আইন, সে এক তামাশা মাত্র!
সকাল সকাল হায়দরাবাদের কাছে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের খবর পেয়ে বহু দিন আগে পড়া এই লাইনটাই মাথায় ঘুরছে। কলকাতায় তো বটেই, এ রাজ্যের কোনও জায়গাতেই এমন এনকাউন্টার হয়েছে বলে শুনিনি। নকশাল আমলে কিছু এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটলেও ব্যক্তিগত ভাবে সেগুলিকে সমর্থন করি না। আমার মতো সারা জীবন উর্দিতে কাটানো কোনও মানুষের পক্ষে এই ধরনের এনকাউন্টার সমর্থন করা সম্ভবও নয়। কিন্তু হায়দরাবাদের ঘটনা একেবারে আলাদা। উর্দি পরে থাকলে কী বলতাম, জানি না। তবে আজ এই এনকাউন্টারকে সমর্থনই করতে ইচ্ছে করছে। অন্তত আমার দেশের মেয়েরা আজ বড় আনন্দ পেয়েছেন বলেই মনে হয়।
হায়দরাবাদের ঘটনাকে সমর্থনের আরও একটি কারণ, দেশের প্রলম্বিত বিচার ব্যবস্থাকে সহ্য না হওয়া। চাকরিজীবনে খুব কাছ থেকে এই বিচার প্রক্রিয়া দেখেছি। নানা রিপোর্টে দেখি, এ দেশে গণধর্ষণের অভিযোগ নাকি মাত্র ৩০ হাজার! ব্যক্তিগত ভাবে জানি, আদতে কী হয়। অভিযোগ হয়তো তিন লক্ষেরও বেশি। বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরই হয় না। হলেও অভিযোগকারিণীকে এমন সব প্রশ্ন করা হয়, যে তাঁর মনে হতে বাধ্য, অভিযোগ না করলেই ভাল হত। বিচার শেষে সাজাই বা পান কত জন? সংখ্যাটা হয়তো দুই শতাংশেরও বেশি নয়। দ্রুত বিচার করে সাজা নিশ্চিত করতে পারলে এই এনকাউন্টার নিয়ে কি এত আনন্দ দেখা যেত? সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, এই এনকাউন্টার দেখে আনন্দ পাওয়ার ছবি কি প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই আরও স্পষ্ট করে তুলছে না?
এ-ও বা ভুলি কী করে যে, এনকাউন্টার না করেই ধর্ষণকারীর কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম। আমি কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন ফুলবাগান থানায় এক ফুটপাতবাসিনীকে তুলে এনে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। কথা দিয়েছিলাম, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার করিয়ে দোষীর কঠোর সাজার ব্যবস্থা করব। যে পুলিশকর্মী বিচার শেষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, যত দূর জানি, তিনি এখনও জেলে। পুলিশ যে সব ক্ষেত্রেই দারুণ কাজ করে, তা-ও বলতে পারি না। হায়দরাবাদের ঘটনাতেই তো শুনছিলাম, পুলিশ প্রথমে অভিযোগই নিতে চায়নি। পরিবারকে ঘুরতে হয়েছে থানায় থানায়। তবে এটুকু বলতে পারি, যে সমাজ রাত ১০টার পরে মেয়েরা বাইরে থাকলেই ধরে নেয়, সেই মেয়ের ধর্ষিতা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে এমন কিছু একটাই প্রত্যাশিত ছিল।
অনেকেই হয়তো ভাববেন, যিনি পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন বিরোধীদের মহাকরণ অভিযানের মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল, তিনি তো এই এনকাউন্টারকে সমর্থনই করবেন। আমি বলব, দু’টো ঘটনা একেবারেই এক নয়। সে দিন কয়েক লক্ষ মানুষের সমাবেশ ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে মহাকরণ দখলের ডাক দিচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, তা হলেই সরকারের পতন ঘটবে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। এক সময়ে এক যুব নেতার নির্দেশে উদ্বুদ্ধ বেশ কিছু মানুষ পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ছুটে মহাকরণের প্রবেশদ্বার দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই উন্মত্ত জনতাকে রুখতে মহাকরণে প্রহরারত স্বল্প সংখ্যক পুলিশের গুলি চালানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy