বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে জয়দীপ
কখনও সে মানবাধিকার কর্মী। কখনও বা কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থী। নির্দল হিসেবে ভোটে হারার পরে সে-ই আবার যোগ দিয়েছিল বিজেপিতে। বিজেপি কার্যকর্তা হিসেবে তার নামেই পোস্টার পড়ে ট্যাংরা এলাকায়!
বুধবার বিকেলে মাদক উদ্ধারে যাওয়া পুলিশকর্মীদের দিকে কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শোরগোল ফেলা ট্যাংরার সেই জয়দীপ দাস অবশ্য পুলিশের খাতায় শহরের অন্যতম মাদক কারবারি হিসেবেই পরিচিত! লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই জয়দীপের উপরে নজর ছিল তাঁদের। পুলিশের নজরকে ফাঁকি দিতে এক সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাদক পাচার করত জয়দীপ। গত বছর তার এক আত্মীয় ওই ভাবে মাদক পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হতেই পাচারের পদ্ধতি বদলে ফেলে জয়দীপ। এর পরে শুরু হয় এক মানবাধিকার সংস্থার ব্যানার লাগানো গাড়িতে করে মাদক পাচার। সেই ‘খবর’ও অবশ্য পৌঁছে যায় গোয়েন্দাদের কাছে।
লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার এক কর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘গত ১৫ জুলাই জয়দীপের এক আত্মীয় গ্রেফতার হওয়ার পরে তাকে জেরা করে ট্যাংরা এবং বাইপাস সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকার কয়েকটি গুদাম বন্ধ করিয়ে দিই আমরা। তবে সরাসরি তথ্যপ্রমাণ না থাকায় এত দিন জয়দীপকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। ওর নামে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে এ শহরে। আছে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি এবং একাধিক অটো।’’ চার মাস ধরে নজরদারি চালানোর পরে বুধবার বিকেলে এন্টালি থানা এলাকার বেলেঘাটা রোড থেকে এক কিলোগ্রামের কিছু বেশি চরস-সহ গ্রেফতার করা হয় জয়দীপকে। তাকে জেরা করেই জানা যায়, পুলিন খটিক রোডে তার ফ্ল্যাটে প্রচুর গাঁজা মজুত রয়েছে। জয়দীপকে নিয়েই সেখানে হানা দেন নার্কোটিক্স, গুন্ডা দমন ও গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরা।
ফ্ল্যাটে সেই সময়ে জয়দীপের স্ত্রী গৌরী ছাড়াও তার চোদ্দো বছরের ছেলে এবং পাঁচ বছরের মেয়ে ছিল। সেই সময়েই তাদের পোষা একটি রটউইলার এবং একটি ডোবারম্যান কুকুরকে পুলিশের দিকে লেলিয়ে দেয় গৌরী। কুকুরের মুখোমুখি পড়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় ডাকাবুকো অফিসারদের। তথ্য-প্রমাণ লোপাট করতে গৌরী ঘরে থাকা গাঁজার প্যাকেটে আগুন ধরিয়ে দেয় বলেও তদন্তকারীদের দাবি। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওই আবাসনে পৌঁছলেও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আগে ফ্ল্যাটে ঢুকতেই পারেননি তদন্তকারীরা। কোনও মতে রটউইলার কুকুরটিকে বাইরে বার করে আনা গেলেও রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কিছুতেই বাগে আনা যায়নি ডোবারম্যানটিকে। শেষে পটকা ফাটিয়ে, ঘুমের ওষুধ দিয়ে ডোবারম্যানটিকে নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ২১ কিলোগ্রামেরও বেশি গাঁজা। তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকেই গৌরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বিশেষ আদালতে তোলা হলে আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
কোনওক্রমে: মুখ বেঁধে ‘রকি’কে বার করে আনা হচ্ছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা চত্বর কার্যত সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে রেখেছে জয়দীপ। তার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পম্পা দে বলেন, ‘‘রটউইলারটির নাম টাইসন, আর ডোবারম্যানের নাম রকি। ওরা সব সময়েই ছাড়া থাকত। সব সময়ে এত গোপনীয়তা দেখাত যে, সন্দেহ হত। এখন দেখছি এই ব্যাপার।’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘পাশেই একটি বস্তিতে জয়দীপের বাবা-মা থাকেন। মাদক কারবারের অভিযোগে জয়দীপদের গোটা পরিবার নিয়েই আগে বহু বার থানা-পুলিশ হয়েছে।’’
বস্তিতে গেলে দেখা যায়, জয়দীপের ঝুপড়ির ঘরেও সিসি ক্যামেরা লাগানো। বাইরে উড়ছে বিজেপির শাখা সংগঠনের পতাকা। নাতি-নাতনিকে সামলাতে কালঘাম ছুটছে জয়দীপের বাবা নেপাল দাসের। তিনি বলেন, ‘‘বৌমাকে কেন ধরল? আমি এই বাচ্চাদের সামলাতে পারি! জয়দীপকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ উত্তর কলকাতা যুব তৃণমূলের নেতা জীবন সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘এই ছেলে উত্তর কলকাতার সব চেয়ে বড় মাদক কারবারি। বহু বার পুলিশকে বলেছি। বিজেপির জোরে এখন কারবার চালাচ্ছে!’’ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘জয়দীপ নামের কাউকে আমরা চিনি না। ভোটের ফলাফল নিয়ে এখন ব্যস্ত রয়েছি। এ সব দেখার সময় নেই! এমন বহু লোক আমার সঙ্গে প্রতিদিন ছবি তোলে। তা ছাড়া বিজেপির লোককে গাঁজা কেসে ফাঁসানো একটি নতুন ফ্যাশন হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy