। এঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই তাঁদের গ্রেফতার করল। অথচ, তাঁদের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারল না! এটা গাফিলতি নয়, আমরা মনে করি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা। আমরা আগামীকাল (শনিবার) সিবিআই দফতরে অভিযানে যাব।’’
আরজি কর কাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক ছাতার তলায় এসেছিল অনেকগুলো সংগঠন। নাম হয় ‘অভয়া মঞ্চ’। শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, সন্দীপ এবং অভিজিতের জামিনের প্রতিবাদে শনিবার ধর্মতলায় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং সিবিআই প্রধানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy