Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bowbazar

মেট্রোকর্মীদের রাঙিয়ে উৎসবমুখী সেকরাপাড়া

সোমবার ছিল দোল। মঙ্গলবার হোলি। ফলে এ দিন হিন্দিভাষী মানুষের সঙ্গেই রঙের উৎসবে মেতে উঠেছিল শহরের কিছু এলাকা।

একসঙ্গে: দোল খেলায় মেট্রোর কর্মীদেরও ডেকে নেন সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে: দোল খেলায় মেট্রোর কর্মীদেরও ডেকে নেন সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০২:৩২
Share: Save:

গোটা পাড়াই প্রায় ফাঁকা। কিন্তু রঙের উৎসব বলে কথা, ঘর বন্ধ করে থাকা যায় নাকি! তাই যে ক’জন বাসিন্দা থেকে গিয়েছেন বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেনে, কর্তব্যরত কয়েক জন মেট্রোকর্মীর সঙ্গে রং খেললেন তাঁরাই।

সোমবার ছিল দোল। মঙ্গলবার হোলি। ফলে এ দিন হিন্দিভাষী মানুষের সঙ্গেই রঙের উৎসবে মেতে উঠেছিল শহরের কিছু এলাকা। সেই উৎসব থেকে দূরে থাকতে পারেনি সেকরাপাড়াও। বাসিন্দা জয়কুমার রানা জানালেন, তাঁরা মঙ্গলবার দোল পালন করেছেন। কিন্তু খেলবেন কাদের সঙ্গে? পুরো পাড়াই তো প্রায় ফাঁকা। তাই তাঁদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী কয়েক জন মেট্রোকর্মীকেই আবির মাখালেন তাঁরা।

অন্য বারের তুলনায় এ বছর দোলের সেকরাপাড়া লেনের রং অনেকটাই যেন ফিকে। ওই এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ গুপ্ত জানান, পুরো পাড়ায় মাত্র তিনটি বাড়ি, ১ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ১৫ নম্বর সেকরাপাড়া লেনেই এখন লোক থাকেন। বাকি বাড়ির বাসিন্দারা বেশির ভাগই রয়েছেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মেট্রো কর্তৃপক্ষের ঠিক করে দেওয়া ভাড়া বাড়িতে। সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘গোটা পাড়া দোল উপলক্ষে মেতে

উঠতাম। এ পাড়ায় যেহেতু অনেক হিন্দিভাষী মানুষ থাকেন, তাই দু’দিন ধরে দোল খেলা হত এখানে। এ বার দু’দিন দূর অস্ত্, এক দিনই সে ভাবে রং খেলা হল না! পাড়ার বাসিন্দারা এখন শহরে ছড়িয়ে রয়েছেন। পুরনো স্মৃতি খুঁড়তে কেন ভাঙা বাড়ির পাড়ায় কেউ দোল খেলতে আসবেন বলতে পারেন?’’

এ দিন সেকরাপাড়া লেনে ডিউটি করছিলেন মেট্রোর সুপারভাইজার মহাদেব বিশ্বাস। কথার ফাঁকেই মহাদেববাবুর গালে আবির মাখাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মহাদেববাবু বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস এই পাড়ায় থাকতে থাকতে ওঁদের সঙ্গে যেন আত্মীয়তা হয়ে গিয়েছে। ওঁদের জলের সমস্যা থেকে শুরু করে যে কোনও অসুবিধায় আমরা পাশে থাকি। তাই দোলের দিন কাজের ফাঁকে ওঁরা যখন একটু আবির মাখাতে এলেন, তখন আপত্তি করবই বা কেন!’’ অন্য এক সুপারভাইজার অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা তো সারাদিন এই পাড়াতেই কাজ করছি। কাজের মাঝখানে ওঁদের আবির মাখিয়ে দেওয়ায় তাই আন্তরিকতার ছোঁয়া পেয়েছিলাম। ওঁরা এখন আমাদের আত্মীয়েরই মতো।’’

সেকরাপাড়া লেনের ১৫ নম্বর বাড়ির ঠিক পাশেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছে। ওই বাড়ি ভাঙা না পড়লেও তার ঠিক পাশেরটিই ভাঙা হয়েছে। ১৫ নম্বর বাড়িরই বাসিন্দা জয়কুমার। তিনি বলেন, ‘‘দোল খেলব কাদের সঙ্গে? তাই, আজ সকালে উঠে মেট্রোর কয়েক জন কর্মীকে আবির মাখালাম। ওঁরাও আপত্তি করেননি।’’ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জয়কুমারের মেয়ে মুনমুন। সে বলল, ‘‘পাড়ায় বন্ধুরা তো কেউ নেই। কাদের সঙ্গে রং খেলব? আমাদের বাড়ির পাশেই কাজ করছিলেন মেট্রোর কাকুরা, তাই তাঁদেরই আবির মাখালাম। ওঁরা বরং খুশিই হলেন।’’

মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এখন সেকরাপাড়া লেনে মাটির নীচে মেট্রোর লাইন তৈরি করার জন্য ভিত শক্তের প্রয়োজনীয় কাজ চলছে। ঘেরা ওই জায়গায় বাইরের কারও প্রবেশ নিষেধ। তাই এ দিন মেট্রোকর্মীরা পাড়ার রাস্তায় এলে তবেই ওঁদের আবির মাখাচ্ছিলেন বাসিন্দারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bowbazar East West Metro Holi Celebration Holi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy