Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্দল বিক্রমকে বাঁচাতে গিয়েই গুলি খান জগন্নাথ

মাটিতে ফেলে লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারছিল কয়েক জন দুষ্কৃতী। তার পর তাঁর মাথায় রিভলভার তাক করে তারা। গিরিশ পার্ক থানার এসআই জগন্নাথ মণ্ডল তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী বিক্রম সিংহকে বাঁচাতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের রিভলভারের সামনে চলে আসেন তিনি। গুলি এসে সরাসরি তাঁর গায়ে লাগে। জগন্নাথবাবু এখন একবালপুর এলাকার যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন বিক্রমবাবু।

হাসপাতালে বিক্রম। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে বিক্রম। —নিজস্ব চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

মাটিতে ফেলে লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারছিল কয়েক জন দুষ্কৃতী। তার পর তাঁর মাথায় রিভলভার তাক করে তারা। গিরিশ পার্ক থানার এসআই জগন্নাথ মণ্ডল তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী বিক্রম সিংহকে বাঁচাতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের রিভলভারের সামনে চলে আসেন তিনি। গুলি এসে সরাসরি তাঁর গায়ে লাগে। জগন্নাথবাবু এখন একবালপুর এলাকার যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন বিক্রমবাবু। সোমবার সকালে হাসপাতালে শুয়েই ধীরে ধীরে বলছিলেন শনিবারের ঘটনার কথা। বলতে গিয়ে যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে যাচ্ছিল। থেমে থেমে বললেন, ‘‘আমার প্রাণ বাঁচাতে গিয়েই ওই অফিসারকে গুলি খেতে হল। উনি না এসে পড়লে আমাকে গুলি করে খুন করা হতো।’’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিক্রমের মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। তাঁর পাঁজর ও কাঁধের হাড় ভেঙেছে। দীপক সিংহ বিক্রমের জামাইবাবু, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডেরই কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁর নির্বাচনী অফিসের সামনেই দুষ্কৃতীরা জগন্নাথবাবুর উপরে গুলি চালায়। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দীপকও। তিনি এ দিন জানান, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিক্রম কংগ্রেসের অফিসে এসেই বসেছিলেন। বিকেল চারটে নাগাদ প্রায় কুড়ি জনের একটি দল এসে চড়াও হয়। দীপকবাবুর কথায়, ‘‘মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ফেলতে থাকে ওরা। আমাদের মারধর করে রাস্তায় টেনে নিয়ে যায়। মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’’ দীপকবাবু এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গী পালাতে পারলেও দুষ্কৃতীরা বিক্রমকে ধরে ফেলে।

এই সময়ে ঘটনাস্থলে আসেন এক দল পুলিশকর্মী। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন জগন্নাথবাবু। দীপকবাবু জানান, পুলিশ দেখে মোটরসাইকেলে চেপে ফিরে যায় দুষ্কৃতীরা। তবে বিক্রমকে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। দীপকবাবুরা আপাতত বিপদ কেটেছে ভেবে দলবল নিয়ে পার্টি অফিসে ফিরে আসেন। দীপকবাবু বলেন, ‘‘তখনই পকেট থেকে একটা সাদা কাগজ বের করে জগন্নাথবাবু আমাদের বলেন, সারাদিন অনেক সহ্য করেছি। এ বার একটা লিখিত অভিযোগ করুন। তারপর দেখছি। এরা খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে!’’ অভিযোগ লি‌খতে শুরু করেছিলেন দীপক। এই সময় হঠাৎই আবার চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। দীপকবাবু বলেন, ‘‘হাত থেকে কাগজটা কেড়ে নিয়ে বিক্রমের মাথায় রিভলভার তাক করে এক দুষ্কৃতী। এই সময়ে বিক্রমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন জগন্নাথবাবু।’’ প্রত্যক্ষদর্শী অন্য কংগ্রেস কর্মীরাও জানাচ্ছেন, জগন্নাথবাবু ওই দুষ্কৃতীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিক্রমকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এই সময়েই আর এক জন জগন্নাথবাবুর উপরে গুলি চালায়।

দীপক সিংহের এফআইআর।

দীপকবাবু সোমবার গিরিশ পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ঘটনার বিবরণ দিয়ে। লিখেছেন, বিধায়ক সঞ্জয় বক্সীর নেতৃত্বে প্রায় ২৫০-৩০০ জনের একটি দল সে দিন বিকেল চারটে নাগাদ তাঁদের পার্টি অফিসে হামলা চালায়। তার আগে সকালে প্যারীচরণ গার্লস হাইস্কুলে বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট দেওয়া নিয়ে সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়েছিল। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সঞ্জয়ের স্ত্রী স্মিতা বক্সী তৃণমূলের প্রার্থী। দলে কারা ছিল, তার বেশ কয়েকটি নামও দীপকবাবু অভিযোগপত্রে লিখেছেন। মন্টু সাউ, সন্তোষ সিংহ, দিলীপ যাদব, টারজান, অজয় শঙ্কর ওরফে কালুয়া, পাপ্পন ঠাকুর, রবি শ্রীবাস্তব, গোপাল শর্মা ওরফে গালকাটা, বাপি, মনোজ সিংহ, লাল্টু, বাবলি-র নাম লিখেছেন তিনি।

পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে দীপকবাবু বলেন, ‘‘শনিবার সকাল থেকে তৃণমূল নেতা-বিধায়ক সঞ্জয় বক্সীর দলবল আমাদের কর্মীদের বোমা-গুলি নিয়ে তাড়া করেছে। এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য শাসানি দিয়েছে। একাধিক বার গিরিশ পার্ক থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশ শুধু ‘দেখছি দেখছি’ করে গিয়েছে।’’ দীপকবাবুর অভিযোগ, তাঁদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মীও।

এই অভিযোগের ব্যাপারে বিধায়ক সঞ্জয় বক্সীর বক্তব্য জানার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

*****************************

জগন্নাথ স্থিতিশীল

পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সাব-ইনস্পেক্টর জগন্নাথ মণ্ডলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সোমবার আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। রবিবার অস্ত্রোপচার করে তাঁর পাঁজরের পিছন থেকে গুলি বার করা হয়। এ দিনও ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই রাখা হয়েছে তাঁকে। চিকিৎসকেরা জানান, জগন্নাথবাবু সকলকে চিনতে পারছেন। অল্পস্বল্প কথাও বলেছেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যথাযথ ভাবে কাজ করছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE