ছবি সংগৃহীত
সপ্তাহ তিনেকের ব্যবধানে দুই ডাক্তারি পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ঘটনা বার বার ঘটছে? বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও। এ বার তাই মেডিক্যাল পড়ুয়াদের মনের খোঁজ রাখতে আরও জোরদার ব্যবস্থা নিতে চায় রাজ্যের স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।
গত সোমবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএসের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া প্রদীপ্তা দাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আর তার পরেই পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখার বিষয়ে মঙ্গলবার রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাও।
উপাচার্য সুহৃতা পাল বলেন, “ন্যাশনালের ঘটনাটি শোনার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, তা হলে কি আমরা হেরে যাচ্ছি? সন্তানসম পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি যাতে কোনও ভাবে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি। তার পরেও এমনঘটনা খুবই দুঃখজনক।” স্বাস্থ্য মহলের পর্যবেক্ষণ, ডাক্তারি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনা কিংবা অন্য কোনও কারণে প্রায়ই মানসিক অবসাদ আর হতাশা লক্ষ করা যায়। তা থেকে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদাহরণও বহু রয়েছে। এই প্রবণতাকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করে স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া শুরু হয়। যাতে পড়ুয়াদের মানসিক কোনও সমস্যা হলে তাঁরা সহজেই যোগাযোগ করে কথা বলতে পারেন। পাশাপাশি, মানসিক রোগের চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি ভিডিয়ো আপলোড করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিউব চ্যানেলে। সুহৃতা বলেন, “নতুন প্রজন্মের কাছে সহজে পৌঁছনোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করি। সেই সঙ্গে গুগল ফর্মের মাধ্যমে একটি সমীক্ষাও করা হয়।”
সূত্রের খবর, ডাক্তারি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ছ’হাজার পড়ুয়া ওই ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছিলেন। সেগুলি খতিয়ে দেখেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, প্রতি দশ জনের মধ্যে এক জন পড়ুয়ার মানসিক অবসাদ এবং হতাশা রয়েছে। যাঁদের একটি বড় অংশ আবার চূড়ান্ত হতাশায় ভুগছেন ও আত্মহত্যার প্রবণতাও রয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি পাঠিয়ে তা জানানো হয়। তখন থেকেই পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে তাঁদের নিয়ে ‘গেট কিপার’ প্রশিক্ষণ চালু করা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কেউ যখন মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হন, তখন তাঁর কিছু লক্ষণ দেখলে তা বোঝা যায়। আবার সেই মানুষটি হতাশার চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছে চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকলে তা-ও কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে। যে যে লক্ষণ নজরে এলে ব্যবস্থা নিতে হয়, সেই বিষয়ের প্রশিক্ষণকেই বলা হয় ‘গেট কিপার ট্রেনিং’। রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও অন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওই প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এক মাসের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনাটি ভাবাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও।
সূত্রের খবর, প্রদীপ্তার ঘটনার সপ্তাহ তিনেক আগে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তারি পড়ুয়া তরুণী বাড়িতে গিয়ে আত্মঘাতী হন। ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’ (আইওপি)-র শিক্ষক-চিকিৎসক সুজিত সরখেলের কথায়, “মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে হতাশা রোগের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সেখানে পেশার কোনও বেড়াজাল থাকে না। মানসিক অস্থিরতাকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা ক্ষণিকের জন্য চলে গেলেই এক জন মানুষ জীবনকে শেষ করার মতো চরম সিদ্ধান্ত নেন। তবে সেটির কিছু লক্ষণ সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকলে অন্যের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিডের সময়ে যে হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে মানসিক সমস্যা সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া যেত, সেগুলিকে এখন সাধারণের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেই নম্বর স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়ার জন্য এ দিনের বৈঠকে অধ্যক্ষদের বলা হয়েছে। পাশাপাশি, কলেজের বিভিন্ন জায়গায় সেই নম্বর লেখা বোর্ড ঝোলাতেও বলা হয়েছে। গেট কিপার প্রশিক্ষণ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সুহৃতা বলেন, “শুধু স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই এই প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং হেল্পলাইন নম্বরটি তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে প্রচার করতে হবে। এর জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরে প্রস্তাব পাঠাতে স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy