Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Onam

সব ধর্মের সংহতি-সেতু শহরের ওনামে

কেরলের সব থেকে বড় উৎসব ওনামের ছায়া কিছুটা অন্য রকম এই অতিমারির ধাক্কায়।

ওনামের ভোজ।

ওনামের ভোজ।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৬
Share: Save:

লকডাউনেও অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে দুপুরে আলিপুরের বাড়িতে ঘুরে গিয়েছেন আইএএস কর্তা পি বি সালিম। স্ত্রী ফতিমা সোমবার সকালটা খেটেখুটে ওনামের ভূরিভোজ ‘সাদ্যা’র আয়োজন করেছেন যে!

কেরলের সব থেকে বড় উৎসব ওনামের ছায়া কিছুটা অন্য রকম এই অতিমারির ধাক্কায়। অন্য বার দক্ষিণ কলকাতার কোনও না কোনও প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়ে শ্বেতশুভ্র মুণ্ডনসজ্জিত পুরুষ এবং বিনুনির জুঁইয়ের সাজে সুবেশ নারীর ঝাঁকে। ওনামের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশম দিন ‘থিরুভোনামে’ লকডাউন পড়ায় অভিযোগ ছিল না কলকাতার হাজার দশেক মালয়ালি নরনারীর। তবে এই লকডাউন-পর্বে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানের সংহতি-সেতু আরও বেশি মজবুত করেছে ওনামের পার্বণ।

‘‘অতিমারির এটা লাভ বলতে পারেন’’— বলছিলেন কলকাতা কৈরালি সমাজমের কর্তা অজয়নগরবাসী শ্রীকুমার। দু’দশক ধরে ‘ক্যালকাটান’, মালয়ালি তথ্যপ্রযুক্তি কারবারি বলছেন, ‘‘মার্চ থেকে প্রতি সপ্তাহেই আমাদের মালয়ালিদের ডিজিটাল সংস্কৃতি-সম্মেলন চলছে।’’ মালয়ালি সমাজম, কৈরালি সমাজমের ওনাম সম্মেলনে ভার্চুয়াল আসরেও কেরলের মন্ত্রী থেকে চিত্রতারকাদের ছড়াছড়ি। আর সোমবার উৎসবের সব চেয়ে বিশেষ দিনটি ঘরে ফুলের গালচে পুকালম, সুদৃশ্য প্রদীপ নিলাভিলাক্কু এবং নিরামিষ ষোড়শোপচারে ভোজের আয়োজন।

একদা মোহনবাগানের জেভিয়ার পায়াসের বন্ধু, কলকাতার ক্যাথলিক মালয়ালি সমাজসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত ফ্রেডরিক চালিচেরি পল বলছিলেন, ‘‘ওনাম সবার উৎসব। বর্ষার শেষে ফসল ওঠার খুশি। পুরাণের বলিরাজার মর্ত্যে ফেরার গল্প আমরা সবাই জানি।’’ শ্রীকুমারও বলছিলেন, ‘‘মালয়ালিদের বিশ্বাস, বলি তাঁদের রাজা। দেবতাদের চক্রান্তে তাঁর পাতালে নির্বাসন হয়। আবার বামনরূপী বিষ্ণুর বরে একটি দিন তিনি ফিরে আসেন নিজের রাজ্যে। তবে পুজো-আচ্চার থেকেও সংস্কৃতির উৎসবটাই আসল।’’

পি বি সালিম কোঝিকোড়ে ক’বছর আগের বৃহত্তম ফুলের সাজ পুকালমের ছবি দিয়েছেন। স্থানীয় হিন্দু রাজা, খ্রিস্টান বিশপ ও মুসলিম কাজী মিলে যার উদ্বোধন করেন। বেহালার স্কুলশিক্ষিকা, ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমা-ভক্ত জ্যোতি জয়কুমারের মন খারাপ, ‘‘লকডাউনে বেশি ফুল জোগাড় হয়নি। পুকালমটা ছোট ছিল। তবে কানাডায় ছেলের সঙ্গে ভিডিয়ো-কলটা হয়েছে।’’

ফ্রেডরিকের জন্য লকডাউনই পারিবারিক মিলনের দরজা খুলে দিয়েছে। না হলে কোটায় ছাত্র পুত্র, বেঙ্গালুরুতে ছাত্রী কন্যা গরফার বাড়িতে থাকতেন না! চার জনে মিলে রাতভর ‘সাদ্যা’র খাবারদাবার রেঁধেছেন।

তবে সব মালয়ালি গিন্নি-কর্তাদেরই আক্ষেপ, ওনামের ভোজের ষোড়শ পদের অন্যতম তারকা কুটুকারির জন্য দরকারি মালাবার উপকূলের বিখ্যাত কদলী নেন্দ্রাপায়ামের দেখা নেই লেক মার্কেট, বেহালা বা পার্ক সার্কাসের ‘কেরালা স্টোর’গুলোয়। এই কলার খোসাটা মোটা। ভেতরটা শক্ত, পাকা টুকটুকে, হলুদ হলেই স্বাদে খোলে। লকডাউনে কেরল থেকে তা বাংলায় সহজে আসছে না। কেরলের বিখ্যাত প্যাকেট-বন্দি কলাভাজাও এই কলার কেরামতি। অনেকে বাধ্য হয়ে বাঙালি কাঁচকলাতেই রান্না সেরেছেন।

আদতে তামিল কন্যা, বাঙালি বাড়ির বৌ, কলকাতার সাউথ ইন্ডিয়া ক্লাবের কর্ত্রী পদ্মা আইয়ার রায়বর্ধনও ওনামের সব রান্না রেঁধেছেন লেক অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। তাঁর বোনের শ্বশুরবাড়ি মালয়ালি। সেই সূত্রে সব রান্না তাঁর নখদর্পণে। লকডাউনে পদ্মাদেবীর মেয়ে, জামাই, পুত্রও মুম্বইয়ে ফিরতে পারেননি। সবাই মিলে খুব আনন্দ হল।

লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা, অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কারপ্রাপ্ত মালয়ালি গল্পকার সুস্মেশ চন্দ্রোথ আবার এই সময়টা কোচিতে পরিবারের কাছে। হেসে বলছেন, ‘‘ওনামে ভাল রসগোল্লার অভাবে আফশোস রয়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Onam Kerala Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE