Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

স্টেশন থেকে গঙ্গাপাড়, তোলাবাজির রমরমা

ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গঙ্গার পাড়ের রাস্তা, সব জায়গাতেই ডালা হিসেবে টাকা নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০০ জন হকারকে।

পাকাপোক্ত হোটেল। হাওড়া ফেরিঘাটের কাছে ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

পাকাপোক্ত হোটেল। হাওড়া ফেরিঘাটের কাছে ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

এ যেন দখলদারদের স্বর্গরাজ্য!

সেই দখলদারদের জুলুমেই ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গঙ্গার পাড়। শুধু হাওড়া বাসস্ট্যান্ড বা সাবওয়ে নয়, হাওড়া স্টেশনকে ঘিরে তোলাবাজদের দাপট ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্টেশনের পার্সেলে আসা মালবাহী গাড়ি থেকে নিয়মিত টাকা তোলার পাশাপাশি হাওড়া স্টেশনের ঠিক উল্টো দিকে গঙ্গার পাড়ে বেআইনি হোটেল, দোকান আর হকারদের বসিয়ে মোটা টাকা ‘তোলা’ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, চলছে অবাধে গঙ্গা দূষণ। হোটেলগুলি থেকে গঙ্গায় নিয়মিত আবর্জনা ও প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে বলেই অভিযোগ।

হাওড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে হাওড়া স্টেশন চত্বরও। এই ওয়ার্ডটি তোলাবাজির আঁতুড়ঘর বলে জানেন সাধারণ মানুষ। তাই স্টেশন চত্বরও তোলাবাজমুক্ত এলাকা ছিল না কোনও কালেই। শুধুমাত্র হাওড়া কমিশনারেট হওয়ার পরে পুলিশ সক্রিয় হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে থাকা তোলাবাজেরা কিছুটা পিছু হটেছিল। তখন অনেকটা দখলমুক্ত হয়েছিল গঙ্গার পাড়।

কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ফের একই চিত্র ফিরে এসেছে হাওড়া স্টেশন চত্বরে। হাওড়া স্টেশনের মুখ আটকে গঙ্গার পাড় বরাবর গড়ে ওঠা হোটেলগুলিকে তুলতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছিল আগেই। এ বার গঙ্গার পাড়ের ফাঁকা জায়গায় যে সব অস্থায়ী হোটেলগুলি ছিল, সেগুলিকে রাতারাতি পাকাপোক্ত করে নেওয়া হয়েছে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গঙ্গার পাড়ের রাস্তা, সব জায়গাতেই ডালা হিসেবে টাকা নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০০ জন হকারকে।

শুধু তা-ই নয়, দখলদারদের এখন নজর পড়েছে হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতি লাগোয়া নদীতীরে। সেখানে মাটি ফেলে পাড় বুজিয়ে টিন আর বাঁশ দিয়ে ঘিরে তৈরি হয়েছে অফিস ঘর। টিনের দেওয়ালে ঝোলানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটআউট-সহ দলীয় পতাকা। একই সঙ্গে হাওড়া ফেরিঘাটের ২ নম্বর জেটিতে ঢোকার মুখে এতদিন অস্থায়ী ভাবে যে হোটেল ছিল, তা রাতারাতি পাকাপোক্ত করে গড়ে উঠেছে। একই ভাবে ওই জেটির টিকিট অফিসের উল্টোদিকে চলছে আর একটি হোটেল। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এই সব হোটেলের সমস্ত আবর্জনা লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে গঙ্গায়।

অস্থায়ী হোটেল

এই সব দখলদারদের রুখতে এক সময়ে এই ২ নম্বর জেটিতে প্রবেশপথের ডান দিকে যে ফাঁকা জমি পড়ে ছিল, তার পাশে নব্বইয়ের দশকে উত্তমকুমারের নামে একটি পার্ক তৈরি করে রেল। গঙ্গার পাড়ে তৈরি হওয়া ওই পার্ক সুন্দর করে সাজানো হয়। কিন্তু কোথায় কী? গোটা পার্কটাই এখন হকারদের হাতে বেদখল হয়ে গিয়েছে। আগে যে পার্কে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত, সেই পার্কের মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে ছাতু, খোলা হয়েছে অস্থায়ী সেলুন, চায়ের দোকান। এই সব দোকানের আবর্জনা ও প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে গঙ্গায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ লঞ্চকর্মী বলেন, ‘‘দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। এ ভাবে হোটেল ও হকার বসিয়ে তোলাবাজি আমরা দেখিনি।’’

দখলদারদের বাড়বাড়ন্তের পাশাপাশি ফের শুরু হয়েছে হাওড়া স্টেশনে মাল তুলতে বা নামাতে আসা সব গাড়ি থেকে জুলুম করে টাকা তোলা। স্টেশনের উল্টো দিকে যে জায়গায় একটি মাদার ডেয়ারির বুথ রয়েছে, সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখা যাবে তিন-চার জন কিশোর প্রতিটি রিকশাভ্যান বা গাড়ি থেকে প্রকাশ্যে টাকা তুলছে। কারণ মাল নামাতে বা তুলতে এলে এটাই নাকি দস্তুর। রিকশাভ্যান প্রতি ৫ টাকা। মালবাহী গাড়ি প্রতি ১০ টাকা ও লরি প্রতি ২০ টাকা দিতেই হবে।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র প্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘তোলাবাজদের দাপট বেড়েছে কি না, তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা স্টেশন চত্বরে অনেক কমেছে।’’

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গঙ্গার পাড় সৌন্দার্যায়নের ব্যাপারে পুরসভার পরিকল্পনা আগেই করেছিল। রাজ্য সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই কাজ শুরু হবে। তখন দখলদারও সরানো হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy