ভগ্নদশা: উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ওঠার মুখে ভেঙে পড়ে রয়েছে হাইট বার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে শহরের সেতু এবং উড়ালপুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ‘ওষুধ’ হিসেবে ধরা হয়েছিল, মাত্রাতিরিক্ত ভারবাহী লরিকে সেখানে উঠতে না দেওয়া। এ জন্য পুরনো সেতু বা উড়ালপুলে হাইট বার বসানোয় জোর দেওয়া হয়। তাতে কি কাজ হচ্ছে? একাধিক হাইট বারের দ্রুত করুণ পরিণতি সেই প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে ছ’চাকা থেকে ১২ চাকা পর্যন্ত লরির বহন-ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা রয়েছে। যেমন, ছ’চাকার লরির আট থেকে দশ টনের বেশি ওজন তোলার কথা নয়। আট চাকার লরির ক্ষেত্রে সেটি ১৬ টন। ১০ এবং ১২ চাকার লরির ক্ষেত্রে এই হিসেব ২৫ এবং ২৭ টন। কিন্তু দেখা যায়, যে লরির আট থেকে দশ টন নেওয়ার কথা, সেটি ২৫-৩০ টন ওজন নিয়ে শহরে ঢুকেছে। যার ২৫ টন নেওয়ার কথা, সে এনেছে ৬০ টন। ২৭ টনের লরিতে চাপানো হয়েছে ৯০ টন বা তারও বেশি! এমন লরিই রাতের শহরে সেতু বা উড়ালপুলে ওঠার চেষ্টা করে হাইট বার ভাঙছে বলে অভিযোগ।
সেতু বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ৫.৩ মিটারের বেশি চওড়া, দু’লেনের উড়ালপুল বা সেতুর ভারবহন ক্ষমতা ১০০ টন (‘ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস’-এর বিধি অনুযায়ী)। তবে কেন্দ্র ২০১৮-র জুলাইয়ে আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি ভারবহনের ছাড় দিয়েছে লরিগুলিকে। যদিও সেই নিয়ম এ রাজ্যে চালু হয়নি। রাস্তা, সেতু বা উড়ালপুলের ভারবহন ক্ষমতা দেখে তবেই কেন্দ্রের নিয়ম চালু হবে বলে জানানো হয়েছিল। পরে দেখা গিয়েছে, সদ্য তৈরি উড়ালপুল বা সেতু পারলেও শহরের বহু সেতু বা উড়ালপুলেরই সেই ক্ষমতা নেই।
যদিও অভিযোগ, কেন্দ্রের ২৫ শতাংশ ভার বাড়ানোর নিয়মে ছাড়পত্র না দিয়ে রাজ্য একেবারে ১০-১৫ গুণ ভার বাড়ানোর অলিখিত ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে। যার জোরে তোলা দিলেই পার হওয়া যায় পর পর ট্র্যাফিক সিগন্যাল!
শহরের সেতু বা উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত সংস্থাগুলির অভিযোগ, রাতে লরির দাপট এমনই যে, ২৪ ঘণ্টায় তিন বার হাইট বার ভাঙার নজিরও রয়েছে! এ ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের হাইট বার। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) দ্রুত তা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের অধীনে থাকা একাধিক সেতু ও উড়ালপুলের হাইট বারের সংস্কার করবে সংস্থা। সাধারণত যে সেতু বা উড়ালপুল দিয়ে বাস যায়, সেখানে ৩.১৫ মিটার উচ্চতার হাইট বার বসানো হয়। যেখান দিয়ে বাস যাওয়ার অনুমতি থাকে না, সেখানে ২.৮৫ মিটারের হাইট বার বসানো হয়। সেতু ও উড়ালপুলের দেখভালে নিযুক্ত কেএমডিএ-র এক কর্তা বলছেন, “মাত্রাতিরিক্ত ভারী লরি ঢোকা বন্ধ করতে না পারলে কিছুই হবে না। সেই ব্যর্থতায় বহু সেতুর ভারবহন ক্ষমতা শূন্যের কাছাকাছি নেমে গিয়েছে।” ‘ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সজল ঘোষ বললেন, “এক ধরনের মাফিয়া মাত্রাতিরিক্ত ভারবাহী লরি শহরে ঢোকাচ্ছে। পুলিশের আরও কড়া হওয়া উচিত।”
ডিসি (ট্র্যাফিক) অরিজিৎ সিংহের দাবি, “রাতে নিয়মিত নজরদারি চলে। সহজ পথ নিতে গিয়ে সেতু বা উড়ালপুলে ভারী লরি ওঠার চেষ্টা করলে নজরদারি বাহিনীই কড়া ব্যবস্থা নেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy