অস্বাস্থ্যকর ঘরে রোগীদের বন্দি করে রাখা, খারাপ খাবার খেতে দেওয়া— এমন নানা অভিযোগ উঠল পাভলভ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেই তথ্য উঠে এল খোদ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের রিপোর্টেই। এ নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হল হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদকে।
চলতি বছরের এপ্রিল এবং মে মাসে পাভলভ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য ভবনের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। তাঁদের চোখে ধরা পড়ে হাসপাতালের করুণ ছবি। পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে উঠে এসেছে, হাসপাতালের অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে দু’টি মাত্র ঘরে ১৩ জন রোগীকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই ঘরটির অবস্থাও বিপজ্জনক। হাসপাতালে খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পর্যবেক্ষকেরা।
স্বাস্থ্য কর্তাদের নজরে উঠে এসেছে, মানসিক অসুস্থদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ‘ডায়েট কমিটি’ নেই। অপরিষ্কার পাত্রে রোগীদের খাবার পরিবেশন করা হয়। রোগীদের দেখার জন্য যে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না। এমনই সব অভিযোগে হাসপাতালের সুপারকে শোকজ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কী কারণে সরকারি মানসিক হাসপাতালের এমন খারাপ ছবি।
এ প্রসঙ্গে মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘হাসপাতালের বাইরের সৌন্দর্যের তুলনায় ভিতরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নজর দিলে এই অবস্থা হত না। রোগীদের ওই ধরনের বদ্ধ ঘরে রাখলে তাঁরা তো কোনও দিন সুস্থ হবেন না। কিন্তু আমার প্রশ্ন কেন ওই ১৩ জনকে এই অবস্থায় রাখা হয়েছে? এ তো কুঠুরিতে রাখার শামিল। ২০১৫ সালেই এই ধরনের ‘কাল কুঠুরি’ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেরল হাই কোর্টের এ বিষয়ে নির্দেশও রয়েছে যে, কোনও মানসিক রোগীকে ‘নির্জন কালকুঠুরি’তে রাখা যাবে না।” রত্নাবলী প্রশ্ন তুলেছেন রোগী কল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়েও।
অন্য দিকে, রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে স্বর্ণকমল সাহা জানান, ওই হাসপাতালে শয্যার থেকে বেশি রোগী রয়েছেন। রোগীকে হাসপাতালে রেখে যায় পরিবার। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে নিতে কেউ আসেন না। তাতেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।’’ তবে তাঁর দাবি, পাভলভে খারাপ খাবার দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা মানতে পারছেন না। কারণ, ডায়েট চার্ট অনুযায়ী নিয়মিত মাছ-মাংস দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘‘রোগীদের খাদ্যতালিকা নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা বলে আমার মনে হয় না। আমাদের মিটিংয়ে আগে এই অভিযোগ শুনিনি।”
রত্নাবলীর মতে, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা যে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, পরিষেবার উন্নতিতে তাঁদের সদিচ্ছা রয়েছে। কিন্তু বাকিদেরও নিজেদের ভূমিকা পালন করা উচিত।’’
এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, স্বাস্থ্য ভবনের ডিরেক্টরের পদের দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছে। এ নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করবে সংশ্লিষ্ট দফতর।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য পাভলভ হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অবশ্য দাবি করেন, এই মর্মে কোনও চিঠি পাননি।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy