নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে ট্যাংরার বাসিন্দা ঝুন্নু রানার (৩৪) দেহ উদ্ধার হল। মঙ্গলবার সকালে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকার বামনঘাটা খালের কাঠপোলের কাছে জল থেকে উদ্ধার হওয়া নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামে ছিল পচাগলা দেহটি। সেটি শনাক্ত করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় পাওয়া ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তবে ঝুন্নুকে খুনে ব্যবহৃত হাতুড়িটি মেলেনি। তাঁর মোবাইলটিও পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, খালটি এতটাই ঘন কচুরিপানায় ভরে ছিল যে, দেহ উদ্ধার অভিযানে সেচ দফতরের সাহায্য নিতে হয়। এই ঘটনার তদন্তভার এ দিনই থানার হাত থেকে নিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা। পুলিশ সূত্রের খবর, ঝুন্নুর দেহের নিম্নাঙ্গে পোশাক না থাকলেও উপরিভাগে জামা ছিল। বিছানার চাদরে মোড়ানো ছিল দেহটি। এর আগে সোমবারই তিলজলার একটি জলাশয়ের ধার থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্যান্ট-বেল্ট, যা পরে ঝুন্নুর বলে শনাক্ত হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, ধৃতেরা জানিয়েছিল, বাইপাসের আম্বেডকর সেতুর কাছে দেহটি ড্রামে ভরে খালে ফেলা হয়েছিল। এ দিন সেখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে মেলে ঝুন্নুর দেহ।
ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি থেকে আগেই গ্রেফতার হয়েছে গোলাম রব্বানি ও তার স্ত্রী আয়েশা নুর। পরে আরও দু’জনকে ধরা হয়। ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করেছে। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সেচ দফতর গত কয়েক দিন ধরে চৌবাগা, বানতলা এলাকার খালে ঝুন্নুর দেহের দেহের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছিল।
এ দিন ঝুন্নুর দেহ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। বাড়ি থেকে ভেসে আসছিল ঝুন্নুর মায়ের কান্না। মৃতের কাকা লালবাহাদুর রানার অভিযোগ, ‘‘৩ মার্চের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গোলাম রব্বানির সঙ্গে যে স্কুটারে ঝুন্নুকে দেখা গিয়েছিল, সেটি আমার। স্কুটারটি উদ্ধার হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ঝুন্নু বাড়ির কাছে একটি কারখানায় রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত। ওর সঙ্গে ট্যাংরার দীপক ও তার ভাই দীপু প্রসাদের বন্ধুত্ব ছিল। দীপকের মাধ্যমেই মাসকয়েক আগে রব্বানির সঙ্গে ঝুন্নুর পরিচয়।’’
এ দিন ময়না তদন্তের পরে ঝুন্নুর দেহ ট্যাংরা থানায় আনা হলে তাঁর পরিজনেরা দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি সামলায়। শেষে কড়া পুলিশি প্রহরায় ওই যুবকের দেহ নিমতলা শ্মশানে পাঠানো হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)