পরিবেষ্টিত: বিজেপি-র অভিযানের জন্য রেলিং দিয়ে পুরভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
অতিমারির দিনেও ঠিক পুরনো কলকাতার ছবি। বিধিনিষেধের শহরেও আচমকাই দুর্গের চেহারায় পুরভবন।
পরবর্তী দৃশ্যাবলি খুবই চেনা বলা যায়! পরীক্ষায় প্রত্যাশিত অঙ্কের পর পর ধাপের মতো। ভাল ছাত্রদের যা দেখে হাত সুড়সুড় করে ওঠে। তবে কোভিড-কালীন বিধিনিষেধের আবহেও শহরের পুলিশকে যে এমন রুটিন পরীক্ষায় বসতে হবে, তা খুব প্রত্যাশিত ছিল না। সোমবার বিজেপির পুর অভিযানের সৌজন্যে ফের দেখা গেল, পুলিশ বনাম রাজনৈতিক দলে খণ্ডযুদ্ধের ছবি। একটু বাদেই আইনরক্ষকেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫৪ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন সগর্বে। সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়, যুদ্ধজয়ের ভঙ্গিতে বিজেপি নেতাদের বিবৃতিও। চুম্বকে, সব পক্ষের জন্যই ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি।
‘‘এই সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখি, সাধারণ মানুষ ছাড়া সকলেই জয়ী হন’’, বলছিলেন শহরে ফিরে আসা বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তিনি প্রতিবাদের বিপক্ষে নন। গত কয়েক বছরে কিছু ভারতীয় ছাত্রও এ দেশের সংবিধান রক্ষার দাবিতে নানা প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। কখনও ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরে, কখনও বা জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সামনে জড়ো হয়েছেন। ওই পড়ুয়ার কথায়, ‘‘প্রতিবাদের নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। সেখানে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভঙ্গিতেও প্রতিবাদের কথা বলা যায়। এ দেশেও গত কয়েক বছরে নাগরিকত্ব আইন থেকে নানা বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হয়েছে। তার পরে রাজনৈতিক দলগুলির এই ছকে-বাঁধা প্রতিবাদ বেশ ফাঁপাই মনে হয়।’’
গত শতকে দেশে প্রতিবাদ-নগরী আখ্যা পেয়েছিল কলকাতা। সেই আমলের নানা আন্দোলনের নেতারা এখন প্রবীণ। আজকের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও কেউ কেউ সে যুগের উত্তরাধিকার খুঁজে পান। কলকাতায় এখনকার মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ নিয়ে তাঁরা অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত। তবে ঢোঁক গিললেও পুরনো রাজনৈতিক অস্ত্র ভোঁতা হওয়ার বিষয়টি অনেকেই মানতে নারাজ।
প্রবীণ নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আজকের আন্দোলনকারীদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের ফারাক আছে। আজ যে দলটা মাঠে নামল, তারা তো কার্যত রাষ্ট্রশক্তিরই অংশ। সংগঠিত রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে আমাদের সময়ের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের তফাত আছে।’’ তবে অসীমবাবু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রতিবাদের প্রয়োজনীয়তায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আগে বলব, রাজ্য সরকার কোভিডের অজুহাতে গণতান্ত্রিক অধিকারকে পঙ্গু করতে চাইছে। বিজেপির আর আমাদের মতাদর্শ ভিন্ন মেরুর। তবু বলব, রাজ্য যে ভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার সঙ্কুচিত করছে, সেটা ঠিক নয়।’’
মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও নানা পর্বে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিবাদের প্রয়োজনীয়তা নেই বলব না। আগে ছিল, এখনও আছে। তবে সব প্রতিবাদ এক নয়।’’ সুব্রতবাবুর মতে, প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হওয়াই উচিত। তিনি জানালেন, অতীতে কখনও তাঁদের প্রতিবাদেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। বাস পুড়েছে। কিন্তু বাস পুড়িয়ে প্রতিবাদ তিনি সমর্থন করেন না। তবে এ দিনের প্রতিবাদের স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে তাঁরও সন্দেহ আছে। তাঁর কথায়, ‘‘স্রেফ মিডিয়ায় ছবি তোলানোর জন্য প্রতিবাদ হলে তার প্রভাব সামান্যই। কিন্তু আজকের ভারতে গ্যাস, পেট্রলের আকাশছোঁয়া দামের জন্য প্রতিবাদ হলে তার গুরুত্ব খাটো করা যাবে না।’’
এ রাজ্যে প্রতিবাদের যুগের ত্রিকালদর্শী প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু কোন প্রতিবাদের ভাষা ক্লিশে হয়েছে, সে তর্কে যেতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘যত ক্ষণ না নতুন বা আরও জোরালো প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ এ ভাবেই প্রতিবাদ চলবে। বাঙালি বহুদিন মাছ-ভাত খাচ্ছে, তাই হুট করে অন্য কিছু খেতেই হবে, এমন যুক্তি মানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy