প্রতি গ্রীষ্মে জলসঙ্কট আর প্রতি বর্ষায় ভেসে যাওয়া রাস্তাঘাট। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে এটাই হাওড়া শহরের চেনা ছবি। নগরায়ণ ও লোকসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সমস্যা। কিন্তু সমাধান মেলেনি। কারণ, ভূগর্ভে নিকাশি বা জলের পাইপলাইন ঠিক কী ভাবে গিয়েছে, সেটাই জানা নেই পুর নিগমের। কারণ প্রাচীন এই শহরের মাটির তলায় কোথায় কী রয়েছে, তার কোনও মানচিত্র নেই। এ বার সেই মানচিত্রই তৈরি করতে উদ্যোগী হল হাওড়া পুর নিগম।
নগর পরিকল্পনাকারেরা মনে করেন, আধুনিক শহরে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ভবিষ্যতে এগোনো যায় না। অথচ পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প তৈরি হওয়ার পরে গত ৩৫-৪০ বছর ধরে গোটা শহর জুড়ে জালের মত পাইপলাইন বিছিয়ে থাকলেও তার কোনও নকশাও ছিল না এত দিন। এ বার মানচিত্র তৈরি করে সেই সমস্যাই মেটাতে চায় পুর নিগম। আধুনিক ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ ব্যবহার করে সেই নকশা তৈরি করবেন শিবপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র (আইআইইএসটি) এক ঝাঁক ইঞ্জিনিয়ার।
হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রাচীন এই শহরের মাটির নীচে কোথায় কী রয়েছে, ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালাগুলির কী অবস্থা বা কোথা দিয়ে জলের পাইপলাইন গিয়েছে, তা জানার উপায় নেই। কিছু সমস্যা হলে রাস্তায় যত্রতত্র গর্ত করতে হয় ত্রুটি ধরতে। এ জন্য মাটির নীচের মানচিত্র তৈরি করবে আইআইইএসটি।’’ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অজয় রায় বলেন, ‘‘আইআইইএসটি-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের বিশেষজ্ঞ এবং পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা যৌথ ভাবে এ কাজ করবেন। জলের লাইনের মানচিত্র তৈরি হবে। জানা যাবে নিকাশির হাল-হকিকৎ। এ জন্য গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার ব্যবহার করা হবে।’’
পুর নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুর-এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা রয়েছে ৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বেশির ভাগটাই ব্রিটিশ আমলে তৈরি ইটের নালা। বর্তমানে সেই নালাগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, সেই তথ্য পুর-নিকাশি দফতরে নেই। একই অবস্থা বছর পঁয়ত্রিশ আগে তৈরি হাওড়া পুরসভার একমাত্র পানীয় জলপ্রকল্প পদ্মপুকুরের। পুর নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপ্রকল্প চালু হওয়ার পরে বছরের পর বছর ধরে বাসিন্দাদের জল দেওয়ার জন্য পুর প্রতিনিধিরা মর্জিমাফিক নিজের এলাকায় পাইপলাইন করে নিয়েছেন।
নগর পরিকল্পনাকার দীপঙ্কর সিংহের কথায়, ‘‘শহরের মাটির নীচে নিকাশি বা পানীয় জলের পাইপলাইন কোথায় রয়েছে, তা জানার জন্য মানচিত্র থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে এগোনো যায় না। অথচ, এ ধরনের মানচিত্র কলকাতা বা হাওড়া, কোনও শহরেরই নেই। ভাবতে অবাক লাগে।’’
হাওড়ার মেয়র এর জন্য অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বামফ্রন্ট আমলের দিকেই। তাঁর কথায়, ‘‘গত ৩৫ বছর ধরে পুরবোর্ডে থাকা বামফ্রন্ট এ সবের কোনও নকশা বানায়নি। নেই।’’ রথীনবাবুর অভিযোগ, বাম আমলে অবৈজ্ঞানিক ভাবে পাইপলাইন বসানো হয়েছে। জলের ধর্ম যেখানে উপর থেকে নীচের দিকে নামা, সেখানে পাইপ গিয়েছে মূল পাইপলাইন থেকে উপরের দিকে। তাই পাম্প করেও অনেক সময় পাইপে জল পৌঁছনো যাচ্ছে না। যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া পাইপের শেষ প্রান্ত শুকিয়ে থাকছে। জল পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ।
মেয়র বলেন, ‘‘পানীয় জল ও নিকাশি সমস্যা স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। তাই ভোটের ফল প্রকাশের পরেই আইআইইএসটি-র ইঞ্জিনিয়াদের দল কাজ শুরু করবে।’’
তবে শুধুমাত্র মাটির নীচের নকশা তৈরি নয়, আইআইইএসটি এখন থেকে বিশেষজ্ঞ সংস্থা হিসেবে যৌথ ভাবে পুর নিগমের সঙ্গে কাজ করবে। পুর কমিশনার নীলা়ঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত দিন শুধু পুর ইঞ্জিনিয়ারদের উপরেই নির্ভর করতে হতো। এ বার যে কোনও কাজ শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আইআইইএসটি-র ইঞ্জিনিয়ারেরা তাঁদের মতামত দেবেন। তাঁদের অনুমোদন পেলে তবেই যে কোনও কাজের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy