হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আহত। —ফাইল ছবি
অন্যান্য দিনের মতোই কেউ কাজে বেরিয়েছিলেন, কেউ বা ছেলের বায়না সামলাতে দোকানে গিয়েছিলেন মিষ্টি কিনতে। মুহূর্তের বিকট আওয়াজ আর ধোঁয়া বদলে দিল সব কিছু। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। অগ্নিদগ্ধ দেহের যন্ত্রণা প্রকাশের শক্তিও যেন অবশিষ্ট নেই। বাইরে পরিজনদের হাহাকার।
মঙ্গলবার নাগেরবাজারে বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছে আট বছরের এক বালক। গুরুতর আহত হয়েছেন ন’জন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন আরজি করে এবং দু’জন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্য এক জনের চিকিৎসা চলছে দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অল্প আহত এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যমুনা মণ্ডল। ভিতরে পিঠের মাংস ঝলসে যাওয়ার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাঁর দাদা অজিত হালদার। গুরুতর আহত অজিতবাবুকে ট্রমা সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই রক্ত দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু ঘোর কাটছে না যমুনাদেবীর। তিনি জানান, সকালে নাগেরবাজার কাজিপাড়া মোড়ে দাদাকে নামিয়ে দিয়ে অর্জুনপুরে নিজের দোকানে পৌঁছন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণের খবর পান। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব চন্দন ভুঁইয়া-পূর্ণিমা মণ্ডলের মতো কয়েক জনের পরিবারও। পূর্ণিমাদেবীর খুড়তুতো দাদা হারাধন সরকার প্রতিবন্ধী। বিস্ফোরণস্থলের কাছে মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। বিস্ফোরণে তাঁর হাতে-পায়ে আঘাত লেগেছে।
আরজি করে ভর্তির আগে আহতদের দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক জনকে ভর্তি করলেও সেই হাসপাতাল বাকিদের ‘রেফার’ করে দেয়। গুরুতর আহতেরা পরপর ভর্তি
হন আরজি করে। অজিতবাবু, হারাধনবাবু-সহ চার জনকে প্রথমে জরুরি বিভাগে, পরে ওই হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ ট্রমা কেয়ারের অন্য রোগীদের সাময়িক ভাবে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসকেরা জানান, আহতেরা দগ্ধ তো হয়েছেনই। সেই সঙ্গে তাঁদের শরীরে স্প্লিন্টার বা বোমার টুকরো লেগে তৈরি হওয়া ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। আহতদের শুশ্রূষার তদারক করতে আরজি করে হাজির হন নাগেরবাজারের স্থানীয় কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস।
আরজি কর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে চিকিৎসাধীন ছ’জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হারাধনবাবু, অজিতবাবু ছাড়াও সেখানে চিকিৎসা চলছে রাজেশ রাজভড়, শরৎ শেঠি, নবকুমার দাস, চন্দ্রশেখর গুপ্ত নামে পাঁচ জনের। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুভম দে নামে এক ব্যক্তিকে আরজি কর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমে। মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে তাঁর। আইটিইউয়ে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। মধ্যমগ্রাম বাঁকড়ার বাসিন্দা শুভম পেশায় ধূপ বিক্রেতা। ঘটনার সময়ে সীমা অ্যাপার্টমেন্টে ধূপ বিক্রি করে তিনি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
অভিযোগ, শহরের তিন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার আগেই বিস্ফোরণে গুরুতর আহত এক বালকের মৃত্যু হয়। বিভাস ঘোষ নামে আট বছরের সেই বালকের দেহের অধিকাংশ পুড়ে গিয়েছিল। প্রথমে তাকে দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বার্ন ইউনিট না-থাকায় তাকে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও একই যুক্তি দেখিয়ে তাকে পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিভাস মারা যায়। বিভাসের মা সীতা ঘোষের দেহের ২৭ শতাংশ দগ্ধ হয়ে গিয়েছে।
তাঁর চিকিৎসা চলছে এসএসকেএমে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সীতাদেবীর ত্বকের দগ্ধক্ষত অত্যন্ত গভীর। তাই তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy