প্রতীকী ছবি।
এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বোর্ড লাগিয়ে ‘গ্রাহক সেবা কেন্দ্র’ খুলে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠল বেহালায়। অভিযোগ, গ্রাহককে দিয়ে জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলত শর্মিতা শাহ নামে এক মহিলা। শুক্রবার রাতে শর্মিতাকে মারধর করে পর্ণশ্রী থানায় নিয়ে যান বেহালার শান্তিপল্লি এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা। পুলিশের সামনে ওই মহিলা টাকা ফেরতের কথা বলে প্রত্যেক গ্রাহককে চেক লিখে দিলেও পরে জানা যায়, সেই অ্যাকাউন্টে কোনও টাকাই নেই!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চৈতালি বেগম নামে এক মহিলার দাবি, তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসা করানোর জন্য মায়ের সূত্রে ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সে জন্যই গত ২৮ জুন পাড়ার ওই গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। ওই কেন্দ্রের মালিক শর্মিতা তাঁকে জানিয়ে দেয়, চেক জমা দেওয়ার পরে চাইলেই তিনি টাকা তুলতে পারবেন না। টাকা নিতে হবে তার মাধ্যমেই।
চৈতালির অভিযোগ, ‘‘গত ২ জুলাই আমি চেক জমা দিই। এর পরে প্রতিদিন ঘুরিয়েছে, টাকা দেয়নি। গেলেই বলত, আঙুলের ছাপ দাও। দেখি, টাকাটা অ্যাকাউন্টে পড়েছে কি না। ব্যাঙ্কের বইও আমার হাতে দিত না।’’ দীর্ঘদিন টাকা না পেয়ে এর পরে প্রতিবেশীদের নিয়ে ওই সেবা কেন্দ্রে গিয়ে কোনও মতে ব্যাঙ্কের বই আদায় করেন চৈতালি। তাঁর দাবি, ব্যাঙ্কের বইয়ে দেখা যায়, ২০ হাজার টাকা করে তিন দফায় মোট ৬০ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাকি ৬০ হাজার টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে সরাসরি। এর পরেই শর্মিতাকে মারধর করে পর্ণশ্রী থানায় নিয়ে যান প্রতিবেশীরা। সেখানে আরও অনেকে গিয়ে একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি করেন।
সেবা কেন্দ্রে কী করবেন গ্রাহক
• নিজের বায়োমেট্রিক ব্যবহারের দায়িত্ব অন্য কাউকে নয়
• টাকা লেনদেনের প্রামাণ্য কাগজ চেয়ে নিন
• অ্যাকাউন্ট খোলার পরে ছ’মাসে অন্তত এক বার ব্যাঙ্কে যান
• লেনদেন সংক্রান্ত সমস্যা হলে দ্রুত ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করুন
ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সহজলভ্য করতে শহরে এমনই বেশ কয়েকটি গ্রাহক সেবা কেন্দ্র খুলেছে কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। ‘বিজ়নেস করেসপন্ডেন্ট’ হিসেবে যে কেউ সেবা কেন্দ্র খোলার আবেদন জানাতে পারেন। ‘কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট’ নামে ওই সমস্ত কিয়স্কের সঙ্গে কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট শাখার যোগাযোগ থাকে। অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা তোলা বা জমা করা, অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো এবং ঋণেরও আবেদন করা যায় ওই সমস্ত সেবা কেন্দ্র থেকে। তবে এক দফায় ২০ হাজারের বেশি টাকার লেনদেন করা যায় না। কোনও লেনদেনই গ্রাহকের বায়োমেট্রিক ছাড়া সম্ভব নয়।
ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, অ্যাকাউন্টে টাকা পড়েছে কি না, তা দেখার নাম করে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক নিয়ে তাঁর সামনেই টাকা সরিয়ে ফেলত অভিযুক্ত। চৈতালির সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তিনি বুঝতেও পারেননি। পুলিশের সামনে অভিযোগ স্বীকার করে শর্মিতা বলে, ‘‘আমাকে হাজতে ভরলে টাকা পাবে না। তার থেকে আমি চেক লিখে দিচ্ছি।’’ টাকা পাওয়ার আশায় পুলিশের সামনেই শর্মিতাকে দিয়ে চেক এবং মুচলেকা লিখিয়ে নেন অভিযোগকারীরা। চৈতালির স্বামী মহম্মদ সাবির বলেন, ‘‘যে অ্যাকাউন্টের চেক দিয়েছে, তাতে একটি টাকাও নেই। ওই চেকও বাউন্স করবে।’’
এর পরে যে শাখার কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট হিসেবে সেবা কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল, সোমবার সেখানে যান অভিযোগকারীরা। ওই শাখার ম্যানেজার মঙ্গলবার ফোনে বলেন, ‘‘দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে জানাব। গ্রাহককে এখনই ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’দিনে আরও ৪০ হাজার টাকা পাবেন। বাকিটা আগামী মাসের তিন তারিখের মধ্যে পরপর তিন দিনে দিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে খোলা অ্যাকাউন্টে দিনে ২০ হাজারের বেশি টাকার লেনদেন করা যায় না। অন্য কারও একই অভিযোগ থাকলে সেটাও দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy