তৈরি হতে লাগবে ১৫ মিনিট। তার পরে এক সঙ্গে রওনা হবেন ৫০ জন। মিনিট কুড়ি পরে আরও ৫০।
ঢাকার গুলশনের রেস্তোরাঁয় শুক্রবার যা ঘটেছে, কলকাতায় যদি তেমন অবাঞ্ছিত কোনও ঘটনা ঘটে, এ ভাবেই ছুটে যাবেন পুলিশের ১০০ জন কমান্ডো। হেস্টিংস-এর ‘স্পেশালাইজড ফোর্স ট্রেনিং সেন্টার’-এ তাঁরা সদা তৈরি বলে দাবি লালবাজারের কর্তাদের।
কলকাতার কমান্ডো বাহিনী কতটা তৈরি, ঢাকায় হামলার প্রেক্ষিতে সেই তথ্য খুঁজতে গিয়ে যা জানা গিয়েছে, তা যথেষ্ট ইতিবাচক। এমনকী, সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে পণবন্দিদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে সব চেয়ে দক্ষ বলে যাদের ধরা হয়, সেই ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড বা এনএসজি-র ‘হাব’ও প্রস্তুত শহরের অদূরে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের কাছে বাদুতে। মুম্বইয়ে ২৬/১১-র জঙ্গি হামলার সময়ে কমান্ডোদের উড়িয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল এনএসজি-র সদর ঘাঁটি, হরিয়ানার মানেসর থেকে। তাতে সময় নষ্ট হয়েছিল। সেই হামলা থেকে শিক্ষা নিয়েই দেশের বড় বড় শহর বা তার উপকণ্ঠে এনএসজি হাব গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে ওই ধরনের পরিস্থিতি আবার কখনও তৈরি হলে এনএসজি-র পৌঁছতে বিলম্ব না হয়।
যদিও কলকাতা পুলিশ এবং এনএসজি হিসেব কষে দেখেছে, শহরের কোথাও যদি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় বাদু থেকে এনএসজি-র পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, যেগুলো সামলে তবেই বেরোতে পারবে এনএসজি। তার পরে এতটা রাস্তা। যানজটও থাকতে পারে। তাই প্রথম ধাক্কাটা আমাদের কমান্ডোদেরই সামলাতে হবে।’’
ধাক্কা সামলাতে কতটা উপযুক্ত কলকাতা পুলিশের কমান্ডোরা?
লালবাজার সূত্রে খবর, হরিয়ানার মানেসরে এনএসজি-র কাছে তিন মাস, হাজারিবাগে বিএসএফের কাছে তিন মাস ও মুসৌরিতে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের কাছে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কমান্ডোরা। সঙ্গে হরিয়ানার মানেসরে এনএসজি-র ন্যাশনাল বম্ব ডেটা সেন্টারে বোমার আদ্যোপান্ত জানতেও দেড় মাসের প্রশিক্ষণ। মাঝেমধ্যেই রাত ১২টার পরে কলকাতার মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গে এনএসজি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে জঙ্গি হামলার মোকাবিলার মহড়া দেয় এই কমান্ডো বাহিনী।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, কমান্ডোদের শারীরিক ভাবে চূড়ান্ত সহনশীল করে তুলতে দেড় মাসে এক দিন পিঠে ১৮ কেজির বোঝা দিয়ে বিমানবন্দর থেকে হেস্টিংস, এই ৩০ কিমি পথ ছোটানো হয়। অন্য ধরনের শারীরিক কসরত, নিয়মিত চাঁদমারি অনুশীলন তো আছেই। খালি হাতেও শত্রুকে ঘায়েল করতে পারেন তাঁরা।
কলকাতা পুলিশের কমান্ডো মোট ১৬০ জন। তাঁদের মধ্যে বাঙালি ১১০। এঁদেরই এক জন কর্নাটকের বেলগাঁওয়ে ‘ঘাতক কমান্ডো’ প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেটিকে কমান্ডো প্রশিক্ষণের কঠিনতম বলে ধরা হয়। ৩৫ দিনের ওই প্রশিক্ষণে দিনে মাত্র এক ঘণ্টা বিশ্রামের সময়।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটুকু বলতে পারি, যতক্ষণ প্রাণ থাকবে, আমাদের কমান্ডোরা হামলাকারীদের কোনও ঘেরাটোপে আটকে রেখে দেবেন। কোনওমতেই বেরোতে দেবেন না। ২৬/১১-র রাতে জঙ্গিরা যেমন চার দিকে ছড়িয়ে গিয়ে একের পর এক পুলিশকে হত্যা করে, তা আর হবে না। এমনই দক্ষ ওরা।’’
যদি জঙ্গি হামলার খবর আসে, কী কী সঙ্গে নিয়ে বেরোবেন কমান্ডোরা?
পুলিশকর্তারা জানান, এক-এক জন কমান্ডোর কাছে চার রকম অস্ত্র থাকবে। এ কে-৪৭ রাইফেল, নাইন এম এম বোরের একটি গ্লক বা ব্রাউনিং পিস্তল, একটি কমান্ডো নাইফ, কিছু সাউন্ড ও কিছু গ্যাস গ্রেনেড। বিস্ফোরণ ঘটানোর গ্রেনেড বা থার্টি সিক্স হ্যান্ড গ্রেনেড এনএসজি-র হাতে থাকলেও কলকাতা পুলিশের কমান্ডোদের কাছে নেই। তবে পুলিশকর্তাদের আশ্বাস, সাউন্ড গ্রেনেড ফাটার বিকট শব্দই সন্ত্রাসবাদীকে ১০ সেকেন্ডের জন্য বিহ্বল করে দেবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন কমান্ডোরা।
পাশাপাশি, প্রত্যেক কমান্ডোর মাথায় থাকবে পটকা বা বিশেষ শিরস্ত্রাণ। গায়ে ন’কেজির বুলেট-রোধী ভেস্ট। সঙ্গে দড়ি ও সেই দড়ি আটকাতে কোমরে ক্যারাবিনার। আরও থাকবে বেতার যন্ত্র, টর্চ এবং আয়না (বাঁকে কাজে আসবে প্রতিপক্ষকে দেখতে)। জখম হলে ক্ষতস্থান বাঁধার জন্য থাকবে রুমাল। এ ছাড়াও, তাঁদের সঙ্গে রাখা থাকবে জল এবং কিছু কাজু-কিসমিস-বিস্কুট-চকোলেট।
তবে স্বল্প দূরত্বে থাকা শত্রুকে ঘায়েল করতে বেশি উপযোগী আগ্নেয়াস্ত্র, এম পি ফাইভ তিন বছর ধরে চাওয়া হলেও, কমান্ডোদের হাতে একটিও আসেনি। নেই লেজার-চালিত, রাতের অন্ধকারে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার মতো সরঞ্জাম বা নাইট ভিশন-সহ আগ্নেয়াস্ত্র। হাতে আসেনি গ্যাস মুখোশও। যা এখন খুবই জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy