Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sit in Protest

হাতে হাতপাখা, মাথার উপর ত্রিপল, আগুনঝরা দিনেও টলেনি জেদ! ৭৫৯ দিন ধরে চলছে ধর্না

গরমের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে শৌচাগার ব্যবহারের যন্ত্রণা। এক চাকরিপ্রার্থী জয়া দাস জানালেন, তীব্র রোদে শহিদ মিনার চত্বরের শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে তাঁদের।

job protest

অনড়: গনগনে দুপুরেও গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসে চাকরিপ্রার্থীরা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৫
Share: Save:

চৈত্রের গনগনে দুপুর। মাথার উপরে আগুন ঝরাচ্ছে সূর্য। সেই আঁচ এসে পড়ছে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির নীচে বসে থাকা নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের মুখে-চোখে। আগুনের হলকা প্রতিহত করার জন্য তাঁদের ভরসা হাতপাখা আর জলের বোতল। আর উপরে শুধু ত্রিপলের ছাউনি। সমস্যা রয়েছে শৌচাগার নিয়েও। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, দুঃসহ এই দহনে অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। বিশেষত যাঁরা রোজা রেখেছেন, তাঁদের অবস্থা আরও কাহিল। তবু সব কষ্ট উপেক্ষা করে লড়াইয়ের ময়দানে একজোট তাঁরা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের ঠিকানা এই ধর্না মঞ্চ।

গান্ধী মূর্তির নীচে বসে থাকা নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরাই শুধু নন, তাঁদের সঙ্গে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে ধর্না চালাচ্ছেন উচ্চ প্রাথমিক, প্রাথমিক, রাজ্য সরকারের ‘গ্রুপ ডি’, স্কুলের ‘গ্রুপ সি’ এবং ‘গ্রুপ ডি’, নতুন করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার দাবি জানানো চাকরিপ্রার্থীরা। সকলেই জানাচ্ছেন, এই তীব্র গরমে রাস্তায় বসে থাকা খুব কষ্টকর। কিন্তু, তার চেয়েও বেশি কষ্টকর বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকা।

যেমন, মালদহ থেকে আসা মাহি পরভিন। নতুন করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার দাবিতে অন্যদের সঙ্গে ধর্নায় বসেছেন তিনি। মাহির কথায়, ‘‘রোজা রেখেছি বলে জলও খাচ্ছি না সারা দিন। শরীর মাঝেমধ্যেই জানান দিচ্ছে। কিন্তু, তা-ও লড়াই ছাড়ছি না। দাবি পূরণ হওয়া পর্যন্ত এই রোদেই বসে থাকব।’’ ওই মঞ্চের কাছেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চ। মঞ্চের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘অনেকে ক্লান্তিতে রোদের মধ্যেই শুয়ে পড়ছেন। পানীয় জলও পর্যাপ্ত নেই। কলকাতা পুরসভার তরফে একটি মাত্র জলের ট্যাঙ্ক দেওয়া হয়েছে। এই গরমে তাতে কি কিছু হয়?’’ তিনি জানান, গরমে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়ে ক্লান্তি, পেট ব্যথা-সহ নানা ধরনের অসুবিধা হচ্ছে অনেকের। বার বার মুখে-চোখে জল দিতে হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীরা নিজেরাই ওআরএস এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম রেখেছেন।

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরাও জানাচ্ছেন, তাঁদের মনে হচ্ছে, কলকাতা নয়, তাঁরা রয়েছেন কোনও মরু শহরের রাস্তার ধারে। এক চাকরিপ্রার্থী পিউ দাস বলেন, ‘‘মেয়ো রোডে ফুটপাতের ধার ঘেঁষে বসে আছি। কোনও গাড়ি যখন জোরে পাশ দিয়ে যাচ্ছে, গরম দমকা হাওয়া গায়ে লাগছে। মনে হচ্ছে, সারা শরীর যেন জ্বলে গেল। হাতপাখার হাওয়া গায়েই লাগছে না।’’

গরমের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে শৌচাগার ব্যবহারের যন্ত্রণা। এক চাকরিপ্রার্থী জয়া দাস জানালেন, তীব্র রোদে শহিদ মিনার চত্বরের শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে তাঁদের। পুরসভার জলের ট্যাঙ্ক আছে ঠিকই, কিন্তু সেই জল মুখ-হাত ধোয়ার জন্য। আর এক চাকরিপ্রার্থী শহিদুল্লার কথায়, ‘‘গত বছরও গরমে এখানেই ছিলাম। সে বার কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আমাদের জন্য ওআরএস, জলের বোতল নিয়ে এসেছিলেন। এ বার তাঁদের খুব বেশি দেখছি না। হয়তো তাঁদের কাছে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কিন্তু আমরা যতই একা হই না কেন, নিয়োগের দাবিতে এই আন্দোলন চলবেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sit in Protest Job Recruitment Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy