Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Child Labour

লকডাউন উঠতেই শহরে ভিন্‌ রাজ্যের শিশু শ্রমিকদের ভিড়

এক ধরনের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবেই ওরা কাজ করে। কোথাও ন্যূনতম মজুরিটুকুও দেওয়া হয় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

লকডাউন প্রত্যাহারের পরে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো পড়শি রাজ্য থেকে শিশু শ্রমিকদের এনে কাজ করানো হচ্ছে শহরে। গত কয়েক মাসে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে এমন বেশ কিছু শিশুকে উদ্ধার করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। উদ্ধার হওয়া শিশুদের রাখা হয়েছে শহরেরই একটি হোমে। রাজ্য শ্রম দফতর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শিশুদের তালিকা পাঠিয়ে তাদেরজন্য পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় স্তরে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থা।

শ্রম দফতরের এক কর্তা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যদিও তাঁর বক্তব্য, ‘‘শিশু শ্রমিক সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স এই উদ্ধারকাজে যুক্ত ছিল না। শিশু শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়গুলি সাধারণত ওই টাস্ক ফোর্সই দেখে। তাই এ ক্ষেত্রে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’ অন্য দিকে, জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, কলকাতা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিশুদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের (কমপ্লায়েন্স) রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই সংস্থার কর্তারা বাবুঘাট বাসস্ট্যান্ডের একটি বাস থেকে ২১ জন শিশুকে উদ্ধার করেছিলেন। জানা যায়, বিহার থেকে তাদের আনা হচ্ছিল কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় কাজ করানোর জন্য। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রাজ্য কোঅর্ডিনেটর দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউন সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পরে আরও বেশি সংখ্যায় শিশু শ্রমিকদের কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতে আনার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। মল্লিকবাজারের লোহাপট্টি এবং প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড ও বেনিয়াপুকুরের মতো বেশ কিছু এলাকায় শিশুদের খুব অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। এক ধরনের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবেই ওরা কাজ করে। কোথাও ন্যূনতম মজুরিটুকুও দেওয়া হয় না।’’

পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন মনে করে, পড়শি রাজ্যগুলিকে শিশু শ্রমিক নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। কমিশনের সদস্য যশোবন্তী শ্রীমা‌নীর কথায়, ‘‘লক্ষ করা গিয়েছে, আগে যে সব শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে, তারা প্রায় সকলেই অন্য রাজ্যের বাসিন্দা। সেই সব রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে ওই শিশুদের বাড়ি ফেরানো হয়। উদ্ধার হওয়া কোনও শিশুকে যাতে ফের কাজ করতে পাঠানো না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সেই রাজ্যের প্রশাসনের। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে বা কলকাতায় শিশু শ্রমিকের সমস্যা অনেক কম। কোনও শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করার পরে বাড়ি পাঠালেই কিন্তু কর্তব্য শেষ হয় না। সংশ্লিষ্ট জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি সেই শিশুর পরিবারের উপরে নজরদারি চালায়।’’

গত দু’মাসে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১২ জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে সেই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই শিশুদের ১০০-৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হত। খাটানো হত আট থেকে বারো ঘণ্টা। ওই ঘটনায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট লেবার (প্রহিবিশন অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট’, ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী পার্ক স্ট্রিট, চারু মার্কেট ও বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বেশির ভাগই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। বাকিরা এ রাজ্যের। গত ডিসেম্বরেও কয়েক জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দীপ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া শিশুদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত যে চিঠি তাদের দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে কলকাতা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ নিয়ে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’’ দীপ বলেন, ‘‘আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, উদ্ধার হওয়া শিশুদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে বাড়ি ফেরানো হলেও পরে তাদের পরিবার কোনও না কোনও জায়গায় আবার কাজ করতে পাঠিয়ে দেবে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাই উদ্ধার হওয়া শিশুদের জন্য আর্থিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এমনটা হলে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। আর্থিক নিরাপত্তা থাকায় তাদের আর কাজে পাঠাবে না পরিবার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Child Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy