Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Smartphone

Drug Addiction: পকেটে প্রযুক্তির জোরেই হাতে মাদক কমবয়সিদের

ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বেড়েছে, ততই ‘ডার্ক ওয়েব’-এ বরাত দেওয়া মাদক কমবয়সিদের হাতে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৪
Share: Save:

মাদক-কাণ্ডে শাহরুখ খানের ছেলে, বছর তেইশের আরিয়ানের গ্রেফতারির পরেই দেশ জুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। চিন্তা বাড়িয়েছে নতুন প্রজন্মের হাতে সহজেই মাদক পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টিও। আশঙ্কা, কলকাতার স্কুল-কলেজের পডুয়াদের হাতেও কি তা হলে সহজে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক? নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরোর (এনসিবি) কর্তাদের বক্তব্যে সেই আশঙ্কাই সত্যি হচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, শহরের বহু স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েই ছড়িয়ে রয়েছে মাদকের জাল। গত কয়েক মাসের একাধিক তদন্তে সেই তথ্য উঠে এসেছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বেড়েছে, ততই ‘ডার্ক ওয়েব’-এ বরাত দেওয়া মাদক কমবয়সিদের হাতে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

দীর্ঘ দিন কলকাতায় কাজ করে বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত এনসিবি-র আধিকারিক মনোজ মিশ্র জানান, কয়েক বছর আগেই বিধাননগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুলে মাদক চক্র ধরেছিলেন তাঁরা। দেখা যায়, গেম খেলা ও কম্পিউটারে কাজ করার নামে দেদার ‘টর ব্রাউজ়ার’ ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি বাবা-মায়ের ক্রেডিড কার্ডে ‘বিট কয়েন’ও কিনছে পড়ুয়ারা। তা দিয়েই বরাত দেওয়া মাদক ‘কুরিয়র’ মারফত পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। কখনও প্লাস্টিকের পুতুলের পেটে, কখনও জুতোর হিলে। কখনও আবার মেক-আপ বাক্সের প্রসাধনী সামগ্রী ফেলে, তাতে রং-বেরঙের মাদকের গুঁড়ো সাজিয়ে পাঠানো হয়। তা এমন দক্ষতার সঙ্গে করা হয়, যাতে তা প্রসাধনী বলেই মনে হয়। মনোজের কথায়, ‘‘বিট কয়েন হল ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ বা ভার্চুয়াল টাকা। এর দাম ওঠা-নামা করে। কখনও প্রতি কয়েনের মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়।’’

আরিয়ানের ঘটনায় এমনই বিট কয়েন ও ডার্ক ওয়েবের ব্যবহার পাওয়া গিয়েছে বলে এনসিবি সূত্রের খবর। প্রমোদতরীতে পার্টির জন্য মাদক আনানো হয়েছিল কুরিয়রেই। এনসিবি-র (কলকাতা) যুগ্ম অধিকর্তা সুধাংশুকুমার সিংহ বলেন, ‘‘কুরিয়রের মাধ্যমে বিদেশ থেকে মাদক এসে পৌঁছয় এ শহরেও। ব্যবহারকারীদের হাতে হাতে তা ছড়িয়ে পড়ে। কুরিয়র সংস্থাকে ধরলেই তারা বলে, ভিতরে কী আছে তা দেখা তাদের ‘রুল বুক’ বিরোধী। কোথায় এবং কত ওজনের কুরিয়র করতে হবে জানালেই কাজ হয়ে যায়। এ সব বাধা পেরিয়েই গত জুনে আমরা এক মাদক-চক্র ধরেছি।’’

এনসিবি সূত্রের খবর, গত জুনে ক্যালিফর্নিয়া ও কানাডা থেকে কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে কলকাতায় ওই মাদক এসেছিল। শ্রদ্ধা সুরানা নামে বছর পঁচিশের এক তরুণী চক্রটি চালাচ্ছিল। তারিনা ভাটনগর নামে বছর ছাব্বিশের এক তরুণী অনলাইন মেসেজিং অ্যাপে মাদকের বরাত দিয়েছিল। কুরিয়রে মাদক আসার পরে করণকুমার গুপ্ত নামে এক ডেলিভারি বয় এক ব্যবহারকারীর থেকে আর এক ব্যবহারকারীর কাছে তা পৌঁছে দিচ্ছিল। তদন্তে নেমে এনসিবি বেগ পায়। কারণ, তারিনা যে অনলাইন মেসেজিং অ্যাপটি ব্যবহার করছিল, তাতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কথোপকথন মুছে যায়। এর সঙ্গেই ব্যবহার হচ্ছিল টর ব্রাউজ়ার।

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘শহরের বহু স্কুল, কলেজে মাদক জাল ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ এই টর ব্রাউজ়ার। কম্পিটারের দুর্নীতি ধরা সম্ভব তার আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। কিন্তু এই ব্রাউজ়ার ব্যবহার করে আইপি-অ্যাড্রেসই লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। তখন কেউ মুম্বইয়ে না কি মল্লিকবাজারে বসে মাদক কারবারের দুষ্কর্ম করছেন, তা ধরা মুশকিল হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মুছে যায়, এমন মেসেজিং অ্যাপও এখন খুব ব্যবহার হচ্ছে।’’

কলকাতা পুলিশের মাদক বিরোধী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘প্রযুক্তির এই জাল কেটে নিরন্তর নজরদারির চেষ্টা চলছে। উৎসবের মরসুমের কথা মাথায় রেখে পানশালা, রেস্তরাঁর পাশাপাশি শহরের একাধিক জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Smartphone internet drug addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy