Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Jadavpur University

যৌন হেনস্থার অভিযোগে ঘিরে চাপানউতর! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত রাখা হল প্রথম বর্ষের বিভাগীয় পরীক্ষা!

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন এক ছাত্রী। সেই খবর প্রথম প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৭
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার হল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে যৌন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী। পাল্টা যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’র তরফে বলা হয়েছিল, ওই ছাত্রী সত্যি কথা বলছেন না। আসলে তিনি নিজেই নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। বৃহস্পতিবারের এই অভিযোগ এবং তার পাল্টা অভিযোগ ঘিরে যখন শুক্রবার রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ বিভাগের প্রথম বর্ষের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, যে বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া অভিযোগকারিণী ওই ছাত্রী।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন এক ছাত্রী। সেই খবর প্রথম প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। অভিযোগের কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে একটি ইমেল করেছিলেন ওই ছাত্রী। তাতে তিনি জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত অধ্যাপক তাঁর উপর পরীক্ষার খাতায় নকল করার ‘মিথ্যা দায়’ চাপিয়ে পরীক্ষার হলে সমস্ত সহপাঠীর (পুরুষ এবং মহিলা) সামনে শারীরিক তল্লাশি দিতে বাধ্য করেছেন। একই সঙ্গে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, পরের পরীক্ষার দিন তাঁকে হল থেকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে শারীরিক নির্যাতনও করেন ওই অধ্যাপক। নিজে এবং পরে দুই সিনিয়র ছাত্রকে দিয়ে যৌন প্রস্তাব দেন তাঁকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে লেখা ওই ইমেল ছাত্রী পাঠিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন শীর্ষ পদাধিকারী-সহ রাজ্য মহিলা কমিশন এবং যাদবপুর থানাতেও। সেই ইমেল হাতে এসেছিল আনন্দবাজার অনলাইনের।

এ বিষয়ে যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে, জুটার সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আসলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। ওই ছাত্রী হলে প্রতারণার মাধ্যমে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন হলের পরিদর্শক। তখনই অভিযুক্ত ওই অধ্যাপককে ডেকে আনা হয়। ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আগে কখনও এমন অভিযোগ ওঠেনি। ওই ছাত্রী সত্যি বলছেন না।’’

কিন্তু বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার রেশ সেখানেই থামেনি। যাদবপুরের এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার সরব হয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা দক্ষিণ কলকাতার ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে সমালোচনা করেন জুটা-র। তিনি লেখেন, ‘‘ছাত্রীর অভিযোগ যাচাই না করেই জুটার সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় উল্টে সেই ছাত্রীকে অভিযুক্ত করে প্রকাশ্যে যৌন নিগ্রহকারী অধ্যাপক (পূর্বতন বিভাগীয় ডিন)-এর পাশে দাঁড়ালেন। বিবৃতিও দিয়ে দিলেন।’’ অরূপ ওই পোস্টে অভিযোগ করেন, ‘‘এর আগেও হস্টেলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এই পার্থপ্রতিমকে কার্যত র‌্যাগিংয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদের হয়ে সাফাই দিতে দেখা গিয়েছিল।’’

জুটার তরফে এই ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অভিযোগ করা হয়েছিল। পাল্টা অরূপ বলেন, ‘‘জুটার সম্পাদকের এই বিবৃতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে অভিযুক্ত যদি সিপিএমের মতাদর্শ অনুসরণকারী অধ্যাপক হন তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাব একরকম, বাকিদের জন্য অন্যরকম।’’ একই সঙ্গে যাদবপুরের ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও তোলেন তিনি।

শুক্রবার এ ব্যাপারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত জানান, ‘‘ওই ছাত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা সত্যি কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই ওই অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ বিষয়ক কমিটি বা আইসিসির কাছে। তারাই তদন্ত করে দেখবে।’’ এর পাশাপাশি যে বিভাগের ছাত্রী এবং অধ্যাপক এই অভিযোগের কেন্দ্রে, সেই বিভাগের বাকি থাকা পরীক্ষাগুলিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই জুটার তরফে পার্থপ্রতিম বলেছিলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা নকল করতে গিয়ে ধরা পড়লে যদি যৌনহেনস্থার অভিযোগ করেন তবে এর পরে পরীক্ষকেরা পরীক্ষার হল পরিদর্শনে উপস্থিত থাকতে ভয় পাবেন।’’ তার পরেই শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ওই পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে সঞ্জীব প্রামাণিকের দাবি, ‘‘পরিকল্পনা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে গিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করালো জুটা।’’

অন্য দিকে, অভিযোগকারিণী ছাত্রীর সঙ্গে শুক্রবারও যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি ফোনে জানান, ‘‘আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কে, কী বলছেন, আমি জানি না। তদন্ত হলে নিশ্চয়ই সত্যিটা প্রকাশ্যে আসবে। এর বেশি আর কিছু আমার বলার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Crime Against Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE