যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। —ফাইল চিত্র।
দায়িত্ব পেয়েছেন হাতে গুনে ৩৪ দিন হয়েছে। এর মধ্যেই বীতশ্রদ্ধ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। শনিবার প্রকাশ্যে ক্ষোভও উগরে দিলেন পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, কোনও সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। গত মাসে যাদবপুরের মেন হস্টেলে প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর ‘র্যাগিং সংস্কৃতি’ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। সেই আবহেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়া গণিতের অধ্যাপক বুদ্ধদেবের দাবি, তিনিও র্যাগিংয়ের শিকার!
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পাল্টা দাবি, উপাচার্যই ক্যাম্পাস সম্পর্কে কোনও খোঁজখবর রাখেন না। শুধু তা-ই নয়, একাংশের অভিযোগ, উপাচার্য কারও সঙ্গে পরামর্শ করছেন না। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। শুধু ঘনিষ্ঠ মহলের কথা শুনে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আফসু (কলা শাখার ছাত্র সংসদ)-র এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘‘কেউ ভিসি (উপাচার্য)-কে বাধা দিচ্ছেন না। অপমানও করেননি। বরং উনিই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। দেখা করতে চাইলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হচ্ছে। তার পর সময় চেয়ে কথা বলতে গেলে উনি কথাও বলছেন না। এ ভাবে চলতে পারে না।’’
শনিবার বুদ্ধদেব অভিযোগ করেন, তাঁকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনও নিয়ম কার্যকর করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের ভালর জন্যই কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করতে দেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্যের কথায়, ‘‘যখন-তখন আটকে রাখছে আমাদের। কোথাও বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। আমিও র্যাগিংয়ের শিকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রশাসন)-ই র্যাগিংয়ের শিকার এখানে। যাদবপুরে অরাজকতা চলছে। গণতন্ত্রের জায়গা নেই।’’
পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন বুদ্ধদেব। তাঁর অভিযোগ, ‘‘১৩ হাজারের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাত্র বার বার এসে অহেতুক ঝামেলা করছেন। যেমন অল স্টেকহোল্ডার... আগের উপাচার্য নাকি করে গিয়েছেন, সেটাই নিয়ম! অথচ আমি আমাদের ল সেল, রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কোথাও থেকে অল স্টেকহোল্ডারের কোনও স্ট্যাটিউটরি টার্ম কেউ দেখাতে পারেননি।’’
পড়ুয়ারা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উপাচার্য। বুদ্ধদেবের দাবি, চাপ নিতে না পারার জন্য ডিন অফ স্টুডেন্টসকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘আমারও পদত্যাগ দাবি করছেন। অন্যায্য দাবি করছেন পড়ুয়ারা, আমার পদত্যাগ চাইছে। এদের মূল উদ্দেশ্য, বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের ঢোকানো। এগুলো আমার ন্যায্য দাবি বলে মনে হয় না। যাঁরা করছেন, পরিকল্পনামাফিক তাঁদের এগুলো করার মতো বয়স হয়েছে বলে মনে হয় না আমার। এর পিছনে কিছু পাকা মাথা কাজ করছে বলে মনে হয়। এঁদের দিয়ে এ সব করাচ্ছে। সর্বনাশ করার চেষ্টা হচ্ছে ছাত্রদের। এটা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত। নইলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট হয়ে যাবে।’’
উপাচার্যের এ ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খোলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। ওঁকে যদি কাজে বাধা দেওয়া হয়, উনি এ কাজ করছেন কেন! এটা উপাচার্য এবং আচার্যের বিষয়। আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy