—ফাইল চিত্র
বিধানসভা ভোটের আগে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প এনেছিল প্রশাসন। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডকে নির্দিষ্ট আয়ের নিরিখে সীমাবদ্ধ না-রেখে সকলের নাগালে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যের সব হাসপাতালকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তি নিতে হবে। প্রত্যাখ্যান করলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু অভিযোগ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অধিকাংশ প্রথম এবং কিছু দ্বিতীয় শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনার চিকিৎসা করছে না।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে যেখানে লক্ষাধিক সংক্রমিত, সেখানে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন হাজার রোগী স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি জায়গায় করোনার চিকিৎসা করিয়েছেন! যদিও অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিতে না-চাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার ঘটিবাটি বন্ধক দিয়ে করোনার চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছে।
করোনার চিকিৎসা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে হবে না কেন? অন্য যুক্তি দেখাচ্ছে হাসপাতালগুলি। অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘যত দূর জানি, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনা অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে পোর্টালে ঢোকা যাবে না। তা হলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে আসা করোনা রোগীদের ভর্তি নেব কী ভাবে?’’ তবে স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ‘আনস্পেসিফায়েড’ প্যাকেজে করোনা চিকিৎসার উপায় রয়েছে।
সে কথা মেনে নিয়ে আমরি হাসপাতালের তরফে রূপক বড়ুয়ার আবার দাবি, ‘‘ওই প্যাকেজে শয্যার ভাড়া দৈনিক ১৮০০ টাকা বেঁধে দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে পিপিই কিট ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য আরও হাজার ছয়েক টাকা। এই টাকায় আমাদের পক্ষে করোনার চিকিৎসা করা অসম্ভব।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘করোনা রোগীকে যদি আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে দিতে হয়, তখন ১৮০০ টাকা শয্যা ভাড়ায় কী হবে? তাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে না। তবে কেউ ওই কার্ডে হৃদ্রোগ বা অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তির পরে যদি তাঁর করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে, সে ক্ষেত্রে ওই কার্ডেই হচ্ছে।’’
মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের তরফে হৃদ্রোগ চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনা চিকিৎসার যে খরচ বাঁধা আছে, তাতে প্রথম সারির একশোর বেশি শয্যাযুক্ত হাসপাতালের পক্ষে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরাও দিচ্ছি না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মৌখিক কথা হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে করোনা রোগী এলে দফতরের নোডাল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করা হবে।’’
ফর্টিস, রুবি, ডিসানের মতো হাসপাতালও জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনার চিকিৎসা তারা করতে পারছে না। রুবি জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তিই আছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে শুধু ক্যানসার চিকিৎসা করার। ডিসান স্বাস্থ্যসাথীতে শুধুই হৃদ্রোগ চিকিৎসা করে। বেল ভিউ জানিয়েছে, তারা করোনার চিকিৎসায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিচ্ছে, কিন্তু কত দিন পারবে, তা জানে না। নারায়ণা, তালতলার জিডির মতো কয়েকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনার চিকিৎসা না-করার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক রোগী। যদিও দুই হাসপাতালেরই দাবি, তারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে করোনার চিকিৎসা করছে। গত তিন মাসে কত জন সংক্রমিতের চিকিৎসা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান অবশ্য জানাতে পারেনি দুই হাসপাতাল।
শ্রমজীবী হাসপাতালের মুখপাত্রের দাবি, ‘‘গত ১৯ নভেম্বর থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করোনা চিকিৎসায় নিচ্ছি না। কারণ, হাসপাতালে নেটওয়ার্কের সমস্যায় পোর্টাল খুলে নাম এন্ট্রি করতে পারছি না। স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েওছি।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কেউ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবা না-পেলে স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানান। সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে শেক্সপিয়র সরণি ও পার্ক সার্কাসের দু’টি নার্সিংহোমকে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় করোনা রোগী নিতে বাধ্য করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy