পড়ুয়াদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: পিটিআই
পুলিশ কর্তারা পড়ুয়াদের কাছে লাঠি চালানোর জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন। শিক্ষামন্ত্রী পুলিশকে ছাত্র আন্দোলন সামলানোর ক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়ারও পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তার পরেও সোমবারের ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল কলকাতা পুলিশ। সেই এফআইআরে স্পষ্ট উল্লেখ করা হল, পড়ুয়ারা পুলিশকে মারধর করেছে। ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) সুদীপ সরকার নিজেও মার খেয়েছেন পড়ুয়াদের হাতে। গোটা ঘটনার সঙ্গে অনেকে মিল খুঁজে পাচ্ছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের। সেখানেও মার খাওয়ার পর ঐশীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ।
সোমবার যাদবপুরের পড়ুয়াদের মিছিলে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লালবাজার সূত্রে খবর, গঙ্গাসাগর থেকে তিনি ফোন করেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে। মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে পড়েন পুলিশ কর্তারা। পড়ুয়াদের জানানো হয়, গোটা ঘটনাটিই অনিচ্ছাকৃত এবং প্রয়োজনে পুলিশ যে ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত, সেই বার্তাও দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। রাজ্যের এক মন্ত্রী যাদবপুর পৌঁছন পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে। কারণ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট, সেখানে ওই মিছিলে পুলিশের লাঠি তাঁর রাজনৈতিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
কিন্তু, তার পরেও খাতায়কলমে পড়ুয়াদের জমায়েতকে অবৈধ বলেই জানাল কলকাতা পুলিশ। যাদবপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা জেনারেল ডায়েরিতে (জিডি নম্বর ৫০৩) বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় যাদবপুরের পড়ুয়ারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। ডিসি সুদীপ সরকারকেও মারা হয়। শুধু তাই নয়, পড়ুয়ারা পথ অবরোধ করলে যার পরনাই সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। পুলিশের অভিযোগ, পড়ুয়ারা পথচারীদের উপরেও হামলা করে। এক পথচারীকে পুলিশ উদ্ধার করে। অভিযোগ, পড়ুয়াদের বার বার সরে যেতে অনুরোধ করলে তাঁরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। টায়ার জ্বালিয়ে ছুড়ে দেন রাস্তায়।
সোমবার রাত ১০টা৪৫ মিনিটে করা ওই জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতেই রাতেই পুলিশ যাদবপুরের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৩,১৪৭,১৪৮ (গন্ডগোল পাকানোর জন্য অবৈধ জমায়েত), ১৮৬,১৮৮, ২৮৩ এবং ৩২৪ ধারায় মামলা রুজু করে।
মুখ্যমন্ত্রী যেখানে পুলিশকে জেএনইউ নিয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলনে সংবেদনশীল হতে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হল কেন? কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা দাবি করেন, ‘‘গোটা বিষয়টাই রুটিন। আমরা মঙ্গলবারও সমস্ত ডিসি এবং অ্যাসিস্টান্ট কমিশনারের মাধ্যমে গোটা বাহিনীকে জানিয়েছি যে, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন যাতে তাঁরা সংবেদনশীলতার সঙ্গে সামলান। সংযত থাকেন।” ওই পুলিশ কর্তার দাবি, রু়টিন বলেই তুলনামূলক লঘু ধারায় মামলা করা হয়েছে। কেবল যাদবপুরের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে নয়, আলাদা এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও। সোমবার তাঁরা মিছিল করে পৌঁছন সুলেখা মোড়ে।
কিন্তু মঙ্গলবার এফআইআর আদালতে পৌঁছলে এক সরকারি আইনজীবী ইঙ্গিত দেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মামলা শুরু হয়েছে, তাতে পরে পুলিশ আদালতের অনুমতি নিয়ে জামিন অযোগ্য গুরুতর ধারাও যোগ করতে পারে। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য যদিও আশ্বস্ত করতে পারছে না পড়ুয়াদের। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘দিল্লিতে ঐশীদের উপর হামলা হওয়ার পর পাল্টা ওদের বিরুদ্ধেই মামলা করল পুলিশ। এখানে আমরা পুলিশের লাঠি খেলাম, বিজেপির লোকজন মারার চেষ্টা করল। তার পর আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা! তা হলে ফারাকটা কোথায়?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy