হোস্টেলে ভাঙচুরের পর।—ছবি পিটিআই।
আতঙ্ক চেপে বসেছে তাঁদের অনেকের মধ্যে। এতটাই যে, মনোবল ভাঙতে বসেছে। ঘন ঘন আসা পরিজনেদের ফোনে তাঁদের উদ্বেগের আঁচও পাচ্ছেন বাড়ি ছেড়ে এ শহরে পড়তে আসা ছাত্রীরা। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ছবি দেখে তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এর পরে তো বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য মনের জোরটাই কমে যাবে!’’
মুখ ঢেকে, হাতে লাঠি-রড নিয়ে জেএনইউয়ের ছাত্রী আবাসে বহিরাগতদের দাপিয়ে বেড়ানোর খবরে ফের দেশ জুড়ে প্রশ্নের মুখে পড়ুয়াদের, বিশেষত ছাত্রীদের নিরাপত্তা। সম্প্রতি জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকেও ছাত্রী আবাসে চড়াও হয়েছিল পুলিশ। বেধড়ক মার খান ছাত্রছাত্রীরা।
কী ভাবছেন এ শহরের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করা ছাত্রীরা? বালিগঞ্জের ডেভিড হেয়ার বিএড কলেজের এক ছাত্রী বলছেন, ‘‘এ শহরেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। হস্টেলের ঘরেও নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না।’’ আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রোশনি গুহর মতে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মহিলা-পুরুষ কেউই নিরাপদে নেই। সেপ্টেম্বরে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হামলার প্রসঙ্গ তুলে হুগলির মেয়ে, সমাজতত্ত্বের ছাত্রী রোশনি বলেন, ‘‘বহিরাগতদের তাণ্ডবের ইতিহাস রয়েছে যাদবপুরে। সেপ্টেম্বরে হামলার সময়েই মনে হয়েছিল, ওরা এত সহজে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারলে হস্টেলে পৌঁছতে কতক্ষণ?’’
কতটা নিরাপদ এই ছাত্রী আবাসগুলি? যাদবপুরের এক পড়ুয়ার দাবি, তাঁদের তিনটি গার্লস হস্টেলের প্রায় ৫৫০ জন পড়ুয়ার জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, ‘‘এখানে হস্টেলের নিরাপত্তা যথেষ্ট কড়া। তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ দেখছি না। প্রয়োজন মনে করলে হস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’
অনেক ছাত্রীই অবশ্য এত নিশ্চিন্তে নেই। এ শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ছাত্রী আবাস। সেখানে রক্ষীর সংখ্যা হাতে গোনা। বিডন স্ট্রিটের হস্টেলে থাকা এক পড়ুয়া জানাচ্ছেন, হস্টেলের ভিতর ও বাহির সামলানোর গুরুদায়িত্বে থাকেন মাত্র চার জন। বাংলায় এম ফিলের ওই ছাত্রী হতাশ ভাবে বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে দূরে হস্টেলের ভরসাতেই তো পড়তে এসেছি। সেই নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থলে বহিরাগতেরা হামলা চালালে নিরাপত্তা কোথায়?’’
বর্তমান পরিস্থিতিতে হস্টেলের মেয়েদের নিরাপত্তায় আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই কলেজের প্রাক্তনীরা জানাচ্ছেন, সেখানের হস্টেল ক্যাম্পাস লাগোয়া হলেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল বরাবরই। তবে ২০১৪ থেকে তা আরও কড়া হয়। অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, ‘‘রাতে হস্টেলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। হস্টেল কমিটি নিয়মিত ছাত্রীদের খোঁজখবর নেয়। শীঘ্রই মেয়েদের সঙ্গে আবার কথা বলব। এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ‘সুকন্যা’ প্রকল্পে ক্যারাটে শিখেছে ওই ছাত্রীরা। তাই হামলা হলে আশা করি তারা সেই শিক্ষার প্রয়োগ ঘটাবে।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিটি গার্লস হস্টেলে পূর্ণ সময়ের সুপার রয়েছেন। কোনও সমস্যা হলে পুলিশের হেল্পলাইন বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে তাঁদের। এ ছাড়া হস্টেলে যথেষ্ট সংখ্যক রক্ষীও আছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy