‘বেআইনি’ ক্লাব অটুট রাখতে বিধাননগর পুরসভাকেই আদালতে টানেন জয়দেব নস্কর। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি পুরপ্রতিনিধি। সেই হিসেবে তাঁর দায়িত্ব, যে কোনও বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে পুরসভাকে সাহায্য করা। কিন্তু অভিযোগ, পুরপ্রতিনিধি হয়েও বিরোধিতার বদলে ‘বেআইনি’ ক্লাব অটুট রাখতে বিধাননগর পুরসভাকেই আদালতে টানেন জয়দেব নস্কর।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশেই তদন্ত করে ‘আদিত্য স্মৃতি সঙ্ঘ’ নামের ক্লাবটিকে বেআইনি ঘোষণা করেছিল বিধাননগর পুরসভা। ক্লাবটি ভাঙতে হবে, তাই সেটি খালি করার নোটিস জয়দেব-সহ অন্য সদস্যদের পাঠান পুর কর্তৃপক্ষ। জয়দেব পুরসভার সেই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ আনতে ছোটেন কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে। যদিও সব জায়গাতেই তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
যদিও বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পুরসভার পদক্ষেপ ঠেকাতে জয়দেবের এমন পদক্ষেপ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী শুধু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।’’
জয়দেব অবশ্য এখনও বলছেন, ‘‘সত্যিটা এক দিন সামনে আসবেই। আমরা আবার আদালতের দ্বারস্থ হব। আমি প্রলোভনে পা দিইনি। তাই এ সব হচ্ছে। এর পিছনে বড় খেলা রয়েছে।’’ ওই ক্লাবের অস্তিত্ব এবং জয়দেবদের কার্যকলাপ নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলা, পূর্বপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা প্রামাণিকের পাল্টা দাবি, ‘‘সত্যি এটাই, ওই জমির মালিক আমরা। শীর্ষ আদালত তার স্বীকৃতিও দিয়েছে।’’
আদালতের রায় অনুযায়ী, ক্লাবটি বেআইনি এবং সেটি ভাঙা হবে জানিয়ে বিধাননগর পুরসভা জয়দেব নস্কর-সহ ন’জনকে ২০২২ সালের মে মাসে নোটিস দেয়। তাতে জায়গাটি খালি করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই জয়দেব পুরসভার বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে মামলা করেন নোটিস প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে। আদালত পুরসভার দাখিল করা রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে ওই বছর সেপ্টেম্বরেই জানিয়ে দেয়, ক্লাবটির অনুমোদিত কোনও নকশা নেই। এমনকি জয়দেবের আইনজীবীও আদালতে সে কথা স্বীকার করেন বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারপতি। তার পরেই জয়দেবদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এর পরে ডিভিশন বেঞ্চ এবং দু’বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন জয়দেবরা। যদিও সর্বত্রই তাঁদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়।
বিধাননগর পুরসভা বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে যখন পদক্ষেপ করছে, তখন পুরপ্রতিনিধি হয়ে বেআইনি ক্লাবের পাশে তিনি দাঁড়াচ্ছেন কেন?
জয়দেবের উত্তর, ‘‘আমি ক্লাবের পাশে দাঁড়াইনি। আমাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে বাপ্পা প্রামাণিকেরা মামলা করে রেখেছিলেন। তাই আমার নাম আদালতের নথিতে রয়েছে। ক্লাব তো সকলের।’’ কিন্তু পুরসভার নোটিসের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাওয়া আবেদনকারীদের তালিকায় তো আপনার নামও রয়েছে? উত্তরে জয়দেব বলেন, ‘‘ক্লাবের নকশা ও কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। ওই ক্লাবে সমাজসেবামূলক কাজ হয়।’’
বাপ্পার অভিযোগ, ‘‘২০২১ সালের জুনে এক দিন বহিরাগতদের নিয়ে জমিটি দখল করতে এসে জয়দেবরা আমাদের পরিবারের লোকজনকে বেধড়ক মারধর করেন। তার পরেই জয়দেবদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘জয়দেব পুরপ্রতিনিধি হওয়ায় শুরুতে পুরসভা আমাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। জমিটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মামলা চলছে, ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এ সব তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও সেই সময়ে পুরসভা চুপ করে ছিল। গত দু’বছরে জয়দেবদের তিনটি নোটিস দেওয়া ছাড়া কিছুই করেনি পুরসভা। তা-ও আমরা পুরসভার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করার পরে।
গত ৯ জানুয়ারি পুরসভা ও পুলিশ নয়াপট্টিতে যায় বেআইনি ক্লাবটি ভাঙতে। মাইকে জানানো হয় যে আদালতের নির্দেশে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও স্থানীয়দের একাংশ গায়ে আগুন দেওয়ার হুমকি দিয়ে বাধা দেন কাজে। এ সবই হাই কোর্টে জানিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। সর্বশেষ পাওয়া খবর, বিধাননগরের নগরপাল ও মহকুমা শাসককে উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ক্লাব ভাঙার কাজ ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়িত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy