অতীতে একাধিক ঘটনায় পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, পরিস্থিতির বদল হচ্ছে কি? ফাইল চিত্র।
কখনও জিজ্ঞাসাবাদের নামে তুলে এনে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। কখনও ‘বড়বাবু’ কথা বলতে চান বলে থানায় ডেকে বসিয়ে রাখা হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা! শৌচাগারে যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। কয়েক মাস আগে কলকাতার এক থানার ঘটনা। সেখানে হেফাজতে থাকা অভিযুক্তের কাছ থেকে সত্য উদ্ঘাটনে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এমন সব ঘটনায় পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনা হলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি।
কয়েক জন পুলিশকর্মীকে দ্রুত সাসপেন্ড করে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানালেও পরিস্থিতি যে কে সে-ই থাকে বলেই ভুক্তভোগীদের দাবি। প্রশ্ন, ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার পিছনেও কি দায়ী পুলিশের অতি সক্রিয়তা?
প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে আইনজীবীদের বড় অংশই মনে করছেন, এমন আশঙ্কার কারণ আনিসের পরিজনদের দাবি। তাঁদের দাবি, ঘটনার রাতে এক জন পুলিশের এবং তিন জন সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল। আমতা থানা থেকে এসেছে বলে তারা জানায়। এ-ও জানায়, বাগনান থানায় আনিসের নামে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলা নিয়ে তাদের উপরে প্রবল চাপ রয়েছে। তাই তারা আনিসকে নিয়ে যেতে এসেছে। এর পরেই ওই চার জন আনিসকে ধরতে বাড়ির উপরে উঠে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির দোতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় আনিসের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আনিসের নামে আমতা থানায় দু’টি এবং বাগনান থানায় একটি মামলা আছে। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার বললেন, ‘‘যে ক’টা মামলাই থাকুক না কেন, অত রাতে এ ভাবে কাউকে ধরে আনা যায়?’’ সরাসরি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন সিপি বলেন, ‘‘আনিসের মৃত্যুতে যে ভাবে পুলিশের নাম জড়িয়েছে, সেটা যথেষ্ট আতঙ্কের। খুনের অভিযোগ পাওয়ার পরেও তদন্তে পুলিশের ভূমিকা এত খারাপ কেন?’’ আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় যদিও বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে বার বার পুলিশের এমন ভূমিকাই সামনে এসেছে।’’
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার একটি ঘটে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে কালীচরণ শেঠ লেনের বাসিন্দা স্নেহময় দে-র মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবার দাবি করে, নোটিস ছাড়াই প্রৌঢ়কে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালানো হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই থানায় একই ভাবে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় রাজকুমার সাউ নামে আরও এক ব্যক্তির। এ ক্ষেত্রে পরিবারের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে রাজকুমারকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালে ভূষণ দেশমুখ নামে বড়তলা থানায় বন্দি এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল। সোনাগাছিতে একটি গুলি চলার ঘটনায় কয়েক জনের সঙ্গে ভূষণকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতে তোলার দিন চারেক আগেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। বলা হয়েছিল, পেটের গোলমালে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ভূষণের। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে অবশ্য মৃত্যুর কারণ মেলে ‘মারধর’। আনিসের সঙ্গেও এমন কিছু ঘটেছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
পাশাপাশি আইনজীবীদের দাবি, গ্রেফতার করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধি আছে। মহিলা রয়েছেন, এমন কোনও বাড়িতে বড় অপরাধীকে ধরতেও রাতে পুলিশ ঢুকতে পারে না। ঢুকতে হলে মহিলা পুলিশকর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। গুরুতর অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে তাঁকে সমন পাঠাতে হয়। যে অপরাধে সাত বছরের কম সাজা হওয়ার কথা, সে ক্ষেত্রে গ্রেফতার করতে নোটিস পাঠিয়ে ডাকতে হয়। গ্রেফতার করার আগে অবশ্যই জানাতে হবে, কী অভিযোগে ব্যক্তিকে ধরা হচ্ছে। গ্রেফতারির পরে দিতে হবে ‘অ্যারেস্ট মেমো’। গ্রেফতারির সময়ে পুলিশকর্মীর বুকে নাম এবং পদ উল্লেখ করা ব্যাজ পরাও বাধ্যতামূলক। আর এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই এই সব বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠছে। আনিসের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, এখন সেটাই দেখার।’’
ঘটনার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ দলের সদস্য এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েও কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ইতিমধ্যেই তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গাফিলতি যাঁরই থাক, কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’’ যদিও অতীতে একাধিক ঘটনার পরে পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতির বদল হচ্ছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy