প্রতীকী ছবি।
প্রতিদিন শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ কলকাতার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য ভাবে খারাপ। সেখানকার একাধিক ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত মানুষ। অনেকেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পর পর দু’দিনে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের মন্তব্য ঘিরে বিরক্ত চিকিৎসক মহল। তাঁদের বক্তব্য, অবস্থার গুরুত্ব বুঝে এ বার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডেরই দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছিল। শুক্রবার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক তরুণীর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের কায়স্থপাড়ার বাসিন্দা মৌমিতা মুখোপাধ্যায়ের (৪০) মৃত্যু প্রসঙ্গে শুক্রবার কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘এনএস-১ পজ়িটিভ হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন মৌমিতা। মারা যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে পরিজনদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। ওঁর হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ছিল, তাই এক ঘণ্টায় তিন বার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। মৌমিতার ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট উইথ এনএস-১ পজ়িটিভ’ লেখা ছিল। আমরা সব রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাচ্ছি।’’
মৌমিতার মৃত্যু প্রসঙ্গে শনিবার অতীনের পথেই হাঁটলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই মহিলা প্রথমে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠেছিলেন। ওঁর প্লেটলেট বেড়ে হয়েছিল এক লক্ষ চল্লিশ হাজার। ভর্তি হওয়ার সময়ে প্লেটলেট কমলেও পরে বেড়ে যায়। তার পরে মৌমিতা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যান।’’
এই দুই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অবশেষে মুখ খুললেন একাধিক চিকিৎসক। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট উইথ এনএস-১ পজ়িটিভ’, এমন কিছু যে লেখা হয়ে থাকে, সেটা তাঁদের জানা নেই। চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ডেঙ্গি থেকে ‘সুস্থ হয়ে ওঠা’র অর্থ কী?
উত্তর দিচ্ছেন তাঁরাই— ‘‘জ্বর সেরে গেলে বা প্লেটলেট বেড়ে গেলেই যে ডেঙ্গির প্রভাবমুক্ত হলেন রোগী, তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গির প্রভাবে শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে, যা স্বাভাবিক হতে দেড়-দু’মাস লাগে। তাই ডেঙ্গিমুক্ত হওয়ার কয়েক দিন পরেও ঝুঁকি থেকে যায়।’’
শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডার কথায়, “শুধু প্লেটলেট কমে রক্তক্ষরণে, অর্থাৎ, ডেঙ্গি হেমারেজিক শকে মৃত্যু হচ্ছে, তেমনটা নয়। ডেঙ্গির একটি মারাত্মক বিষয় হল, ‘ম্যাক্রোফেজ় অ্যাক্টিভেশন সিনড্রোম’। এতে যকৃতের উৎসেচক মারাত্মক পরিমাণে বেড়ে যায়। আবার এলডিএইচ, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বেড়ে যায়। একই ভাবে রক্তে ফেরিটিনের মাত্রা বাড়াবাড়ি রকম বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির ফলে শরীরে ‘সাইটোকাইন ঝড়’ তৈরি হয়। তখন রোগীকে স্টেরয়েড দিতে হয়। সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে রোগীর অস্থিমজ্জায় সমস্যা দেখা দেয়। যা অত্যন্ত ঝুঁকির।”
শহরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি যে আতঙ্কের রূপ নিচ্ছে, মানছে পুরসভা। দক্ষিণ কলকাতার ১০, ১২, ১৩ নম্বর বরোর একাধিক ওয়ার্ডের অবস্থা সঙ্গিন। পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, ১৩ নম্বর বরোর ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ১২ নম্বর বরোর ১০১, ১০৬, ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত বেশি। ১০ নম্বর বরোর ৮১, ৯২, ৯৩, ৯৯ ও ১০০ নম্বর ওয়ার্ডেও ডেঙ্গি আক্রান্ত বাড়ছে। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া বেড়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ অগস্ট পর্যন্ত সেখানে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত যথাক্রমে ১১১ এবং ১৭ জন।
যদিও এই পরিসংখ্যান যে অসম্পূর্ণ, তা মানছেন পুরসভার চিকিৎসকেরা। তাঁদের অভিযোগ, অনেক আক্রান্তের নামই নথিভুক্ত নেই। কারণ, বহু বেসরকারি ল্যাব থেকে পুরসভার কাছে খবর আসে না। ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইকাউন্সিলর মধুছন্দা দেবের অভিযোগ, ‘‘ওয়ার্ডে বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ পুরসভা সরকারি ভাবে যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে আক্রান্ত অনেক কম!’’
পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘বেসরকারি পরীক্ষাগার থেকে সব তথ্য পুরসভার কাছে অনেক সময়ে আসে না। সেটাই এর কারণ।’’
মেয়রের মন্তব্য, ‘‘কিছু নাগরিকের অসহযোগিতায় এমন পরিস্থিতি। বাড়িতে ও খোলা জায়গার জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা মিলছে। পুরসভার নিয়মিত প্রচারেও এই পরিস্থিতি। তা হলে কী ভাবে এই লড়াই লড়ব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy