ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা পেরিয়ে দেশের মাটিতে ঢুকে পড়েছে করোনাভাইরাসের নতুন অবতার। সেই নতুন স্ট্রেন ওমিক্রনের প্রভাবে যদি শহরে ফের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তা হলে সেই চিকিৎসার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে বলেই জানাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কোভিড চিকিৎসার জন্য যত শয্যা নির্দিষ্ট ছিল, তার সংখ্যা কিছুটা কমানো হলেও প্রয়োজনে তা ফের নিয়ে নেওয়া হবে বলেও নির্দেশ জারি হয়েছে। তবে বেলেঘাটা আইডি এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে একই রকম ভাবে করোনা চিকিৎসার পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।
করোনায় দৈনিক সংক্রমিতের হার কমার পাশাপাশি সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় হাসপাতালে তেমন কেউ ভর্তি হচ্ছেন না। ফলে, শহরের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই কম-বেশি শয্যা ফাঁকা থাকছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অতিমারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি হাসপাতালের শয্যাও নিতে হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ খানিকটা কমতেই বেসরকারি হাসপাতালের অধিগৃহীত শয্যা ছেড়ে দেয় রাজ্য সরকার। যাতে ওই সমস্ত শয্যা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলি। একই রকম ভাবে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকীলান ও তার পরবর্তী সময়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখন রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় সেখানেও ধীরে ধীরে অন্য রোগের চিকিৎসা শুরু করা হচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করে সব জায়গাতেই শয্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই জায়গাগুলি অন্য রোগের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সব কিছুই এমন ভাবে রাখা থাকছে, যে মুহূর্তে প্রয়োজন হবে সেগুলি আবার করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য পরিবর্তন করা যাবে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও যদি বড় কোনও ঝড় আসে, আপাতত সেটা সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে।’’
অজয়বাবু আরও বলেন, “এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, ওমিক্রনের সংক্রমণ বেশি হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন কম হয়। সেটাও স্বস্তির একটা কারণ হতে পারে। তবে আরও কিছু দিন না গেলে এই ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত হবে না। এটুকু বলা যায়, প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে দেওয়া নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো আছে, প্রয়োজনে তিন দিনের মধ্যে ফের শয্যা নিয়ে নেওয়া হতে পারে। সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে একটি ওয়ার্ডকে নির্দিষ্ট ভাবে কোভিডের চিকিৎসার জন্য রাখতে বলা হয়েছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এন আর এস, আর জি কর, বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙুর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ-সহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে সরকারি স্তরে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। এ ছাড়াও কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের কিছু শয্যা নিয়েছিল সরকার। জলাতঙ্ক, ডিপথেরিয়া, হাম, জলবসন্ত, পশুর কামড়ের চিকিৎসার জন্য ১১০টি শয্যা ছেড়ে রেখে বাকি প্রায় ৩০০টি শয্যা করোনা চিকিৎসার জন্য রয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সেখানকার উপাধ্যক্ষ চিকিৎসক আশিস মান্না বলেন, “করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে তার পরিকাঠামো আমাদের তৈরি আছে। এর পরে যেমন সরকারি নির্দেশ আসবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
এম আর বাঙুর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য ৭১৩টি শয্যাই রাখা রয়েছে। একই রকম ভাবে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “এখন একটি মাত্র ওয়ার্ড করোনা চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু বিগত দিনে যেমন ভাবে প্রস্তুত ছিলাম, এ বারও তেমন আছি। যদি বড় ঢেউ আসে, তৎক্ষণাৎ ওয়ার্ড বাড়াতে সমস্যা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy