আঁকড়ে: জীর্ণ বাড়ির গায়ে পুরসভার ‘বিপজ্জনক’ নোটিস। শনিবার, বাগমারিতে। নিজস্ব চিত্র
কেউ পুরনো বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তা ভেঙে নীচের বারান্দায় এবং সেখান থেকে রাস্তায় গিয়ে পড়েছেন! কেউ পুরনো বাড়ির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকেছেন অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে। কেউ আবার ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝোলানো বাড়িতেই প্রাণ হারাচ্ছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। টানা বৃষ্টির শহরে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের কারও হুঁশ ফেরে না বলেই অভিযোগ। তাই একাধিক পুর ছাড়ের আশ্বাসের পরেও তাঁরা বিপদ মাথায় দিন কাটানো বন্ধ করেন না। কাজে লাগে না পুলিশ-প্রশাসনের সচেতনতার প্রচারও।
এ জে সি বসু রোডে এমনই একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছিল গত মাসের বৃষ্টিতে। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় এক জনের। মৃতের পরিবার বাড়ি ছেড়ে উঠে গেলেও এখনও সেখানে থাকছেন সাত ঘর ভাড়াটে। তাঁদের এক জন নিমাই সর্দার বললেন, ‘‘বাড়ি সংস্কার মালিকের বিষয়। আমরা পুরনো ভাড়াটে। ছেড়ে যাব না, সারানোর টাকাও দেব না।’’ বাড়ির মালিক শ্যামাপদ সরকারের দাবি, ভাড়াটেদের বিবাদেই তিনি বাড়ির সংস্কার করে উঠতে পারছেন না। ফের বিপদ ঘটলে? মালিকের বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় বেরিয়েও প্রাণ যেতে পারে ধরে নিয়েই সকলে এ ভাবে রয়েছি।’’
বছরখানেক আগেই বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট এবং ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে। সেখানেও বিপজ্জনক বাড়ি আঁকড়ে রয়েছেন অকুতোভয় বাসিন্দারা। ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে আবার সেই ভেঙে পড়া বাড়ির পাশেরটিও হেলে রয়েছে অন্য বাড়ির দিকে। হেলে থাকা বাড়ির বাসিন্দা নিখিল জয়সওয়াল বলেন, ‘‘অনেক বৃষ্টি দেখলাম, ভেঙে পড়ার হলে এত দিনে মারা যেতাম। তা ছাড়া, মালিক বলেছেন, ভাড়ার টাকা না বাড়ালে বাড়ি সংস্কার হবে না। লকডাউনে খাওয়ার টাকা নেই, তো বাড়ির সংস্কার!’’ গিরিশ পার্কের কৈলাস কবিরাজ লেনে বৃহস্পতিবারই যে বাড়ির বারান্দা ভেঙে পড়েছে, সেখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দার আবার রাগ, পুলিশ কেন ওই বাড়িতে এখনই থাকতে দিচ্ছে না।
পুরসভার দাবি, বিপদ বুঝেই বছর পাঁচেক আগে পাশ হয় পুর আইন ৪১২ (এ)। এতে পুরনো বাড়ি সংস্কারে উৎসাহ দিতে একাধিক ছাড়ের ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হবে। এতে মালিককে বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’র (এফএআর) ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হবে। বাড়ির মালিক ওই কাজ করতে না পারলে সংস্থা লাগিয়ে করবে পুরসভাই। কিন্তু মালিকপক্ষকেই খরচের বিষয়টি দেখতে হবে।
এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এতে সমস্যা হল, বললেই বসবাসের অযোগ্য (কনডেমড) বলা যায় না। সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিককে সুযোগ দিতে হয়। শুনানি করতে হয়। প্রায় দু’বছর ধরে সে ভাবে শুনানিই করা যাচ্ছে না।’’ ওই পুরকর্তা জানাচ্ছেন, ১৪২ নম্বর পুর আইন এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকর। তাঁর কথায়, ‘‘আইন বলছে, ভাড়াটেরা যে জায়গা ভোগ করছেন, সেই সমপরিমাণ জায়গা ছাড় হিসেবে পেতে পারেন বাড়ির মালিক। কিন্তু সমস্যা হল, মালিককে সুবিধা দিতে গিয়ে চারপাশের ছাড়ের জায়গা কমে যাচ্ছে। দমকল আপত্তি করছে। জট পাকিয়ে যাচ্ছে।’’
একের পর এক মৃত্যুর পরেও কি জট ছাড়ানোর উপায় বার করা যাচ্ছে না? লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা মনে করেন, পুরনো বাড়ির বাসিন্দারা সচেতন না হলে কোনও ছাড়েই কিছু হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy