ফাইল ছবি
পশ্চিমবঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে আঠারোটি আসন জিতে তৃণমূল নেতৃত্বকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় পর্বের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে দলের সমীক্ষা, এখনই দক্ষ হাতে দলের হাল না ধরলে জেতা আসন ধরে রাখা তো দূর, সব মিলিয়ে দু’টির বেশি আসন জেতা সম্ভব হবে না বিজেপির পক্ষে। ওই দু’টি আসনের একটি হল দার্জিলিং এবং অন্যটি বনগাঁ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল না করার পর থেকেই ভাঙন শুরু হয় বিজেপিতে। বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে তৃণমূল থেকে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেন। ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই সেই নেতাদের সিংহ ভাগই একে একে বিজেপি ছেড়ে ফের শাসক শিবিরে ফিরে যেতে শুরু করেন। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণ দেখিয়ে বসে যান বিজেপির বহু কর্মী। সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের কারণে দলে শুরু হয় গোষ্ঠী কোন্দল। যে কোন্দল এখনও জারি রয়েছে বিজেপির অন্দরে। এ দিকে লোকসভা নির্বাচন হতে আর দু’বছরও বাকি নেই। এই আবহে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা চালায় বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ এলাকায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। এমনকি যে উত্তরবঙ্গকে বিজেপি নেতারা তাঁদের গড় বলে ভাবতে শুরু করেছিলেন, সেখানেও পদ্ম-শিবির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ভোটাররা।
গত লোকসভায় যে আঠারোটি আসনে বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে ইতিমধ্যেই আসানসোল আসনটি তৃণমূল উপনির্বাচনে জিতে নিয়েছে। ব্যারাকপুর আসনের সাংসদ অর্জুন সিংহ সরকারি ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি এখনও সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেননি ঠিকই, কিন্তু সমীক্ষা বলছে, ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হলে সে ক্ষেত্রে বিজেপির জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। বাকি রইল যে ১৬টি আসন, সেগুলিতেও দলের জয় ধরে রাখা বেশ মুশকিল। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আজকের দিনে দাঁড়িয়ে লোকসভা ভোট হলে দলের জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’’ ব্যতিক্রম অবশ্য দার্জিলিং আসনটি। সেখানে গোর্খাদের সমর্থন পক্ষে থাকায় ওই আসনে ফের বিজেপির পক্ষে জয়লাভ সম্ভব। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গে একমাত্র বনগাঁ আসনটিতে দল জিততে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই এলাকায় মতুয়াদের সমর্থনের কারণে বিজেপি প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নেতারা বলছেন, যে ভাবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়ন নিয়ে মোদী সরকার গড়িমসি করে চলেছে, তাতে ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজের একটি বড় অংশ। লোকসভা ভোটের আগে ওই আইন রূপায়িত না হলে ওই আসনটিও ধরে রাখা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা।
রাজ্য বিজেপির পরিস্থিতি যে আশাব্যাঞ্জক নয়, তা মেনে নিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই দলের পক্ষ থেকে রাজ্য নেতৃত্বকে অবিলম্বে অন্তর্কলহ বন্ধ করে একজোট হয়ে কাজে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে পুরনো কর্মীদের দলের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নেও। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘সমস্যা হল, সবাই ক্ষমতা চান। দলের বিধায়কদের একাংশ নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে কী করে লোকসভার টিকিট পাওয়া যেতে পারে, তার জন্য তদ্বির করা শুরু করে দিয়েছেন। দলাদলির কারণে বহু যোগ্য লোক বসে গিয়েছেন। সেই কারণে যোগ্যদের ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যদি পদে না-ও থাকেন, তা হলেও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’ এ ছাড়া যে বিজেপি কর্মীরা হিংসার জেরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তাঁদের উপযুক্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে। গত কাল থেকে রাজ্যে শুরু হওয়া বুথ স্বশক্তিকরণ অভিযানে প্রথম দফায় ১৫ হাজার বুথকে শক্তিশালী করে তোলার উপরে জোর দিতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া রাজ্যে শাসক তৃণমূলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ছ’মাস ধারাবাহিক ভাবে পথে নেমে আন্দোলন করার পরামর্শও রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়েছেন জেপি নড্ডারা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy