নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশ উত্তাল। সেই প্রেক্ষিতে দেশভাগ, কাঁটাতার, বিচ্ছেদের যন্ত্রণার বহমানতার বিভিন্ন পরিসরকে নিয়ে যুগ্ম ভাবে আলোচনাচক্রের আয়োজন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ এবং নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিন দিনব্যাপী এই রাজ্যভিত্তিক আলোচনাসভা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। শুধু রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক নয়, সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের বিভিন্ন আঙ্গিকে দেশভাগের কথা কী ভাবে উঠে এসেছে, তাও এই সভায় আলোচনা করবেন বিশিষ্ট ব্যক্তি, অধ্যাপক এবং গবেষকেরা।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত ‘দেশভাগ: প্রেক্ষিত ও যন্ত্রণার বহমানতা’ শীর্ষক এই আলোচনাচক্রের প্রথম দিন বক্তৃতা করেন লেখক ও গবেষক সন্দীপ বন্দোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী, অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী, রুশতী সেন, অধ্যাপক বরেন্দু মণ্ডল, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং অভিজিৎ সেনের মতো বিশিষ্ট জনেরা।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে দেশভাগ নিয়ে আলোচনাসভা আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সন্দীপ বলেন, “দেশভাগের চিহ্ন এই কলেজেও রয়ে গিয়েছে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর স্মৃতিকথাতেও এর উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া, ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার পর এই কলেজেই তৈরি হয়েছিল ত্রাণ শিবির।” তাঁর পাশাপাশি বাকিরাও ভাগ করে নেন দেশভাগ বিশেষত দু’বাংলার ভাগ নিয়ে নানা অলিখিত আখ্যান বা সাহিত্য-ইতিহাসে আলোচিত নানা নিদর্শন।
চলতি বছরের অগস্টেই নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন কালচারাল স্টাডিজ়, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের রবীন্দ্রনাথ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ়ের মধ্যে বঙ্গভঙ্গের অজানা ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে স্বাক্ষরিত হয় সমঝোতাপত্র বা মউ। স্থির হয়, আগামী দু’বছর এই দুই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা রাজ্যের অশীতিপর মানুষের দেশভাগের অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করবে। একই সঙ্গে, এরই অংশ হিসাবে বিভিন্ন আলোচনাসভা বা সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপক শিউলি সরকারের কথায়, “বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা বিদেশি শাসনের হাত থেকে আমাদের মুক্তি। একই সঙ্গে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং কলঙ্কময় অধ্যায় দেশভাগ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত দাঙ্গা ও উদ্বাস্তু সমস্যা। যাঁরা সেই সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা অনেকেই হয়ত আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম কিন্তু সেই দুঃসহ যন্ত্রণা এখনও বহন করে চলেছেন। ভিটেমাটি ছাড়া সেই ছিন্নমূল মানুষদের হৃদয়বিদীর্ণ করা গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করার কাজ খুব জরুরি।” আলোচনাসভায় দেশভাগের ইতিহাসকে যেমন নেড়েঘেঁটে দেখা হবে, সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রে দেশভাগের প্রসঙ্গ কী ভাবে উঠে এসেছে অথবা সাধারণ মানুষের নানা অলিখিত আখ্যানও জানা যাবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষা। তিন দিনের এই আলোচনাসভার সমস্ত বক্তব্যকে বই আকারে প্রকাশ করার ভাবনা রয়েছে তাঁদের।
আলচনাসভার যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা ভট্টাচার্য জানান, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দেশভাগ নিয়ে শিক্ষিত করার দায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। তাঁর কথায়, “আমাদের ছাত্রীরা শুধু বিখ্যাত মানুষদের স্মৃতি লিপিবদ্ধ করার কাজ করছে না। নিজের বাড়ি থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীর দেশভাগ নিয়ে নানা মৌখিক অকথিত গল্প সংগ্রহ করছে। তাই এই গবেষণার কাজ এবং এ সংক্রান্ত আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম।”
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন কালচারাল স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর মননকুমার মণ্ডল জানান, এর আগে বাংলাদেশ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই গবেষণার কাজের জন্য মউ স্বাক্ষরিত হয়। লেডি ব্রেবোর্নের সঙ্গে এটি তাঁদের তৃতীয় মউ। তারই একটি অংশ এই আলোচনাসভা। মনন বলেন, “আমরা বঙ্গভঙ্গ নিয়ে জনগবেষণা প্রকল্পের কাজ বহু আগেই শুরু করেছি। আমাদের প্রয়াস একটি ‘বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরি’ নামক ডিজিটাল সংগ্রহশালা গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে শুধু যে মানুষের যন্ত্রণার আখ্যান লিপিবদ্ধ হবে তা নয়, তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের কথাও নানা ভাবে উঠে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy