Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নতুন বছরের প্রাক্কালেও নায়ক ‘বাবু’

মাত্র ছ’দিন আগে বড়দিনের শহরে সকাল থেকেই নেমেছিল জনতার ঢল।

মুহূর্ত: বছরের শেষ দিনে চিড়িয়াখানায় বাবুর ঘেরাটোপের সামনে ভিড়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মুহূর্ত: বছরের শেষ দিনে চিড়িয়াখানায় বাবুর ঘেরাটোপের সামনে ভিড়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৪
Share: Save:

বছরের শেষ সূর্যাস্ত হতেই নেমে এল ভিড়!

মাত্র ছ’দিন আগে বড়দিনের শহরে সকাল থেকেই নেমেছিল জনতার ঢল। বছরের শেষ দিনে, মঙ্গলবার সকাল থেকে ততটা ভিড় না থাকলেও রাত বাড়তেই তিলোত্তমায় ঢল নেমেছে আট থেকে আশির। যাঁরা সকলেই নিজের মতো করে পরিজন কিংবা সঙ্গীর হাতে-হাত মিলিয়ে অপেক্ষা করেছেন কত ক্ষণে রাত বারোটার ঘণ্টা বাজবে। যখন গলা ছেড়ে সকলে বলবেন, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’।

তবে সকলেই যে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন তেমনও নয়। অনেকেই এ দিন সকাল থেকে পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিলেন শীতে শহরের আমেজ নিতে। বছরের শেষ দিনের ছুটির মেজাজে গা ভাসিয়ে কেউ পৌঁছে গিয়েছিলেন চিড়িয়াখানা, জাদুঘরে। কেউ আবার ভিক্টোরিয়া ঘুরে গড়ের মাঠে বসে চিনেবাদাম কিংবা চিপ্‌সের ঠোঙা হাতে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখেছেন। মূল শহর ছেড়ে কেউ পৌঁছে গিয়েছেন একটু অন্য দিকে। নিউ টাউনের ইকো পার্ক থেকে সল্টলেকের নিকো পার্ক, নলবন, বনবিতানেও ভিড় জমিয়ে ছিলেন অনেকে।

সব মিলিয়ে পুরোদস্তুর পিকনিকের মেজাজ। যেমন, ইকো পার্কের রেস্তরাঁ থেকে লুচি-মাংসে ভোজন সারলেন পিকনিক করতে হাজির হওয়া বালিগঞ্জের সুদীপ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘বছরের শেষ দিন বেরোব অথচ জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে না! তা কী হয়?’’ আবার নলবনের ফুড পার্কেই গুছিয়ে দুপুরের বাঙালি খাবার খেয়ে বছরের শেষ দিন কাটালেন অনেকে।

তবে ২৫ ডিসেম্বরের ভিড়কে টেক্কা দিতে পারেনি বছর শেষের শহর। বড়দিনে প্রায় ৮০ হাজার দর্শক চিড়িয়াখানায় এলেও মঙ্গলবার সেই সংখ্যা ছিল অর্ধেক। এ দিন জাদুঘরে এসেছিলেন মাত্র সাত হাজার দর্শক! বড়দিনে সেই সংখ্যা ছিল সাড়ে ১১ হাজার। বছরের শেষ দিনে ভিক্টোরিয়ায় দর্শক সংখ্যা হয় প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার, বড়দিনে ছিল প্রায় ৩০ হাজার। তুলনায় অবশ্য এ দিন ভিড় বেশি ছিল নিউ টাউন এবং বিধাননগরের বিনোদন কেন্দ্রগুলিতে। রাত বাড়তেই সেখানকার বিভিন্ন রেস্তরাঁয় ভিড় বেড়েছে। পাশাপাশি বিধাননগর, নিউ টাউনের মেলাগুলিতেও যথেষ্ট ভিড় ছিল।

লোকজন অবশ্য বলছেন, ‘‘অফিস ছুটি না থাকায় অনেকেই সকালে বেরোতে পারেননি। শহরে বর্ষবরণের ভিড়টা বাড়বে রাত থেকে।’’ সে কথাই মিলতে শুরু করেছিল সন্ধ্যা নামতেই। আলো ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন নবীন থেকে প্রবীণেরা। অফিস ছুটির পরে সটান পার্ক স্ট্রিটে এসে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে যোগ দিলেন দীপ গোস্বামী। তাঁর কথায়, ‘‘চিড়িয়াখানা, জাদুঘর তো যে কোনও ছুটির দিনে যাওয়া যাবে। কিন্তু বর্ষবরণের পার্ক স্ট্রিট মিস করা যাবে না।’’

যেমন এ দিন চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি বাবুর বিবিধ কেরামতি দেখার সুযোগ হারাতে চাইছিলেন না আট থেকে আশি। পৌষের দুপুরে বাবুও অবশ্য ছিল তার নিজস্ব মেজাজে। কখনও গাছের গুঁড়ির আড়ালে লুকোচুরি খেলেছে, কখনও আবার নিজের খাঁচার বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে চুপ করে বসে থেকেছে। সাত বছরের ছেলে মহম্মদ জুনেদ আজহারিকে রীতিমতো কোলে তুলে বাবুকে দেখানোর চেষ্টা করছিলেন মা ইরাম ফতেমা। শিম্পাঞ্জির হাততালি দেখে তখন হেসে কুটোপাটি খাচ্ছে জুনেদ। তা দেখে ইরাম বললেন, ‘‘নতুন বছরে আমাদের বাংলায় যেন সকলে এমনই প্রাণখোলা ও হাসিখুশি থাকেন।’’

নতুন বছরেও শহরটা এমনই থাকুক বলে মত রৌরকেলার বাসিন্দা রাজ নন্দার। শীতের ছুটিতে সপরিবার বেড়াতে এসে ভিক্টোরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে রাজ বললেন, ‘‘কলকাতা সব সময়ই আমাদের প্রিয় শহর। শান্ত এই শহরটায় মাঝেমধ্যেই ছুটিতে বেড়াতে আসি।’’

উল্টো দিকের গড়ের মাঠে তখন অন্ধকার নেমেছে। একে একে জ্বলে উঠছে রাজপথের রকমারি আলো। পৌষের সন্ধ্যার হিমেল পরশ বুঝিয়ে দিচ্ছিল শহর তৈরি বর্ষবরণে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy