বড়দিন থেকে পয়লা জানুয়ারি চিড়িয়াখানায় পড়ে লম্বা লাইন। তবু ক’জনই বা খেয়াল রাখি বছরের প্রথম দিনটির বৈশিষ্ট্য? ১৮৭৬-এর পয়লা জানুয়ারি প্রিন্স অব ওয়েলস (পরে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) কলকাতা ভ্রমণের সময় উদ্বোধন করেছিলেন এই জ়ুলজিক্যাল গার্ডেনের।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতায় চিড়িয়াখানা স্থাপনের চিন্তা শুরু করেন ব্রিটিশ প্রশাসন। তবে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে কেটে যায় আরও কয়েক বছর। ১৮৭৫ সালে স্যর রিচার্ড টেম্পল বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর থাকার সময় জিরাট ব্রিজের দু’পাশের বস্তি সরিয়ে জায়গা করে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার জন্য। চিড়িয়াখানার প্রাথমিক খরচের জোগান দিতে দুই লাখ টাকারও বেশি চাঁদা তোলা হয়। প্রথম দিকে চিড়িয়াখানা পরিচালন কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জার্মান প্রযুক্তিবিদ কার্ল লুইস শোয়েন্ডলার ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী জর্জ কিং।
উনিশ শতকের প্রায় শুরু থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরে বিরল পশুপাখির একাধিক সংগ্রহ গড়ে উঠেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল বড়লাট ওয়েলেসলির ব্যারাকপুরের বাগানবাড়িতে। আলিপুরের চিড়িয়াখানা শুরুর সময় সেখানে থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কিছু পশু। তার মধ্যে ছিল লর্ড ক্লাইভের পোষ্য বলে খ্যাত, অদ্বৈত নামের কচ্ছপটিও। শোয়েন্ডলার নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে কিছু প্রাণী দান করেছিলেন। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্তম্ভও রয়েছে।
দেশীয় ধনীদের অনেকে বিরল পশুপাখি ‘সংগ্রহ’ করতেন। তার মধ্যে মার্বেল প্যালেসের রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক চিড়িয়াখানার পশুদের প্রথম আবাসগৃহ ‘মল্লিক হাউস’ তৈরিতে দান করেন। রাজা ওয়াজিদ আলি শাহ মেটিয়াবুরুজে জীবজন্তুর বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণেও আগ্রহী ছিলেন। জীবজন্তুদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো উন্মুক্ত ‘এনক্লোজার’-এ রাখার ব্যবস্থাও সম্ভবত তিনিই প্রথম করেন। আলিপুরের ‘চিড়িয়া ঘর’-এ নিয়মিত দর্শক হিসাবে আসা নবাবের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের কিছু পশুর ঠাঁই হয় আলিপুরে। তার মধ্যে ছিল জাভার বিরল প্রজাতির একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গন্ডার, যার কথা বিশেষ ভাবে লিখে গেছেন চিড়িয়াখানার প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট রামব্রহ্ম সান্যাল।
সান্যাল মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে সংস্থার পরিচালন পদ্ধতি ও বদ্ধ প্রজনন (ক্যাপটিভ ব্রিডিং)-সহ বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করেছিল। ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে শিক্ষামূলক ভ্রমণের গন্তব্যও হয়ে ওঠে চিড়িয়াখানা। পশুপাখির জাতি ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শিশুদের পরিচয়ের উদ্যোগ করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ১৮৮৩-৮৪ সালের এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সারা বছরে ১,৮৮,৫৯৩ জন এসেছিলেন এখানে। কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য হিসেবে আলিপুর চিড়িয়াখানার উল্লেখ আছে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের প্রচার-পোস্টারেও। মূলত ছুটির দিনে বিনোদনের উদ্দেশ্যে মানুষ ভিড় করলেও, বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে চিড়িয়াখানার ভূমিকা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয় জায়গাটি। ছবিতে চিড়িয়াখানার ‘বার্ড কলোনি’, উইকিমিডিয়া কমনস থেকে।
আপনজন
বেলজিয়ামের মানুষ, কলকাতার আপন— বলতে কাদের মনে পড়ে? টিনটিন, আর ফাদার পল দ্যতিয়েন (ছবি)। পল ভারতে আসার আগে, চল্লিশের দশকে বেলজিয়ামে ভারততত্ত্ব পড়ার সময় পড়েন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য। বাংলায় এলেন ১৯৪৯-এ, তার পর কত জায়গায় যাওয়া, শ্রীরামপুর থেকে বাসন্তী। বাংলায় এমএ পড়লেন, দেশ পত্রিকায় সাড়া ফেলল তাঁর ‘ডায়েরির ছেঁড়াপাতা’, পরে যা হয়ে উঠবে বাংলা নন-ফিকশনের প্রথম ‘কোয়ার্টারলজি’র ভিত্তিপ্রস্তর। স্বাদু বাংলা গদ্য রচনায় তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত, হাসির ঝলক ও বুদ্ধির দীপ্তি যার অভিজ্ঞান। কলকাতার আপনজন, বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বন্ধু ফাদার পল দ্যতিয়েনের শততম জন্মদিনের (জন্ম ১৯২৪) অনুষ্ঠান আজ বিকেল ৫টায় বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায়, সম্প্রীতি আকাদেমির উদ্যোগে। ‘শতবর্ষে ফাদার দ্যতিয়েন’ বিষয়ে আলোচনা, সম্প্রীতি সম্মাননা অর্পণ; প্রকাশ পাবে সুরঞ্জন মিদ্দে সম্পাদিত বই ফাদার দ্যতিয়েন চর্চা (প্রকা: নান্দনিক)।
বাংলার ছবি
১৮৫৬ সালের ১ জানুয়ারি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা বাংলার প্রথম ফোটোগ্রাফি চর্চার প্রতিষ্ঠান ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এর, প্রথম প্রতিষ্ঠাতা-সেক্রেটারি রাজেন্দ্রলাল মিত্র। দিনটি এখন উদ্যাপিত ‘বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ডে’ হিসাবে, আগামী ২-৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টে থেকে সন্ধে ৭টা কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় ‘চারু গুহ মেমোরিয়াল গ্যালারি’র উদ্যোগে উদ্যাপন। দেখা যাবে রাজেন্দ্রলাল মিত্রের তোলা উনিশ শতকের ওড়িশার মন্দিরের আলোকচিত্র, চারু গুহের ব্যবহৃত সেকালের ক্যামেরা ও ফোটোগ্রাফি সরঞ্জাম। আলোকচিত্রী জয়ন্ত সাউ থাকবেন তাঁর তৈরি অ্যানালগ ক্যামেরা, আরও কিছু ভিউ-ক্যামেরা ও অ্যানালগ ফোটোগ্রাফি সরঞ্জাম নিয়ে; থাকবে বাংলার ফোটোগ্রাফি চর্চার ইতিহাস, এই প্রজন্মের ছবি-অ্যালবাম।
স্মৃতি তর্পণ
গবেষণায় তার বিরাট গুরুত্ব, তবু ‘পঞ্জিচর্চা’র সমাদরে আমাদের অনীহা। তাই অশোক উপাধ্যায়ের (১৯৪৫-২০২৩) মতো পঞ্জি-বিশারদ সে কাজকে তুঙ্গ উচ্চতায় নিয়ে গেলেও তাঁর পরিচয় লেখা হয় প্রুফরিডার! গত ২১ নভেম্বর প্রয়াত এই গবেষকেরা সুহৃদ-গুণমুগ্ধরা একত্র হয়েছিলেন, চার্বাক ও হরপ্পা-র আয়োজনে। ২০ ডিসেম্বর মহাবোধি সোসাইটি সভাঘরে স্মৃতিসন্ধ্যা হয়ে উঠেছিল ১৭৭৮ গ্রন্থচর্চা পত্রিকা-সম্পাদকের তর্পণ। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘দেবপ্রিয় অশোক’, একই নামে ইন্দ্রজিৎ চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশ পেল স্মারক গ্রন্থ (প্রকা: চার্বাক হরপ্পা)। স্মৃতিচারণ, রেখাচিত্র, ছবিতে ভরা বই, প্রধান আকর্ষণ অশোক উপাধ্যায়ের রচনাপঞ্জি। প্রচারবিমুখ গবেষকের নানা দিক উঠে এল গৌতম সেনগুপ্ত অভ্র ঘোষ সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সুমিতা চক্রবর্তী অনুপ মতিলাল প্রমুখের স্মৃতিচারণে।
শেষ মুখ
চলে গেলেন পঞ্চকন্যার শেষ কন্যা। আশির দশকে শানু লাহিড়ী মীরা মুখোপাধ্যায় করুণা সাহা ও সন্তোষ রোহতগীর ‘পেন্টার্স গ্রুপ’-এর আর এক মুখ শ্যামশ্রী বসু। সভানেত্রী হিসেবে শ্যামশ্রীর বক্তব্যই ছিল, নতুন শিল্পধারা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেবে মেয়েরা। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে তাঁর সতীর্থ ছিলেন যোগেন চৌধুরী ধীরাজ চৌধুরী সুনীল দাস অরুন্ধতী রায়চৌধুরী প্রমুখ। তাঁর অব্যক্ত শিল্পকলা প্রদর্শিত হয়েছে ঢাকা লন্ডন বার্লিন স্যান্টা বারবারা-সহ বহু জায়গায়; পেয়েছেন রাজ্য চারুকলা পরিষদ, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস, দিল্লির আইফ্যাক্স ও ললিতকলা অকাদেমি সম্মান। গত ৭ ডিসেম্বর প্রয়াত পঁচাশি বছর বয়সে, স্মরণসভায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন এ প্রজন্মের শিল্পীরা।
৭৫ পেরিয়ে
১৯৫০-এর লন্ডন সফর চোখ খুলে দিয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। সঙ্গে থাকা নোটবুকে তখন পথের পাঁচালী তৈরির টুকরো ভাবনা আঁকা চলছে। লোকেশনে শুট হবে ছবি, মেক-আপ থাকবে না, থাকবেন ‘অনভিনেতা’রা, এ সব ওঁর বন্ধুরা আগেই শুনেছেন, বলেছেন এ প্রায়-অসম্ভব। ছ’মাসের লন্ডনবাসে সত্যজিৎ সে বার প্রায় শ’খানেক ছবি দেখেন, যার মধ্যে ছিল ভিত্তোরিয়ো ডি’সিকার বাইসাইকেল থিভস-ও। এই ছবি আর তার নিয়ো-রিয়ালিজ়মের দর্শন ও প্রয়োগ তাঁকে আশ্বস্ত করল, এ পথেই তৈরি হবে তাঁর প্রথম ছবি। বিশ্বখ্যাত ইটালীয় ছবিটির পঁচাত্তর পূর্ণ হল এ বছর, সেই উপলক্ষে সিনে সেন্ট্রাল ও রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুম একত্রে করছে উদ্যাপন, আগামী ৩ জানুয়ারি বুধবারবিকেল ৫টায় লাইব্রেরি সভাঘরে। বলবেন চিত্রপরিচালক অতনু ঘোষ, দেখানোও হবে ছবিটি।
চিত্তপট
পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে ১৯২৭ সালে জন্ম বি আর পানেসরের। কিন্তু তাঁর ‘আপন ক্ষেত্র’ এই বাংলা। দিলীপ দাশগুপ্ত রথীন মৈত্রের স্টুডিয়োতে যোগদান ও শিল্পচর্চা; ভারতে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের পর কোলাজ নিয়ে অবিরল কাজ করে চলায় তাঁর ভূমিকা স্মরণীয়। নিসর্গের রং রেখা ছন্দে সপ্রাণ তাঁর চিত্রপট (ছবি)। ২০০৯-এ পান অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের জীবনকৃতি সম্মান; এ শহরে ও বাইরে তাঁর বহু চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছে। আজীবন বিনম্র নেপথ্যচারী; তাঁর ছবিতে প্রকৃতি যেমন, তাতে মিশে থাকা তাঁর জীবনও তেমনই, স্বতঃস্ফূর্ত স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। তাঁর ছাত্র রঞ্জন সরকারের সৌজন্যে দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে বড়দিনে শুরু হল বি আর পানেসরের চিত্রপ্রদর্শনী ‘কোলাজ অ্যান্ড আদারস’, ছিলেন শিল্পীর প্রাণের নিকেতন সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর দুই সদস্য শিল্পী বিমল কুণ্ডু ও অতীন বসাক। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, রবিবার বাদে ২টো-৮টা।
সম্প্রীতির সুর
বিস্মৃত, অনালোচিত প্রান্তিক নারীর লড়াইকে জনমানসে নিয়ে আসছেন ওঁরা— মিতালি বিশ্বাস আবির নিয়োগী সাগরিকা দত্ত— ‘ক্যানভাস অব আনটোল্ড হিস্ট্রি’ টেবিল ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে। এ বার একটু বদল, হিংসা-বিদ্বেষের বিপ্রতীপে ভালবাসার জয়গান। কলকাতায় প্রজন্ম-পরম্পরায় ইহুদি সিনাগগের দেখাশোনা করছেন আনোয়ার, সিরাজ খানেরা; এনআরসি-র আবহে অসমে জাতি গোষ্ঠী ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে বিপন্নের পাশে দাঁড়িয়েছেন চেনা-অচেনা অগণিত সহ-মানুষ; মুর্শিদাবাদের গ্রামে সমাজভয় সরিয়ে মুসলমান নিরাশ্রয় মেয়েকে নিজগৃহে সসম্মান ঠাঁই দিয়েছেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত, এমনই সব গল্প হলেও সত্যি-কে পাতায় পাতায় এঁকেছেন শিল্পীরা (ছবি); সঙ্গে সংক্ষেপে এই অন্য সংগ্রামের বয়ানগুলি লেখাও আছে ইংরেজিতে। সম্প্রীতির সুর-জাগানিয়া!
প্রিয় শহরে
চল্লিশের দশকে ফরিদপুর থেকে আসা, ধীরে ধীরে কলকাতাকে ভালবাসার শুরু। “কলকাতাকে ভাল না বেসে বাঁচা সম্ভবও নয়,” বলতেন মৃণাল সেন। আজ ৩০ ডিসেম্বর তাঁর প্রয়াণদিন, বেঁচে থাকলে বয়স হত একশো। ক’দিন আগেই শেষ হওয়া কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রাজ্য সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য ছিল আন্তরিক: উৎসব উদ্বোধনের পর নন্দনে প্রথম দিনের প্রথম ছবি আকালের সন্ধানে, পরে পরে দেখানো হয়েছে ওকা উড়ি কথা ভুবন সোম কলকাতা '৭১ খারিজ ছবিগুলিও। সুদেষ্ণা রায়ের কিউরেশনে চমৎকার একটিপ্রদর্শনীও হল, রঞ্জিত মল্লিক গৌতম ঘোষ অঞ্জন দত্ত মমতাশঙ্কর ও পুত্র কুণাল সেনের ব্যক্তি-অনুষঙ্গের সঙ্গে দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়-কৃত মৃণালবাবুর কর্মানুষঙ্গও ছিল তাতে। মৃণাল সেনকে নিয়ে অঞ্জন দত্তের নতুন ছবি চালচিত্র এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে পেল জুরি পুরস্কার, জেনে আনন্দিত হতেন তিনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy