—নিজস্ব চিত্র।
অরবিন্দ কেজরীবাল পেরেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পারবেন?
দূষণের নিরিখে দিল্লি বা বেজিংকে ছুঁতে পারেনি কলকাতা। দূষণ কমাতে চিন ও ভারতের রাজধানীর পথে কি হাঁটতে পারবে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী?
সরকারি তরফে এখনও তেমন কোনও ভাবনার কথা জানানো হয়নি। তবে সম্প্রতি মহানগরীর দূষণ সংক্রান্ত মামলায় এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর মতে, কলকাতার রাস্তাতেও দিল্লির মতো জোড়-বিজোড়ে গাড়ি চালানো হোক। অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে জোড় নম্বরের গাড়িগুলি এক দিন চলবে। আর এক দিন বিজো়ড় নম্বরের গা়ড়ি চলবে।
বিশ্বে দূষণের নিরিখে প্রথম দিকে থাকে বেজিং। আর এ দেশে প্রথম দিল্লি। দুই রাজধানীতেই বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ এতই বেশি যে, পথেঘাটে নাক-মুখে রুমাল বা মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখেন অনেকে। শীতকালে কুয়াশার সঙ্গে ধূলিকণা মিশে যেন কালো চাদরে ঢেকে যায় শহরগুলি। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ১৫ দিন পরীক্ষামূলক ভাবে এই জো়ড়-বিজোড় তত্ত্ব প্রয়োগ করে দূষণ কমাতে পেরেছিল দিল্লির কেজরীবাল সরকার। ২০০৮-এ অলিম্পিক্সের সময় দূষণ কমাতে ও যানজট ঠেকাতে জোড়-বিজো়ড় সংখ্যায় গাড়ি চালিয়েছিল বেজিং প্রশাসনও। এ শহরের পরিবেশকর্মীদের ইচ্ছে, এ বার একই পথে হাঁটুক ‘দিদি’র সরকারও।
দিল্লির মতো দূষণ না হলেও এ শহরেও শীতকালে গত কয়েক বছর ধোঁয়াশা দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় বেরিয়ে সমস্যা হচ্ছে লোকজনেরও। সেই সূত্রেই ‘জোড়-বিজোড়’ তত্ত্বের প্রয়োগ চাইছেন কেউ কেউ। সুভাষবাবু বলছেন, দিল্লিতে এই নিয়ম থেকে ছাড় পেয়েছিল বাস-ট্যাক্সি এবং ভিআইপি বা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের গাড়ি। সুভাষবাবু জানান, এ রাজ্যেও বাস-ট্যাক্সির মতো গণপরিবহণ, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের ছাড় দেওয়া হবে।
পরিবেশবিদদের অনেকের অবশ্য প্রশ্ন, কলকাতার ক্ষেত্রে এই ‘জোড়-বিজোড়’ পরিকল্পনা কি আদৌ কার্যকরী? তাঁদের যুক্তি, দিল্লির তুলনায় কলকাতায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক কম। এখানে দূষণের উৎস মূলত ডিজেলচালিত বড় মাপের গা়ড়ি। ফলে দিল্লি আর কলকাতার পথ এক হতে পারে না। সুভাষবাবুর পাল্টা যুক্তি, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম ঠিকই। তা-ও কিছুটা গাড়ি কমবে পথে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমলে যানবাহনের গতি বাড়বে। যানবাহনের গতি শ্লথ হলে ধোঁয়া বেশি বেরোয়। তাতে দূষণ বাড়ে। সে দিক থেকে গতি বাড়লে দূষণেও লাগাম টানা যাবে।
পাকাপাকি ভাবে ‘জোড়-বিজো়ড়’ নিয়মে গাড়ি চালানো আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, এই ‘জোড়-বিজোড়’ তত্ত্ব চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হতে পারে না। এটা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সামলাতে কাজে আসে। দিল্লিতে শীতকালে দূষণ যে মাত্রায় পৌঁছয়, তাকে সামাল দিতেই ১৫ দিন ‘জোড়-বিজোড়’ হিসেবে গাড়ি চালানো হয়েছিল। ‘‘কলকাতার ক্ষেত্রে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সাময়িক ভাবে এটা করা যেতে পারে। কিন্তু দূষণ কমাতে হলে মেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন,’’ মন্তব্য অনুমিতার। পরিবেশবিদেরা বলছেন, বেজিংয়ের ক্ষেত্রেও কিন্তু ‘জোড়-বিজোড়’ তত্ত্ব পাকাপাকি ভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। এই নিয়ম চালুর আগে গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতিও প্রয়োজন।
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, কলকাতা উন্নয়নশীল দেশের একটি মহানগর। এখানে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে দেখতে হবে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা না করে কোনও মন্তব্য করা উচিত হবে না।
পরিবহণ কর্তারাও অবশ্য মানছেন, ‘জোড়-বিজোড়’ নিয়ম পাকাপাকি ভাবে চালু করা সম্ভব নয়। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন, দিল্লির তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম ঠিকই। কিন্তু কলকাতায় রাস্তার তুলনায় গাড়ির অনুপাত বেশি। দূষণ কমাতে তাই সরকার বিকল্প পথের কথা ভাবছে। ‘জোড়-বিজোড়’ চালু না করেও গাড়ি ব্যবহার কমানো সম্ভব। সম্প্রতি লাক্সারি ট্যাক্সির পারমিট দেওয়ায় রাশ টানা হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত গাড়ির উপরে করের পরিমাণ বা়ড়ানো হতে পারে। গণপরিবহণ ব্যবস্থাকেও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, ‘‘মহানগরের মেট্রো প্রকল্পগুলি চালু হয়ে গেলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেরোনোর প্রবণতা কমবে।’’
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি সরকারের নজরে আছে। তবে বিষয়টি বিচারাধীন। আদালত জানতে চাইলে আমরা আমাদের ভাবনা সেখানে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy