অরক্ষিত: পড়ুয়াকে হেলমেট না পরিয়েই তাকে নিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
সদ্য স্কুল ছুটি হয়েছে। স্কুলের বাইরের ফুটপাতে অভিভাবকদের ভিড় রাস্তায় নেমে এসেছে। স্কুল থেকে বেরোনো পড়ুয়াদের নিয়ে তাঁদের কেউ রাস্তা পেরিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগোচ্ছেন, কেউ আবার রাস্তার দু’দিক না দেখেই ছুটছেন বাস ধরতে। ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ হওয়ার অপেক্ষা করা তো দূর, অনেক সময়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের বারণেরও তোয়াক্কা করছেন না তাঁরা। কার্যত তাঁদের সামনে দিয়েই চলছে পড়ুয়াদের হাত ধরে অভিভাবকদের ঝুঁকির পারাপার।
এমন বিপজ্জনক দৃশ্য দেখা গেল সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে, একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে। শুধু সেখানেই নয়, স্কুল ছুটি অথবা শুরুর সময়ে এই প্রবণতা কার্যত শহরের সর্বত্র। বেহালার দুর্ঘটনার পরেও যার বদল হয়নি। যদিও মাসখানেক আগে বেহালা চৌরাস্তার কাছে একটি স্কুলের সামনে দুর্ঘটনায় এক পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সচেতনতায় জোর দিয়েছিল লালবাজার। স্কুলের সামনে রাস্তা পারাপারের সময়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল যাতে সকলে মেনে চলেন, সেই বিষয়েও জোর দেওয়া হয়। এমনকি, রাস্তা পারাপারের সময়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা যাতে ‘জ়েব্রা ক্রসিং’ ব্যবহার করেন, সেই ব্যাপারেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের তরফে। কিন্তু তার পরেও যে বিপজ্জনক পারাপারের অভ্যাস বদলায়নি, সেটাই দেখা গেল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের একাধিক স্কুল ঘুরে। বদল হয়নি পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাবেরও। কোথাও কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা নজর রাখার বদলে গল্পে ব্যস্ত, কোথাও আবার ব্যস্ত গাড়ির জট কাটাতে। কিন্তু পড়ুয়াদের বিপজ্জনক পারাপার কে দেখবেন? কেউ উত্তর দিলেন, ‘‘দুটোই তো চোখ। সব দিকে কী করে দেখব!’’ কেউ আবার বললেন, ‘‘অনেক বলা হয়েছে! তার পরেও কেউ শোধরায় না। সব কাজই কি পুলিশ করবে?’’
অভিভাবকদের মধ্যেও যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে পার্ক সার্কাস, রুবি থেকে শুরু করে উত্তরের শ্যামবাজার, গিরিশ পার্ক সংলগ্ন একাধিক স্কুল চত্বরে। স্কুল ছুটির পরে দরগা রোডের সামনে খুদে পড়ুয়ার হাত ধরে, ব্যাগ কাঁধে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন এক অভিভাবক। প্রশ্ন করতেই হেসে বললেন, ‘‘একটু তাড়া ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হয়ে গেলাম।’’ একই সুর সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ পেরোনো অভিভাবক স্বপ্না পাত্রের গলাতেও। যদিও তিনি স্বীকার করলেন, ‘‘এটা ভুল। তবে কলকাতায় থাকলে এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হয়। কোনও দিন তো কিছু হয়নি।’’ বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পারাপারের দৃশ্য দেখা গেল শ্যামবাজারের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে একটি স্কুলের সামনেও। যদিও অভিভাবকেরা পুলিশের দিকেই আঙুল তুললেন। এক অভিভাবক শ্যামলেন্দু পাল বললেন, ‘‘পুলিশ থাকলে তা-ও গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তা পার হতে সাহায্য করে। কিন্তু এখানে তো অধিকাংশ সময়ে পুলিশই থাকে না।’’
পুলিশের এই ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরের সচেতন নাগরিকদের একাংশও। শুধু সচেতনতা নয়, প্রয়োজনে কড়া হাতে আইন ভাঙার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে দাবি করছেন তাঁরা। তবে লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘যে কোনও ধরনের বিধি ভাঙার ক্ষেত্রেই পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীও স্কুলের সামনে রাখা হয়। পড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে অভিভাবক নিজেই যদি ট্র্যাফিক আইন ভাঙেন, তা হলে পড়ুয়াটিও সেটাই শিখবে। তাই পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy