একা গরমে রক্ষা নেই, সঙ্গে রোগ দোসর!
এমনিতেই দাবদাহের দাপটে প্রাণান্ত শহরের। সঙ্গে জুটেছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। যার জেরে থাবা বসাচ্ছে রোগ। এবং নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ।
এক দিন তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে ৪০ ডিগ্রির উপরে। আবার ঝপ করে নেমে যাচ্ছে ৩৬-৩৭ ডিগ্রিতে।
কখনও বইছে লু। পুরো নাক-মুখ ঢেকে বেরোতে হচ্ছে বাইরে। কখনও আবার ঢুকে পড়ছে জলীয় বাষ্প। আর্দ্রতায় মানুষ ঘেমেনেয়ে জল।
তাপমাত্রার এই পরিবর্তন নিতে পারছে না শরীর। সর্দি-কাশি, গলায় ব্যথা, পেট খারাপ। হাওয়াবাহিত এবং জলবাহিত সংক্রমণে নাজেহাল মানুষ। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তনে অতি সক্রিয় হচ্ছে জীবাণুরা। আবহাওয়া স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
শহরের চিকিৎসকেরা পাঁচটি জীবাণুবাহিত রোগকে চিহ্নিত করেছেন — চিকেন পক্স, হাম, জন্ডিস, মাম্পস, টাইফয়েড। সবেরই নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। এর পাশাপাশিই শহরে এমন এক ধরনের জ্বর হচ্ছে, যেখানে হঠাৎ করে তাপমাত্রা অনেকটা উঠে যাচ্ছে। সঙ্গে মাথা ও কপালে ব্যথা। বিছানা ছেড়ে ওঠা যাচ্ছে না। রক্ত পরীক্ষায় কোনও রোগও ধরা পড়ছে না। শহরের এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এমন কিছু ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া এখন পরিমণ্ডলে রয়েছে, যাদের চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি এখনও অজানা। তাই রোগ ধরা পড়ছে না। প্যারাসিটামল দিয়েই ওই অজানা শত্রুর চিকিৎসা করছি। অনেক ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি জ্বর সেরে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সারতে দেরি হচ্ছে। তবে এক বার প্যারাসিটামল পড়লে জটিলতা আর বাড়ছে না।’’
এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নাক-মুখ ঢেকে রাস্তায় বেরোলে সংক্রমণ অনেকটাই এড়ানো যায়। কিন্তু আর্দ্রতা বেশি থাকাকালীন মানুষকে নাক-মুখ চাপা দিতে বলব কী করে! একেই শহরের রাস্তায় দূষিত হাওয়া নাক-মুখ দিয়ে শরীরে ঢোকে। এখন তার দোসর হয়েছে জীবাণুরা।’’
যে ভাবে শহরে মাঝেমধ্যেই লু বইছে, তাতে ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘কলকাতার বাসিন্দাদের ত্বক শুকনো গরম হাওয়া সহ্য করতে পারে না। তাই বেশি রোদে ঘোরাঘুরি করলে ত্বকে লাল চাকা চাকা দাগ হয়ে যায়।’’ যাঁরা রোদে বেরোন, তাঁদের ফুলশার্ট পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। মোটরবাইক বা স্কুটার চালালে পুরো হাত ঢেকে রাখা বাঞ্ছনীয়। ত্বকে লাল লাল ফোস্কার মতো দাগ হলে অনেকে যে কোনও ক্রিম মাখেন। কিন্তু ঠিক ক্রিম না বাছলে তা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন ওই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকের ত্বকের ধরন ভিন্ন। গরমে ত্বকে যে লাল চাকা দাগ হয় সেগুলির শারীরবৃত্তীয় কারণও এক নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্রিম লাগালে হিতে বিপরীত হতে পারে।’’
প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের সুপারিশও করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে রোদে বেরোলে নুন-চিনির জল, ডাবের জল সঙ্গে রাখা ভাল। ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে শুধু জলই নয়, প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও ক্লোরাইডও বেরিয়ে যায়। ডিহাইড্রেশনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই অবস্থায় ডাবের জল এবং নুন-চিনির জল শরীরে গুরুত্বপূর্ণ মৌল এবং জলের ভারসাম্য রক্ষা করে।’’ তাঁরা জানান, মশলাছাড়া পাতলা ঝোল, পাতলা ডালের মতো হাল্কা খাবার গরমের এই সময়টায় পেট অনেকটা ঠান্ডা রাখে। মশলাদার খাবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সহজে হজম হতে চায় না।
গরমের সময়ে শরীরে জলের ভারসাম্য রক্ষা করতে অতিরিক্ত জল-যুক্ত সব্জি খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, লাউ, কুমড়ো, চালকুমড়ো, পেঁপের মধ্যে জলের পরিমাণ বেশি। তাই সেগুলি এক দিকে যেমন শরীরে জলের জোগান দেয়, তেমনই খাদ্যনালীকে ঠান্ডা রাখে। শশা, ফুটি, তরমুজের মতো অতিরিক্ত জলযুক্ত ফল খেলেও শরীরে জলের ভারসাম্য স্বাভাবিক থাকে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, রোগ-জীবাণুদের ঠেকাতে যেহেতু তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই, তাই খাদ্যাভাস বদলে এই গরমেও মানুষ নিজেদের ঠিক রাখতে পারেন। তা ছাড়া, হাল্কা রঙের সুতির পোশাক পরলে হাওয়া চলাচলে সুবিধা হয়। তাই পোশাকের দিকেও নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy