অপেক্ষায়: ছেলে-বৌমার ফেরার দিন গুনছেন চন্দন নন্দী এবং মৌসুমী নন্দী। গোয়াবাগানের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
মুখে মাস্ক পরে তাঁরা বসে আছেন বিমানের ভিতরে। গভীর রাতে ভিডিয়ো কলে মেয়ে-জামাইয়ের এই ছবি দেখার পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বরাহনগরের নাথ দম্পতি।
শনিবার সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে দিল্লি পৌঁছেছেন ওই দম্পতির মেয়ে ঈপ্সিতা ও জামাই জিৎ চক্রবর্তী। দিল্লির সেনা শিবিরের বিশেষ ওয়ার্ড থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন তাঁরা। প্রবীণ দম্পতি বলছেন, ‘‘ওঁরা ভারতে ফেরায় অনেকটা নিশ্চিন্ত হলাম। এ বার ওঁদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছি।’’
বরাহনগর বাজার এলাকার বাসিন্দা নিতাই নাথের বড় মেয়ে ঈপ্সিতা। চিনের উহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করছেন ওই তরুণী এবং তাঁর স্বামী জিৎ চক্রবর্তী। গত ডিসেম্বরেই সস্ত্রীক মেয়ের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন নিতাইবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জানুয়ারিতে আমার দাদার মারা যাওয়ায় তাড়াহুড়ো করে দেশে ফিরতে হয়েছিল। কয়েক দিন পরেই খবর পেলাম উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। খুবই চিন্তায় ছিলাম।’’
ভাইরাসের আতঙ্ক কাটিয়ে শনিবার ভারতে ফেরার পরে স্বস্তিতে ওই তরুণ দম্পতি। দিল্লি থেকে ওই দিন ফোনে ঈপ্সিতা বলেন, ‘‘আমরা সুস্থ রয়েছি। কিন্তু এখানে ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে শুনছি। এখন চিন্তা একটাই, কত ক্ষণে বাড়ি যাব।’’ তিনি জানান, জানুয়ারির প্রথম দিকে উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলেও তা
ভারতীয়েরা জানতে পারেননি। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি রয়েছেন ঈপ্সিতারা। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয় দূতাবাস থেকে সব সময়ে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পারি বিশেষ বিমানে যে ক’জনকে ভারতে ফেরানো হবে তাতে আমাদের নাম রয়েছে।’’ এ দিন ঈপ্সিতার মা বাণীদেবী বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় চিনের বিমানবন্দরে পৌঁছে ওরা ভিডিয়ো কল করেছিল। রাতে বিমানে উঠে আবার ফোন করায় শান্তি পেলাম।’’
উহান সংলগ্ন শহরগুলি থেকেও ভারতীয়দের সাবধানে ফিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করেন ঈপ্সিতা ও জিৎ-এর দীর্ঘ দিনের বন্ধু স্বর্ণাভ নন্দী। তিনি থাকেন চিনের চেংডু শহরে। এখনও পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৬১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনিবার ফোনে জানান স্বর্ণাভ। জ়ুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিনের ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সমন্বয়ে চিনে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গবেষণা করছেন মানিকতলার গোয়াবাগানের ওই যুবক। মাস দেড়েক আগে বিয়ে করে স্ত্রী অনিশাকেও নিয়ে গিয়েছেন চেংডুতে। চিনের নববর্ষ উপলক্ষে গত ১৭ জানুয়ারি ছুটি পড়েছে স্বর্ণাভর কলেজে। পরিকল্পনা ছিল স্ত্রীকে কিছু জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ভাইরাস আতঙ্কে আপাতত ঘরবন্দি নবদম্পতি।
স্বর্ণাভ বলেন, ‘‘কবে ঘর থেকে বেরোতে পারব জানি না। কলেজের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে বাড়িতে মজুত খাবারও কমে আসছে।’’ অগত্যা ওই দিন স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির পাশের মার্কেট থেকে আরও ১০ দিনের আনাজ ও ডিম কিনে এনেছেন তিনি। স্বর্ণাভ জানান,
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সব সময়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মে-তে সুইজারল্যান্ডে ফেরার কথা থাকলেও ভিসার জন্য কী ভাবে, কবে আবেদন করবেন তা জানেন না তিনি।
ছেলে-বৌমার চিন্তায় উদ্বিগ্ন স্বর্ণাভর বাবা চন্দন নন্দী ও মা মৌসুমী নন্দী। প্রতিদিন কয়েক বার ভিডিয়ো কল করছেন চিনে। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা তো এখন ফিরতেও পারবে না। তাই ওঁদের গলা শুনে, ছবি দেখেই নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি।’’ অন্য দিকে, মেয়ে-জামাইকে তাড়াতাড়ি দেখার জন্য দিল্লি পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছেন নিতাইবাবুরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy