Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

Dengue: শহরে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত

স্বাস্থ্য ভবনের উদ্বিগ্ন কর্তারা তাই এ নিয়ে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫১
Share: Save:

একা করোনায় রক্ষা নেই, এ বার দোসর ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিও!

অতিমারি পরিস্থিতিতে শীঘ্রই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা। এ বার সেই সঙ্গেই শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে ডেঙ্গিও। গত ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে জমা জলে মশার লার্ভা জন্মানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।

স্বাস্থ্য ভবনের উদ্বিগ্ন কর্তারা তাই এ নিয়ে আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছি। আগেও বৈঠক হয়েছে। ফের বৈঠক হবে।’’

প্রসঙ্গত, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় দিন পনেরো আগে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তলব করা হয়েছিল কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা কেন বাড়ছে এবং তা কমাতে পুরসভা কী করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। মশাবাহিত রোগের প্রতিকারে পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু তার পরেও কমেনি ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির প্রকোপ।

পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ সালে করোনার প্রকোপ থাকাকালীন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব সে ভাবে দেখা যায়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে (১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) শহরে মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৪২৫। ২০২০ এবং ২০২১ সালে সেই সংখ্যা হয়েছে যথাক্রমে ১৭৩৬ এবং ৪৮৫৪। ২০১৯ সালের তুলনায় গত তিন মাসে শহরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। পুর চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া প্লাসমোডিয়াম বর্গের এককোষী পরজীবীর দ্বারা সংঘটিত হয়। চার ধরনের প্লাসমোডিয়াম পরজীবী মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। এদের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম এবং প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স। প্ল্যাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের কারণে অনেক সময়ে রোগী কোমায় চলে যায়, এমনকি, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চলতি বছরে শহর কলকাতার ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বরো এলাকায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা, যার কারণ প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম পরজীবী। সেই সঙ্গে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও (২০২১ সালে ২৪০ জন) বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর।

ওই দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত কম রয়েছে। তবে যে হারে ডেঙ্গি বাড়ছে, তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হল ডেঙ্গির মরসুম। তাই আগামী কয়েক মাস পুরসভা সতর্ক না থাকলে বিপদ আসন্ন।’’

পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৪, ৫, ৬ এবং ৭ নম্বর বরো এলাকা, অর্থাৎ বড়বাজার, পোস্তা, গিরিশ পার্ক, কলেজ স্ট্রিট, শিয়ালদহ, বৌবাজার, এন্টালি, তালতলা, পার্ক সার্কাস, এসপ্লানেড, তিলজলা, তপসিয়া, পার্ক স্ট্রিট, ইএম বাইপাসের একাংশ-সহ একাধিক এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। অথচ, ২০১৯-’২০ সালের পুর বাজেটে মশাবাহিত রোগ নিরাময়ে প্রায় ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, যা পুরসভার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক। মশা মারতে ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের অধীনে ৪১টি গাড়ি সারা বছর কাজ করে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, মশা-নিধনে পুর বাজেটে মোটা টাকা বরাদ্দ করা হলেও চলতি বছরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে কেন?

কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলছেন, ‘‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শহরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই চারটি বরোর বাসিন্দা। আমরা ওই সমস্ত বরো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। আগেও এই সমস্ত বরোর বাসিন্দারা আক্রান্ত হয়েছেন।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ওই সমস্ত এলাকার লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী মানুষ ম্যালেরিয়ার ওষুধের কোর্স শেষ না করায় তাঁদের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু রয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁদের চিহ্নিত করে রক্তের নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিষেধক প্রদানের কাজও করতে হচ্ছে বলে পুরকর্মীদের উপরেও চাপ রয়েছে। তবে তাঁর আশ্বাস, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপই করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Malaria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy