সেই চকলেট বোমা । নিজস্ব চিত্র
‘‘আসুন দাদা। এ বার একটু কষ্ট হল। অনেকটা হেঁটে ঘুরপথে আমার নতুন ডেরায় আসতে হল তো!’’ এই উষ্ণ অভ্যর্থনা যিনি জানালেন, তিনি বহু দিনের পরিচিত এক বাজি ব্যবসায়ী।আদালতের নির্দেশে এ বছর বাজি বিক্রি বা ফাটানো, দুটোই নিষিদ্ধ। কিন্তু কতটা মানা হচ্ছে সেই নিষেধাজ্ঞা? সেই হদিস পেতেই ফোন করা হয়েছিল চম্পাহাটির ওই বাজির কারবারিকে। তিনি জানালেন, বাজি বাজার এ বার বসেনি। তবে বাজি অবশ্যই মিলবে। ফোনে বললেন, ‘‘হারালের চিনের মোড়ে আমার কয়েক জন ছেলে থাকবে। আমি ফোন করলে ওরা আপনাকে নতুন ডেরায় নিয়ে আসবে।’’ দিন দুয়েক আগে সকাল ৬টা নাগাদ পৌঁছনো গেল চিনের মোড়ে। সেখান থেকে একেবারে চকলেট বোমার নতুন আঁতুড়ঘরে।
মেঝেতেই রাশি রাশি চকলেট বোমা। কয়েক জন অল্পবয়সি ছেলে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরছে সেগুলি। প্রতি প্যাকেটে ১০০টি। পাশে রাখা মাদুরে বসতে বললেন ওই ব্যবসায়ী। কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ দাদা। পেটের দায়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন করে ছোট কারখানা তৈরি করে চকলেট বোমা বানাচ্ছি। এই জিনিসের চাহিদার তো শেষ নেই।
কালীপুজোর আগের সাত দিন তো বিক্রি করে কুলোতে পারতাম না। অনেকেই ফোন নম্বর নিয়ে যেতেন। এখন তাঁরাই ফোনে অর্ডার দিচ্ছেন।’’ ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আতশবাজি বন্ধে এমনিতেই প্রচুর লোকসান। চকলেট বেচে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব। এ বার আমার মতো অনেককে আশপাশের গ্রামে নতুন ডেরা তৈরি করতে হয়েছে। হাতে সময় নেই। সুতলি বেঁধেই বোমা প্যাকেটে ভরে ছাড়তে হচ্ছে। খদ্দেরের হাতে একেবারে পৌঁছে দিয়ে শান্তি।’’
আরও পডুন: বাজির দূষণ ঠেকাতে জোর সচেতনতায়
খদ্দের কেমন পাচ্ছেন? তাঁর জবাব, ‘‘কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকার বাজি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চকলেট নিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষেত্র বিশেষে আমরাও পৌঁছে দিচ্ছি। তবে এ বার চকলেটের দাম অনেক বেশি। ১০০ পিসের প্যাকেট দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকায় বিক্রি করছি। কেউ দরদামও করছেন না। শুধু জায়গা মতো পৌঁছে দিতে হবে।’’
চকলেট এখন ‘হট কেক’। তৈরিতে ঝুঁকি নেই। জায়গা ও সময়ও লাগে কম। দক্ষ কারিগরের দরকার পড়ে না। তৈরির খরচ কম। বিক্রি বেশি। আদালতের নির্দেশের পরে সেই কারণেই চম্পাহাটির কয়েকশো ব্যবসায়ী কারখানা ও দোকানের ঝাঁপ ফেলে আশপাশের এলাকায় চকলেট বোমা তৈরি করছেন।
আরও পডুন:
কিন্তু পুলিশ? ওই ব্যবসায়ীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কত পুলিশ আছে যে, আশপাশের সব গ্রামে টহল দেবে? মূল রাস্তায় নাকা তল্লাশি হচ্ছে। অলিগলিতে কে ধরবে? সেখান দিয়েই তো বারুইপুর পৌঁছে যাওয়া যায়। আর বারুইপুর থেকে কলকাতা বা জেলার অন্য কোথাও পৌঁছে যাওয়াটা কোনও ব্যাপারই নয়। আপনিও চাইলে দু’প্যাকেট চকলেট নিয়ে যেতে পারবেন। রাস্তায় ধরে ধরে তল্লাশি করবে? অত পুলিশ কোথায়?’’
৫০০ টাকার নোট হাতে দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করা হল, তিন প্যাকেট চকলেট কালীপুজোর আগে পৌঁছে দিতে হবে। পারবেন? ঠিকানা পরে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে নিচু স্বরে বললেন, ‘‘আদালত দুর্গাপুজো নিয়ে কড়াকড়ি করতেই বুঝে যাই, বাজির ব্যবসাতেও কোপ পড়বে। তাই লক্ষ্মীপুজোর আগেই আতশবাজি ও চকলেট বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন তো টাটকা অর্ডার অনুযায়ী বাজি তৈরি হচ্ছে।’’ এগিয়ে দিতে এসে বললেন, ‘‘প্রতি বছর যেমন চকলেট ফাটে, এ বছরও তেমনই ফাটবে। দেখবেন। ছাদে লোকে চরকি ফাটাবে। ধরবে কে। চরকির চাহিদাও এ বার খুব। যে পরিমাণ অর্ডার আসছে, তা ফাটলে সবার মুখ পুড়বে।’’
আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চম্পাহাটিতে চকলেট বোমা তৈরি হচ্ছে কী ভাবে? বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘চম্পাহাটি-সহ আশপাশের এলাকায় নজরদারি চলছে। প্রচুর চকলেট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কয়েক জন গ্রেফতারও হয়েছেন। আশপাশের গ্রামেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’ গলিপথে বাজি পাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘নানা সূত্র মারফত খবর নিয়ে অলিগলিতেও নজরদারি চালিয়ে কয়েক জনকে ধরা হয়েছে।’’ ব্যবসায়ীরা যে বলছেন, অন্যান্য বছরের মতোই বাজি ফাটবে? পুলিশকর্তার জবাব, ‘‘ওই দিন সর্বত্র নজরদারি চলবে। পুলিশ খবর পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’যেখানে চকলেট বোমা তৈরির খবরই পুলিশের কাছে পৌঁছচ্ছে না, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ এত জোর দিচ্ছে কী ভাবে? সেই উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy