Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Parking

দু’ঘণ্টার পার্কিং খরচ ২১০ টাকা, শহর জুড়ে রমরমা ব্যবসা

পুলিশের কোনও কর্তা এ বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলেও প্রায় সকলেরই ইঙ্গিত, এর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টির দিকেই।

অরাজকতা: গাড়ির গায়েই চক দিয়ে লিখে দেওয়া হচ্ছে পার্কিংয়ের সময় (বাঁ দিকে)। টাকা আদায়ের সময়ে দেওয়া হচ্ছে না পার্কিং বিল। রবিবার, গড়িয়াহাট চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অরাজকতা: গাড়ির গায়েই চক দিয়ে লিখে দেওয়া হচ্ছে পার্কিংয়ের সময় (বাঁ দিকে)। টাকা আদায়ের সময়ে দেওয়া হচ্ছে না পার্কিং বিল। রবিবার, গড়িয়াহাট চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

ক্যামাক স্ট্রিটে গাড়ি রেখে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন এক যুগল। ফিরতেই তাঁদের আটকালেন নীল শার্ট, ট্রাউজার্স পরা এক ব্যক্তি। বললেন, “আপনাদের ২১০ টাকা হয়েছে।” কিসের টাকা? ছোট চিরকুট দেখিয়ে ওই ব্যক্তির উত্তর, “এই তো সকাল সাড়ে ১০টায় গাড়ি রেখেছেন।” অবাক যুগল বললেন, “বারাসতে বাড়ি। সেখান থেকে বেলা সাড়ে বারোটায় বেরিয়ে ৩টে নাগাদ এখানে গাড়ি রেখেছি। এখন পাঁচটা। দু’ঘণ্টার পার্কিং ফি ২১০ টাকা!”

খানিক বিভ্রান্ত ওই ব্যক্তি এর পরে দাবি করেন, তাঁদের মধ্যেই কেউ সময় লিখতে ভুল করেছেন। শেষে ৬০ টাকা দিতে বললেন তিনি। কিন্তু নাছোড় যুগল পুরসভার পার্কিং লাইসেন্স ও রেট চার্ট দেখতে চাইলেন। প্রচণ্ড রেগে এ বার ওই ব্যক্তি বললেন, “দু’জন আছেন, তাই ৬০ টাকা দিতে বললাম। কিছু দেখাব না। পরে এখানে গাড়ি রাখলে পুলিশ ডেকে চাকায় কাঁটা লাগিয়ে দেব।”

লকডাউন উঠতেই শহর জুড়ে পার্কিংয়ের জন্য বেআইনি ভাবে টাকা আদায় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। পুজোর বাজার শুরু হতে সেই রমরমা বেড়েছে। কোথাও এক ঘণ্টার ফি ১০০ টাকা, কোথাও ১৫০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার ৩০ মিনিটের জন্য ৬০ টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও পুরসভার পার্কিং ফি ঘণ্টায় ৩০ টাকার বেশি নয়। মোটরবাইকের আরও কম। ভুক্তভোগীদের দাবি, হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, ধর্মতলা, মানিকতলার মতো বাজার চত্বরেই এ ভাবে টাকা আদায় বেশি চলছে।

আরও পড়ুন:মাটি ভাল, তাই নির্বিঘ্নে উড়ালপুল পেরোল ‘উর্বী’​

এ নিয়ে একাধিক অভিযোগও দায়ের হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। গত সপ্তাহে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এ নিয়ে বাহিনীকে সতর্ক হতে বললেও এখনও সে ভাবে ধরপাকড় শুরু হয়নি।

গড়িয়াহাটের কাছে দেখা গেল, গাড়ি রাখতে এলেই এক দল ব্যক্তি বলে দিচ্ছেন, “করোনার জেরে রেট বেড়েছে। আগেই বলে দিলাম।” ক্রিক রো-তে এক ব্যক্তি নিজেকে ট্র্যাফিক পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার দাবি করে বললেন, “রাস্তায় গাড়ি রাখলে ভয় আছে। কিন্তু আমি পুলিশে আছি। জায়গা পাবেন, সঙ্গে নিরাপত্তাও। পুলিশ ঝামেলা করবে না।” হাতিবাগানে এক জনের দাবি, “নিয়ম মেনে পার্কিং ব্যবসা চলে না। বড় মাথাদের গাড়ি দেখলেই বুঝতে পারি। ওদের ছাড় দিলেই ঝামেলা থাকে না। বাকিদের থেকে বেশি নিয়ে পুষিয়ে নিই।” ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে ‘পার্কিং দাদা’রা দাবি করলেন, “করোনার পরে সবেতেই ছাড় চলছে। লাইসেন্স ছাড়াই ফি নিতে বলেছেন পুরসভার খাস লোক।’’ খাস লোকটি কে? সে উত্তর অবশ্য মেলেনি।

আরও পড়ুন: পুজোর কেনাকাটার ভিড়ে উধাও দূরত্ব-বিধি!

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বছরে পার্কিং ফি থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় হয়। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে লকডাউনে। কিন্তু ফি বাড়ানো হয়নি। শুধু কন্টেনমেন্ট জ়োন আর বড়বাজারের বাইরে কিছু জায়গায় সাময়িক ভাবে পার্কিং বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। এই বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘পুরনো জায়গার পাশাপাশি নতুন জায়গায় পার্কিং ব্যবসা করতে পুরসভার লাইসেন্স নিতে হয়। পুলিশও নজরদারি চালায়। এর মধ্যে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। বেশি টাকা নেওয়া হলে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। পুরসভা থেকে কাউকে কিছু পাইয়ে দেওয়া হয় না।”

আরও পড়ুন:ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রা শুরু ফুলবাগান স্টেশন পর্যন্ত​

তা হলে বেশি পার্কিং ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠছে কেন? পুর কর্তাদের দাবি, পুলিশের কঠোর হওয়া উচিত। পুলিশের কোনও কর্তা এ বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলেও প্রায় সকলেরই ইঙ্গিত, এর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের জড়িত থাকার বিষয়টির দিকেই। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, সামনের বছরই ভোট। এখন কড়া হাতে দমন করার চেয়ে বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। পুলিশও সেই পথেই হাঁটছে। কিন্তু বুঝিয়ে কি কাজ হবে? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, “কিছু জায়গায় হানা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Parking Business Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE