Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

মনোরোগীদের সেবায় বিদেশি প্রশিক্ষণ, সাফল্য নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানালেও সমাজকর্মীদের অনেকেই ওই প্রকল্প বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

স্বাস্থ্য ভবন।

স্বাস্থ্য ভবন।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

ভাবনা সাধু। তবে গোড়ায় গলদও কম নেই।

সরকারি মানসিক হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নার্সদের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য ভবন। আজ, মঙ্গলবার ‘হেলথ এডুকেশন ইংল্যান্ড’এর সঙ্গে যৌথ ভাবে সেই উদ্দেশে শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানালেও সমাজকর্মীদের অনেকেই ওই প্রকল্প বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীদের অভিযোগ, সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলিতে রোগীদের প্রতি নার্সদের একাংশের ব্যবহার ‘অমানবিক’। তাঁদের অভিযোগ, রোগীদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করা হয় মানসিক হাসপাতালে। সমাজকর্মীরা মনে করেন, গোড়াতেই এই গলদ বদলানোর প্রয়োজন। এক সমাজকর্মীর প্রশ্ন, ‘‘ইংল্যান্ডের ‘ট্রেনিং মডিউলে’ সবই ‘ইউ’। এ রাজ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে কি মিটবে ‘তুই’ আর ‘আপনি’র তফাৎ। সেটা তো উপলব্ধির বিষয়।’’

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল ইংল্যান্ড গিয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে ‘হেলথ এডুকেশন ইংল্যান্ড’এর পদস্থ কর্তারা-সহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবারই কলকাতায় পৌঁছেছে। ‘ইনস্টিটিউট

অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার’এ সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলির যে সব নার্সের মনোরোগ নিয়ে পড়াশোনা রয়েছে, তাঁদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের পরিভাষায় ওই নার্সদের নাম হল, ‘মাস্টার ট্রেনার’। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সেরা পরে বাকি নার্সদের শেখাবেন।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানান, মানসিক রোগীদের উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের রূপরেখা তৈরি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড সফরে ‘ট্রেনিং মডিউলে’ কী থাকবে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘মানসিক রোগীর চিকিৎসা শুধু ওষুধ নির্ভর নয়। তাই কী ভাবে রোগীর যত্ন নিতে হবে তা উপলব্ধি করা জরুরি। রোগীরা অনেক সময়ে কথা শোনেন না। উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন নার্সদের ব্যবহার কেমন হবে? কী ভাবে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, এ সব প্রশিক্ষণ শিবিরে শেখানো হবে।’’

এখানেই সমাজকর্মীদের একাংশ টেনে আনছেন গোড়ায় গলদের কথা। তাঁদের অভিযোগ, রোগীদের ‘তুই’ করে ডাকা তো রয়েইছে। পাশাপাশি, তাঁদের দিয়ে নানা ধরনের কাজও করানো হয়। অন্য রোগীকে স্নান করানো, ওষুধ দেওয়া, ঘর পরিষ্কারও রয়েছে কাজের তালিকায়। কেউ তা করতে অস্বীকার করলে বলা হয়, তাঁদের খেতে না দেওয়ার ভয়ও দেখানো হয়।

সমাজকর্মীদের দাবি, হাসপাতালের ওয়ার্ডে স্কেল, লাঠিও থাকে। খাবার বা ওষুধ দেওয়ার সময়ে আবাসিকদের কেউ যাতে লাইন থেকে বেরিয়ে না যান, সে জন্য স্কেল-লাঠি দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগও করেছেন সমাজকর্মীরা। এমন পরিবেশও বদলাতে হবে বলেই মনে করেন তাঁরা।

এক সমাজকর্মীর কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণ অনেক পরের বিষয়। সবার আগে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। নার্সদের একাংশের ব্যবহারে মনে হয় পরিষেবা দিয়ে তাঁরা দয়া করছেন।’’ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন সমাজকর্মী পবন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ হাসপাতালে কি রোগীদের তুই করে ডাকা হয়? আসলে মানসিক রোগী মানেই তো বাতিল! ওঁরা ন্যায্য কথা বললে পাগলামি বলে দেগে দেওয়া হয়।’’

সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘যে কোনও প্রশিক্ষণ স্বাগত। তবে তার রূপরেখা স্থানীয় সমস্যাগুলিকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত। সব চেয়ে বড় কথা যাঁরা প্রশিক্ষণ নেবেন তাঁদের আগ্রহী হতে হবে।’’

সমাজকর্মীদের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘নার্সদের ব্যবহারে যাতে পরিবর্তন আসে, তাঁরা আরও সহানুভূতির সঙ্গে যাতে পরিষেবা দেন, তাই জন্যই তো প্রশিক্ষণ।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানসিক রোগীরা যাতে দ্রুত সুস্থ হন সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি একটা ধাপ। যার মাধ্যমে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE