Advertisement
E-Paper

বাধা ঠেলে দিশার খোঁজে যাদবপুরের বৈদ্যুতিন ‘শব্দকল্প’

যেমন, মৃগ বলতে একদা সব পশুকেই বোঝানো হত! মৃগয়া মানে পশু শিকার বা শাখামৃগ বলতে গাছের ডালের বাঁদরও তাই বোঝায় বাংলা ভাষায়।

কাজ চলছে ‘শব্দকল্প’-র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কাজ চলছে ‘শব্দকল্প’-র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫০
Share
Save

উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ছোটদের পাঠ‍্য ‘পদার্থবিদ‍্যাসার’ বইয়ে রয়েছে কাচ দিয়ে কাচ কাটার কথা। গাছ কাটা, দাড়ি কাটা ইত‍্যাদি কর্তনের নমুনাও সমসময়ের। ১৮৮৪-র ‘আর্য‍্যসমাজ’ নাটকের সংলাপ, ‘তুমি গলাই কেটেছ।’ আর্থিক প্রবঞ্চনা অর্থে প্রয়োগ। বাংলায় কাটা ক্রিয়াপদটির নানা রঙা প্রয়োগের একটি প্রাথমিক কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তাড়া করছে আরও অজস্র শব্দ।

যেমন, মৃগ বলতে একদা সব পশুকেই বোঝানো হত! মৃগয়া মানে পশু শিকার বা শাখামৃগ বলতে গাছের ডালের বাঁদরও তাই বোঝায় বাংলা ভাষায়। কবে মৃগ শব্দটির মানে শুধুই হরিণ হয়ে উঠল? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চলছে কম্পিউটারের সফটওয়্যারে এমন শব্দ সূত্রের খোঁজ। অনেকেরই জানা নেই, যাদবপুরের স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ‍্যান্ড রেকর্ডসের (এসসিটিআর) উদ‍্যোগে এক দশক ধরে চলছে প্রথম বৈদ‍্যুতিন বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধানের কাজ। নামটি শব্দকল্প। এসসিটিআর-এর বৈদ‍্যুতিন রবীন্দ্রকোষ বিচিত্রা-র মতো যুগের চাহিদা মেনে শব্দকল্পও থাকবে শুধুই নেটমাধ‍্যমে। এ যাবৎ ছাপার অক্ষরে লেখা সব বাংলা শব্দেরই আদি থেকে সমকালীন প্রয়োগ-রীতি এবং অর্থের দিক বদলের স্বাক্ষর যা এক জায়গায় জড়ো করতে চায়।

কাজ চলছে অধ‍্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। এক-একটি শব্দের রোমাঞ্চকর সফর বা ইতিহাস খুঁড়ে আনার চেষ্টা অনেকটা পূর্ণাঙ্গ অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির হয়ে ওঠার সঙ্গে তুলনীয়। এই কর্মকাণ্ডের কথা সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাপ্রেমীদের জানাতে শুরু হয়েছে শব্দকল্পের ইউটিউব প্রচার। শব্দকল্পের একটি ওয়েবসাইটও তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল আঙ্গিকে বাংলা ভাষা চর্চার এই অভূতপূর্ব চেষ্টা অন‍্য অনেক ভাষা রক্ষারও পথ হতে পারে বলে মনে করছেন সুকান্ত। শব্দকল্পের জন‍্য বাংলা ব‍্যাকরণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ইতিমধ্যে দু’টি সফটওয়‍্যারও প্রস্তুত। সুকান্তের মতে, “শব্দকল্পকে বিপুল বিস্তারে সফল করতে চাই প্রযুক্তি ও পরিশ্রমের মেলবন্ধন। কাজটা দীর্ঘমেয়াদি, ব‍্যয়বহুল।”

আর্থিক অনিশ্চয়তাও এই স্পর্ধিত প্রয়াসের চিরসঙ্গী। এক দিকে, বাংলায় ছাপার অক্ষরে মজুত সব যুগের সব লেখা, সব বিষয়ের শব্দ ঘাঁটতে বই, পত্রিকার গন্ধমাদন পাহাড়ের ডিজিটাল ভাঁড়ার তৈরি হচ্ছে। বিস্মৃত শব্দ, পরিভাষার পাঠোদ্ধারে মধ‍্যযুগের বাংলা সাহিত্য বিশারদ, ভাষাতত্ত্ববিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দর্শন, তন্ত্র, ইসলামি পাঠ‍ বিশারদ এবং বিজ্ঞান, অর্থনীতির পণ্ডিতদেরও একজোট করা হচ্ছে। আবার আন্তরিক ভাবে লেগে থাকা গবেষণা সহযোগীদের প্রাপ‍্য টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তাও থাকছে। গ্লোবাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ‍্যালামনি ফাউন্ডেশন এবং কিছু শুভানুধ্যায়ীর পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ এগোচ্ছে। তবে কয়েক মাস বাদে পরিস্থিতি ফের জটিল হতে পারে। প্রাক্তনী ফাউন্ডেশন এবং যাদবপুর কর্তৃপক্ষের মাধ‍্যমে অনুদানের আর্জি জানাচ্ছেন প্রকল্প আধিকারিকেরা।

এসসিটিআর-এর কাজের পুরনো সহযোগী, সফটওয়্যার নির্মাতা, চন্দননগরের ঋত্বিক পাল এবং যাদবপুরের বাংলা, ভাষাতত্ত্ব ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহযোগীরা এই প্রকল্পে এগিয়ে এসেছেন। এই কাজের সূত্রে সাধু ও চলিতে বাংলার ক্রিয়াপদগুলির বিপুল রকমফের, সর্বনাম, বিশেষ‍্যের রূপ বদলগুলি কম্পিউটারে চিহ্নিত করা যাচ্ছে। আবার বাক‍্য দেখে কর শব্দটি ক্রিয়া না বিশেষ‍্য পদ, তা-ও শনাক্ত করা হচ্ছে। ফলে বৈদ‍্যুতিন অভিধান তৈরির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রান্ত। সুকান্ত বলছিলেন, “বিপুল শব্দের পুঁজি জড়ো করার পরে শিগগিরই ঝাড়াই-বাছাই শুরু হবে। শুধু বিশল‍্যকরণী নয়, গন্ধমাদনের সব ক’টি গাছগাছালিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোন গাছের ক’টি পাতা থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত জরুরি।” এই অবস্থায় কাজ থমকে গেলে বাংলা ভাষা একটি দুর্লভ গরিমা থেকে বঞ্চিত হতে পারে, এই আশঙ্কা থাকছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

JU

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}