লড়াই: প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পোস্টার। বৃহস্পতিবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ছ’জন পড়ুয়ার দশ দিন অনশনেও হুঁশ ফিরল না কলেজ কর্তৃপক্ষের!
পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়ায় বরং বুধবার রাত থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন আরও দশ প়ড়ুয়া। বৃহস্পতিবার তাঁদের সমর্থনে ক্লাস বয়কট করলেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের অধিকাংশ পড়ুয়া। সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন দেড়শো ইন্টার্ন। তাতে শামিল হয়েছেন কয়েক জন হাউস স্টাফও। সব মিলিয়ে কার্যত অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এ দিন রাত দশটা নাগাদ প্রায় দশটি থানার পুলিশের বিশাল বাহিনী হাসপাতাল চত্বরে ঢোকে। আধ ঘণ্টা পরে সেখান থেকে তারা বেরিয়েও যায়। কেন পুলিশবাহিনী এল, কেনই বা বেরিয়ে গেল, সে প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
এক টানা এত দিন ধরে মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়াদের অনশন নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১১ সালে এই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে সমস্যায় কয়েক জন পড়ুয়া অনশনে বসেছিলেন। সে বার অভিযোগ ছিল, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের হেনস্থা করেছে। তারই প্রতিবাদে অনশনে বসেছিলেন পড়ুয়ারা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল। এ বার প্রথম থেকেই কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবে সমস্যা জটিল হয়েছে, বলছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষও।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান বার করতে হবে। প্রথম থেকে আলোচনা হলে এই পরিস্থিতি হত না।’’ তিনি জানান, পড়ুয়ারা আবেগে চলেন। তাঁদের বোঝানোর দায়িত্ব শিক্ষকদের। তাঁদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করলে সমাধান বেরিয়ে আসতে বাধ্য। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে ছাত্রদের দাবি মানা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে আলোচনায় বসে তাঁদের বোঝাতে হবে। না হলে পরিস্থিতি জটিল হবেই।’’ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রে়ডিয়োলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি রোগী পরিষেবাকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরা আবেগে চলেন। তাঁদের বোঝানোর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান খোঁজা জরুরি।’’
আলোচনায় বসা দূর অস্ত্, যিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন, সেই অধ্যক্ষ এখন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। যদিও এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, রক্তচাপ ওঠা-নামা ছাড়া তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। এ দিকে, অনশনে অনড় গুরুতর অসুস্থ দুই ছাত্র পড়ে রয়েছেন ওই হাসপাতাল চত্বরেই। হস্টেলের ভাঙা ছাদ, ঘর না জোটায় বারান্দায় থেকে পড়াশোনা চালানোর মতো অভিযোগ নিয়ে যখন ছাত্রেরা অনশন চালাচ্ছেন, তখন অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্র সোমবার অসুস্থ হয়ে প্রথমে হাসপাতালেরই কার্ডিয়োলজি বিভাগে ভর্তি হন। ওই রাতে তাঁকে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই এমবিবিএস কোর্সের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের একাংশ হস্টেলের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন। অধ্যক্ষের ঘরের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি ছিল তারই অঙ্গ। সেই সময়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের হেনস্থা করে। তারই প্রতিবাদে এবং হস্টেলের দাবিতে অনশনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তার পরেও কর্তৃপক্ষের তরফে আলোচনার কোনও চেষ্টা হয়নি বলেই অভিযোগ।
বুধবার রাতে কলেজ কাউন্সিলের মিটিংয়ে হস্টেল নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও সিদ্ধান্ত না জানানোয় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়। চিকিৎসক মহলের একাংশ ও সাধারণ মানুষের ধিক্কারের জেরে খানিকটা চাপে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও। এ দিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘‘শিক্ষা-প্রশাসন অমানবিক ভাবে ছাত্রদের দাবি অবজ্ঞার চোখে দেখছে। অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে তা মীমাংসা করা হোক।’’ সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং সুপার তিন বার মিটিংয়ে বসেন। যদিও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রামানুজ সিংহ বলেন, ‘‘আলোচনা চালাচ্ছি। দেখা যাক কত দ্রুত কী করা যায়।’’
এ দিকে হাসপাতালের উত্তাল পরিস্থিতি এবং অনশনরত পড়ুয়াদের অবস্থা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy